জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৯ পিএম
অনলাইনে বিনিয়োগ করলে রাতারাতি বড়লোক হওয়া যাবে—এমন প্রলোভন দেখিয়ে শত শত মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। অবশেষে চক্রটির এক সদস্য নাদিম (৩২)–কে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। রাজধানী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার দক্ষিণকান্দি গ্রামে। বাবার নাম কায়েস মিয়া।
সিআইডি বলছে, টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইন ইনভেস্টমেন্টের প্রলোভন দেখিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য তিনি।
যেভাবে প্রতারণা করত চক্রটি:
সিআইডি জানায়, একটি বেসরকারি ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসারের হোয়াটসঅ্যাপে অজ্ঞাত নম্বর থেকে একটি বার্তা আসে। বার্তা প্রেরণকারী নিজেকে নাজনীন পরিচয় দিয়ে দাবি করেন, তিনি ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম আপওয়ার্কের প্রতিনিধি। বাসায় বসে পার্ট-টাইম কাজের মাধ্যমে আয়ের প্রলোভন দেখান। সরল বিশ্বাসে ভুক্তভোগী তা মেনে নেন ও রাজি হন।
প্রথমে ইউটিউব সাবস্ক্রিপশনসহ কয়েকটি ছোট অনলাইন টাস্ক করিয়ে ভুক্তভোগীর বিকাশ নম্বরে ১৫০ টাকা ও পরবর্তীতে ২ হাজার ১০০ টাকা পাঠিয়ে আস্থা তৈরি করা হয়। এরপর তাকে একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত করা হয়, যেখানে ভুয়া সদস্যরা নিয়মিত বড় অঙ্কের আয়ের অভিনয় করেন। এতে ভুক্তভোগীর বিশ্বাস আরও বাড়ে।
পরবর্তী ধাপে বড় টাস্কের কথা বলে প্রতারকরা ক্রিপটো অ্যাকাউন্ট খুলতে ২ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে বলেন। এরপর জানানো হয়, আরও ৩ হাজার টাকা দিলে তার ব্যালেন্স ৭ হাজার টাকা হবে, যা পরে উত্তোলন করা যাবে। ভুক্তভোগী অর্থ পাঠানোর পর তাকে ভিআইপি টাস্ক গ্রুপে যুক্ত করা হয়। সেখানে দেখানো হয় যে সবার ক্রিপটো কারেন্সিতে ৭ হাজার টাকা জমা হয়েছে।
অর্থ তুলতে গেলে যা ঘটত:
সিআইডি বলছে, অর্থ উত্তোলনের চেষ্টা করলে ভুক্তভোগীকে জানানো হতো ক্যাশ আউটের জন্য আরও ১৫ হাজার ৮০০ টাকা দিতে হবে। সরল বিশ্বাসে তিনি অর্থ পাঠাতেন। এরপর ব্যালেন্সে অসঙ্গতি দেখা দিলে তিনি জানতে চাইলে নতুন টাস্ক ও নতুন শর্ত আরোপ করা হতো। এভাবে একের পর এক টাস্ক, বড় লাভের লোভ এবং ভুয়া হিসাব দেখিয়ে প্রতারক চক্রটি বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে মোট ১ কোটি ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৩০৫ টাকা হাতিয়ে নেয়।
ঘটনার পর গত ২১ মে ভুক্তভোগী লালবাগ থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে চক্রের সদস্য নাদিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন, এনআইডিসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করা হয়।
সিআইডি জানিয়েছে, চক্রের অন্যান্য অজ্ঞাত সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এমআইকে/এআর