images

জাতীয়

জলবায়ু প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে উন্নত দেশগুলো: উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৫৯ পিএম

জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি বারবার শিথিল করছে উন্নত দেশগুলো—এমন অভিযোগ তুলেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, বৈজ্ঞানিক সত্য অস্বীকার ও প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতা জলবায়ু অর্থায়নকে আরও জটিল ও অন্যায্য করে তুলেছে, যার প্রধান ভুক্তভোগী ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের জাতীয় জলবায়ু অর্থায়ন কৌশল প্রণয়ন’ শীর্ষক পরামর্শ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালায় সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী এবং জলবায়ু অর্থায়ন বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, জলবায়ু অর্থায়ন সংস্কারে স্থানীয় জনগণের চাহিদা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা এবং স্বচ্ছতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত তহবিল বিতরণ, সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কার্যকর সমন্বয় এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য সক্ষম তহবিল কাঠামো গড়ে তোলা জরুরি।

উপদেষ্টা বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি মূলত নতুন ও অতিরিক্ত সহায়তার ধারণার ওপর ভিত্তি করে গঠিত হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা শিথিল হয়েছে। বহু উন্নত দেশ এখনো জলবায়ু সংকটের বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা অস্বীকার করে, যা বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়ন প্রক্রিয়াকে জটিল ও অন্যায্য করে তুলেছে। কয়েকটি দেশ প্রতিশ্রুতি পালন করলেও অনেকেই জলবায়ু আলোচনাকে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

দেশীয় প্রেক্ষাপটে বাজেট বরাদ্দের বৈষম্যের প্রসঙ্গ টেনে রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রতিবছর পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সবচেয়ে কম বাজেট পায়, অথচ বড় অবকাঠামো প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। অভিযোজন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং স্থানীয় পর্যায়ের স্থিতিস্থাপকতার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ হয় না। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও কার্যকর জাতীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে না ওঠায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

তিনি আরও বলেন, শুধু অর্থ বরাদ্দ করলেই হবে না। সংস্থাগুলোর পরিকল্পনাগত দক্ষতা, পর্যাপ্ত জনবল এবং দ্রুত বাস্তবায়ন সক্ষমতা থাকতে হবে। সচেতনতামূলক সামগ্রী প্রকাশ করতেও দীর্ঘ সময় লাগে, যা কাঙ্ক্ষিত ফলকে বাধাগ্রস্ত করে। এ অবস্থায় প্রক্রিয়াকে সহজ করার পাশাপাশি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ন্যায্য বরাদ্দের বিষয়টি তুলে ধরে উপদেষ্টা জানান, নদীভাঙন, লবণাক্ততা এবং খরাপ্রবণ এলাকাগুলো থেকে শত শত আবেদন আসে, কিন্তু খুব অল্প সংখ্যক প্রকল্প সমর্থন দেওয়া সম্ভব হয়। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষায় বিনিয়োগ অর্থনৈতিকভাবে আরও বেশি ফলপ্রসূ, যা নতুন সড়ক নির্মাণের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অপ্রাসঙ্গিক খাতে—বিশেষ করে প্রতিরক্ষা ব্যয়কে জলবায়ু অর্থায়ন হিসেবে দেখানোর প্রবণতা দায়বদ্ধতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

পরে মানবাধিকার দিবস ২০২৫ উপলক্ষে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত ‘সবার জন্য ন্যায়বিচার ও অধিকার নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশের অঙ্গীকার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় রিজওয়ানা হাসান বলেন, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি জানান, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে নবগঠিত পুলিশ কমিশন ব্যবস্থা নেবে—যা অতীতে ছিল না। সঠিক নেতৃত্ব পেলে এটি বড় একটি অর্জন হয়ে উঠবে।

অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, ইউএনডিপির বাংলাদেশ প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, এবং আইন ও সংসদ বিভাগ সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।


এএইচ/এআর