images

জাতীয়

রাজধানীর কাছে ধারাবাহিক কম্পনে বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:২৫ পিএম

দেশে ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে ২১ নভেম্বর সকালে। রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার ওই কম্পনের কেন্দ্র ছিল নরসিংদীর মাধবদী, যা ঢাকা থেকে মাত্র ২৫–৪০ কিলোমিটার দূরে। রাজধানীর বাসিন্দারা তীব্র ঝাঁকুনি অনুভব করেন এবং ভবনসমূহ কেঁপে ওঠায় ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।

এরপর দুই সপ্তাহে ঢাকায় অন্তত সাত দফা কম্পন অনুভূত হয়েছে, যার মধ্যে ছয়টির উৎস নরসিংদী অঞ্চল। আবহাওয়া অধিদফতরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবির জানান, একই স্থানে ধারাবাহিক কম্পনগুলো বড় ভূমিকম্পের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া বা আফটারশক হিসেবে দেখা যাচ্ছে। বড় কম্পনের পর ছোট মাত্রার যে ধারাবাহিক কম্পনগুলো হয়েছে, সেগুলোকে গবেষণা অনুযায়ী আফটারশক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

২১ নভেম্বর সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে হওয়া ৫.৭ মাত্রার কম্পনের পর ২২ নভেম্বর সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে নরসিংদীর পলাশে ৩.৩ মাত্রার মৃদু কম্পন রেকর্ড হয়। সেদিন সন্ধ্যায় আরও দুটি কম্পন অনুভূত হয়, যার একটি ছিল ৪.৩ মাত্রা এবং আরেকটি নরসিংদী অঞ্চলেই ঘটেছিল। ২১ ও ২২ নভেম্বর প্রায় ৩১ ঘণ্টার মধ্যে চার দফা কম্পন রেকর্ড করা হয়। এরপর ২৭ নভেম্বর বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে নরসিংদীর ঘোড়াশালে ৩.৬ মাত্রার আরেকটি কম্পন হয়, যা বিশেষজ্ঞদের হিসেবে মোট ছয় দফা কম্পনের ধারাবাহিকতা তৈরি করে।

৪ ডিসেম্বর ভোর ৬টা ১৪ মিনিটে নরসিংদীর শিবপুর অঞ্চল থেকে আবারও ৪.১ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ছোট ও মাঝারি মাত্রার ধারাবাহিক কম্পন বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনার ইঙ্গিত বহন করতে পারে। তাদের দীর্ঘদিনের গবেষণা বলছে, বাংলাদেশ একটি সক্রিয় প্লেট সীমান্তে অবস্থিত এবং বড় ধরনের কম্পন ঘটার ঝুঁকি সবসময়ই বিদ্যমান।

গবেষকদের মতে, বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্পের দুটি প্রধান উৎস রয়েছে। প্রথমটি ‘ডাউকি ফল্ট’, যা ভারতের শিলং মালভূমির পাদদেশ থেকে ময়মনসিংহ–জামালগঞ্জ–সিলেট অঞ্চলে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত। দ্বিতীয় উৎসটি সিলেট থেকে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত, যা সুমাত্রা পর্যন্ত যুক্ত— এটিকে বিশেষ ভয়ঙ্কর এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

একই সঙ্গে গবেষণা অনুযায়ী, ঢাকায় ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছে অন্তত ১৫টি এলাকা— সবুজবাগ, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, কল্যাণপুর, গাবতলী, উত্তরা, সূত্রাপুর, শ্যামপুর, মানিকদী, মোহাম্মদপুর, পল্লবী, খিলগাঁও ও বাড্ডা।

ঢাকার ভৌত কাঠামো নিয়ে করা ৩২টি এলাকার জরিপে দেখা যায়, দক্ষিণাঞ্চলে ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি। ঘনবসতি, দুর্বল ভবন কাঠামো এবং উদ্ধারকাজের সীমাবদ্ধতা এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। উত্তরাঞ্চলেও কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, কল্যাণপুর, মানিকদী ও গাবতলীসহ বেশ কিছু অঞ্চল উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

এম/এফএ