সাখাওয়াত হোসাইন
২৫ নভেম্বর ২০২৫, ০২:১০ পিএম
পাঁচ দিন আগে ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ঢাকাসহ দেশের অনেক জেলা। ৫ দশমিক ৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পে দুলতে থাকা ভবন। এতে আতঙ্কিত হয়ে মানুষ ভয়ে ঘর থেকে বেরোতে বাধ্য হন। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে অনেকেই আহত হন। কেউ সিঁড়িতে পড়ে, কেউবা ভবনের উঁচু থেকে লাফ দিয়ে, আবার কেউ কংক্রিটের আঘাত পেয়ে আহত হন। এখনো অনেকেই ভাঙা হাত-পা ও আঘাতের যন্ত্রণায় হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন। তাদের মন থেকে এখনো কাটছে না ভয়াল সেই মুহূর্তের কথা।
গাজীপুরের একটি গার্মেন্টসের কর্মী রিপন মিয়া। গত ২৩ নভেম্বর ভূমিকম্পের সময় কাজ করছিলেন তিনি। কিছু বুঝে না উঠতেই দেখতে পান ভবন দুলছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে হাত ভেঙে যায় তার। নারায়ণগঞ্জে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে রেফার করা হয় রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর)। সেখানে ঢাকা মেইলের প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় রিপন মিয়ার।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভূমিকম্পের সময় খুবই আতঙ্কিত ছিলাম। কী করব বুঝতে পারিনি। সবাইকে দেখে আমিও ফাঁকা জায়গায় দাঁড়াতে ভবন থেকে নামতে গিয়েছিলাম। পা পিছলে নিচতলার সিঁড়িতে পড়ে যাই। তাতে তাৎক্ষণিক আমার জ্ঞান ছিল না। পড়ার পর অনেক ব্যথা পেয়েছি। শরীরের কিছু কিছু জায়গায় ক্ষত রয়েছে।
রিপন মিয়া আরও বলেন, ‘এখন ওই মূহুর্তের কথা ভাবলে আঁতকে (ভয় পাই) উঠি। কী একটা সময় পার করেছি। এই বুঝি ভবন ভেঙে পড়বে এবং আমি নিচে চাপা পড়ে মারা যাব, এমন মনে হয়েছিল। প্রাণ ভয় সবারই আছে, আমারও ছিল। এই যাত্রায় রক্ষা পেয়েছি, যদিও হাত ভেঙে গেছে। অস্ত্রোপচার করতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে। সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে।’
শুধু রিপন মিয়াই নয়, তার মতো আরো ১৭ জন এখনো নিটোরে হাত-পা ভাঙা নিয়ে কাতরাচ্ছেন। এখনও তাদের মধ্যে কাটেনি ভূমিকম্পের আতঙ্ক। কারও হাত ভাঙা, কারও বা পায়ের হাড় সরে গেছে। আবার কেউ পেয়েছেন বুক কিংবা কোমর ব্যথা।
আহতদের ব্যাপারে জানতে চাইলে নিটোরের পরিচালক ডা. আবুল কেনান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ২৩ জন। ভূমিকম্পে আহত ১১৯ জনকে চিকিৎসা দিয়েছি আমরা। ভর্তি যারা ছিলেন, তারা গুরুতর আহত। আর বাকিদের চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
আবুল কেনান আরও বলেন, ‘বেশিরভাগের হাত এবং পা ভাঙা ছিল। এছাড়া কাঁধ নড়ে যাওয়াসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত রোগীও এসেছে।’
ভূমিকম্পের রোগীদের জন্য আলাদা কোনো বিশেষ ইউনিট নেই জানিয়ে নিটোরের এই পরিচালক বলেন, ‘তাদের জন্য আলাদা কোনো ইউনিট রাখা হয়নি। সব ক্ষত একই। সেই হিসেবে তাদেরকে গুরুত্ব সহকারে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং যারা ভর্তি আছেন তাদেরকেও সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, ‘আহত ব্যক্তিদের অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে লাফিয়ে পড়েছেন। তাদের চিকিৎসায় জরুরি চিকিৎসক দল কাজ করছে। সরকার আহত ব্যক্তিদের সব ধরনের ওষুধ দেওয়ার চেষ্টা করছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।’
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার (২৩ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। পরদিন আরও তিনবার কাঁপে দেশ। তবে সেগুলোর মাত্রা আগের দিনের তুলনায় কম ছিল।
প্রথম দিনের ওই ভূমিকম্পে পুরান ঢাকার কসাইটুলীতে একটি পাঁচ তলা ভবনের ছাদের রেলিং ধসে পড়ে তিন পথচারী নিহত হন। এছাড়া নরসিংদীতে প্রাণ হারান পাঁচজন। সবমিলিয়ে তিন জেলায় মোট ১০ জন মারা যান। আহত হন সাড়ে চারশোর বেশি মানুষ। ঢাকা ছাড়াও তাদের দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৪ জন, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০, গাজীপুরের তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেলে ৯০, শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৫৫, গাজীপুরের টঙ্গীর শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ৮৫ জন, নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ৪৫, নরসিংদীর ১০০ শয্যার হাসপাতালে ১০ জন ও কুমিল্লার দুটি হাসপাতালে ৮০ জনকে চিকিৎসা দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ভূমিকম্পনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভবনে ফাটল ধরে, এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ভবনে থাকা মানুষ।
এসএইচ/এমআর