images

জাতীয়

‘শান্তিতে নির্বাচন হলেই আমরা বাঁচি’

নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৬ পিএম

জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেশের শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে স্বস্তি, উদ্বেগ ও প্রত্যাশা নিয়ে মিশ্র দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনের আয়ের ওপর নির্ভরশীল এই মানুষদের কাছে নির্বাচন মানে রাস্তার পরিবেশ, বাজারের মূল্য, কাজের ধারাবাহিকতা এবং নিত্যদিনের জীবিকার নিরাপত্তা। তারা বলছেন, শান্তিতে নির্বাচন হলে রিকশা চলবে, দোকান খোলা থাকবে, কাজ বন্ধ হবে না, বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এখন শান্তিতে নির্বাচন হলেই আমরা বাঁচি।’
 
ধানমন্ডির মোড়ে রিকশা চালাচ্ছিলেন আবদুল কাদের। তফসিল ঘোষণার খবর শোনার পর তার প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল, নির্বাচনের সময় রাস্তা বন্ধ থাকলে আমাদের ভাড়া কমে যায়, আবার কিছু এলাকায় কাজ বেড়েও যায়। কিন্তু আসল কথা, ঝামেলা ছাড়া নির্বাচন হলে আমাদের জীবন সবচেয়ে স্বাভাবিক থাকে। প্রতি নির্বাচন ঘিরেই রিকশাচালকদের মনে এক ধরনের চাপ কাজ করে—কখন কোন এলাকা বন্ধ হয়ে যায়, কোন রুটে যাওয়া নিরাপদ, আর কোথায় পুলিশি বাধায় যাত্রী পাওয়া কঠিন।

কাজীপাড়া এলাকায় ফুটপাতে সবজি বিক্রি করা রহিমা বেগমের ভাবনা একেবারেই অন্যরকম। তিনি জানান, নির্বাচন আসলেই সবকিছুর দাম বাড়ে। এখন বাজারের দাম কমলে আমরা বুঝব ভোট আমাদের জন্য ভালো হয়েছে। তিনি বলেন, যেকোনো রাজনৈতিক সময়ে পাইকারি বাজারে অযৌক্তিক দামবৃদ্ধি শুরু হয় আগে থেকেই। তফসিল ঘোষণার ফলে এখন সে আশঙ্কা আরও বেড়েছে। নির্বাচনের কে আসলো বা গেলো তা নয়, কেজিপ্রতি টমেটোর দাম কমলো কি না তাই আমাদের কাছে আসল কথা।

রাজধানীর একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের চিন্তা একটাই—বেতন সময়মতো পাওয়া। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক সময় কারখানা বন্ধ থাকে, তখন আমাদেরই ক্ষতি হয়। ভোটের দিন ঘনিয়ে এলে যেকোনো অসস্থিতির প্রভাব সবচেয়ে আগে পড়ে শ্রমিকের বেতনে, ওভারটাইমে, উপস্থিতির ওপর।

শাহবাগে চায়ের দোকান চালান মোজাম্মেল হোসেন। তার দোকানই যেন এলাকার ক্ষুদ্র এক রাজনৈতিক আড্ডা। রাজনৈতিক আলোচনা থেকে শুরু করে প্রার্থীদের মূল্যায়ন—সবই তার দোকানে জমে ওঠে, তবে সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকলে দিনের সেরা সময়টুকু তাকে বন্ধ রাখতে হয়।  তিনি বললেন, ভোটের সময় ব্যবসা বাড়েও, আবার ভয়ও থাকে। মিছিল বের হলে দোকান বন্ধ রাখতে হয়। শান্তিতে সব হলে আমাদের ব্যবসা সবচেয়ে ভালো চলে।

নির্মাণশ্রমিক বাবুলের দুশ্চিন্তা আরও কঠিন। ভোটের সময় বড় বড় নির্মাণকাজ থেমে যায়—এটাই তার অভিজ্ঞতা। তিনি বলেন, কাজ বন্ধ হলে আমাদের সংসারই চলে না। মালিকরা অপেক্ষা করে, পরিস্থিতি দেখে। কিন্তু আমরা তো অপেক্ষা করে থাকতে পারি না, আমাদের প্রতিদিন রোজগার লাগবে। আশা করা যায় এবার তফসিল ঘোষণার পর হয়তো পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে, আর নির্বাচনী অস্থিরতা তাদের কাজকে বন্ধ করবে না।

ফার্মগেটে ফুটপাতে ফল বিক্রি করেন সেলিম উদ্দিন। তিনি বললন, রাস্তা খোলা থাকলেই আমরা চালাতে পারি। নির্বাচন আসলে রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ বাড়ে, ব্যারিকেড বসে। তখন সারাদিনে দুইটা গ্রাহকও আসে না। তিনি বলেন, নির্বাচনের প্রধান প্রভাব পড়ে শহরের চলাচলের ওপর, আর সেটা সরাসরি আঘাত করে ফুটপাতের ছোট ব্যবসাগুলোকে। দেখা যাক এবার কি হয়।

গুলিস্তান বাজারের হকার নাসিরের শঙ্কা আবার ভিন্ন ধরনের। তিনি বলেন, নির্বাচন এলেই পুলিশ উচ্ছেদ বাড়ায়। রাস্তায় জায়গা রাখতে দেয় না। ভোটের আগে এলাকাকে সুন্দর দেখানোর নামে আমাদের দোকান তুলে দেয়। ভোটের আগের সামান্য আতঙ্কই হকারদের জীবনকে অসম্ভব অনিশ্চিত করে তোলে। প্রতিটি নির্বাচনী মৌসুমে তাদের প্রথম ভয়—দোকান টিকবে কি না।

এএইচ/এআর