images

জাতীয়

ভোটে ইসির স্বকীয়তা ও নিরপক্ষতায় আস্থা রাখবে দলগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:২৩ পিএম

রাজনৈতিক দলগুলো তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের স্বকীয়তা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার ওপর আস্থা ব্যক্ত করেছে। তারা আশা করছে, কমিশন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে সমস্ত প্রকার প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা পদক্ষেপ সময়মতো গ্রহণ করবে।

একইসঙ্গে ভোটারদের সমান সুযোগ এবং নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করাও তাদের প্রাথমিক দাবি।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) ইসির ধারাবাহিক নির্বাচনি সংলাপের চতুর্থ দিনের প্রথম পর্বের সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো এই আশা ব্যক্ত করে। 

সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অন্য চার নির্বাচন কমিশনারসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ পর্বের সংলাপে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি-বিএমজেপি, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

প্রতি ভোটকেন্দ্রে অন্তত ৫ জন সেনা সদস্য

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতি ভোটকেন্দ্রে অন্তত ৫ জন সেনা সদস্যের মোতায়েন চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, গত এক মাসের মধ্যে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে একের পর এক হঠাৎ রদবদল হয়েছে ২০ দিনও হয়নি, একজন ডিসি বদলি হয়েছেন, আবার এক সপ্তাহের মধ্যে আরও অনেককে সরানো হয়েছে। এতে মনে হয়, যেন কোনো পরিকল্পনা বা উদ্দেশ্য থেকে এসব হচ্ছে। 

তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনিক রদবদল ইসির এখতিয়ার—এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিরপেক্ষতার জন্য সেরা পদ্ধতি হলো লটারির মাধ্যমে পদায়ন, এতে কোনো প্রশ্ন ওঠে না।

নির্বাচনকালীন নিরাপত্তায় সেনা মোতায়েনের বিষয়ে গোলাম পরওয়ার বলেন, প্রতি ভোটকেন্দ্রে অন্তত ৫ জন সেনা সদস্য থাকতে হবে। একজন সেনা সদস্য একটা ভোটকেন্দ্রে দিলে এটা খুব বেশি পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব পায় না।

ছোট ও নতুন দলগুলোর জন্য সমতা নিশ্চিত করার আহ্বান

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, দল যেন নিজের প্রতীকে জোট করলেও ভোটে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে চলে। ভোটের দিন ১৮ বছর বয়স পূর্ণ হওয়া নতুন ভোটারদেরও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তিনি।

তিনি বলেন, কেউ যদি নিজের শরীর আছে কিন্তু অন্যের জামা পরে যায়ৃএকটা সুযোগ এসেছে নিজ দল নিয়ে মানুষের কাছে যাওয়ার। প্রতিটির দলের জন্য একজন কর্মকর্তা নির্দিষ্ট করে দিলে আমরা সহজে যোগযোগ করতে পারব। আমাদের সিরিয়াস কনসার্ন হচ্ছে, ভোটের দিন যাদের বয়স ১৮ হবে, তাদের ক্ষেত্রে কী হবে? আমাদের দাবি তাদেরও ভোটার তালিকায় নিয়ে আসা। এটা করলে তাকে ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করলেন।’

পাটওয়ারী বলেন, গণভোট কী প্রক্রিয়ায় হবে, সেই সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা জানাবেন। এতে আমরা কাজ করতে পারব। আপনাদের প্রস্তুতি নিয়ে সন্দিহান আছি। আপনাদের আমরা সহযোগিতা করব। অন্যরাও সহযোগিতা করলেও আমরা একটা ভালো নির্বাচন পাবো।

এনসিপি নেতা বলেন, কমিশন যদি স্বকীয় সত্তা বজায় রাখে এবং কোনো দলের আজ্ঞাবহ না হয়, তাহলে ইসি যেভাবে নির্দেশনা দেবে আমরা মেনে চলার চেষ্টা করব। সময় খুবই স্বল্প, গণভোট নিয়ে সরকারের কাছে নির্দেশনা চাইতে পারেন।

তিনি বলেন, আমাদের নারীরা প্রতিদিন সাইবার বুলিয়ের শিকার হচ্ছে। এটা নিয়ে কাজ করতে হবে। তরুণ প্রজন্ম যেহেতু অংশ নেবে, ভোটকে উৎসবমুখর করতে বাহিনীগুলোকে অ্যাকটিভ করবেন। আরেকটা বিপ্লবের দিকে যেতে হলে আমাদের কারও জন্য তা সুখকর হবে না।

প্রচারণার ক্ষেত্রে ছোট ও নতুন দলগুলোর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে কয়েকটি বিধির বাস্তবসম্মত পরিবর্তনের দাবি জানান গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। 

তিনি বলেন, প্রতীক অবশ্যই স্পষ্টরূপে বড় আকারে ছাপতে হবে, বিশেষত নতুন দলগুলোর জন্য। জোট গঠন করে কোনো দল জোটগত প্রতীকে নির্বাচন করতে চাইলে, সেই সুযোগ রাখা দরকার। এছাড়া গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচনের জন্য আলাদা বুথ ও গণনা পদ্ধতি দরকার এবং কেন্দ্রে পুলিশ, আনসার ও ব্যাকআপে সেনা সদস্যের নির্দিষ্ট সংখ্যা জনসম্মুখে জানানো দরকার।

তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের পরিপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এ জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম মহাসচিব মোমিনুল আমিন বলেন, ‘যে ক্ষমতায় সবকিছু থাকবে সিইসির। তার ডিরেকশন, প্রজ্ঞায়, তার ক্ষমতায় একটা গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।’

বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি-বিএমজেপি’র সভাপতি সুকৃতি কুমার মণ্ডল বলেন, ‘ভোটের আগে ৭ দিন ও ভোটের পরে ১০ দিন সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’

বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর ইরান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে আমরা প্রশ্নের ঊর্ধ্বে একটা জায়গায় দেখতে চাই। সুন্দর র্বিাচন চাই, একটা ভোট উৎসব চাই।’

বিরাজমান অস্থির পরিবেশে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন ইনসানিয়াত বিপ্লব মহাসচিব শেখ রায়হান রহবার। সেক্ষেত্রে মোবাইল ডিজিটাল থাম্ব নামে একটি পদ্ধতি প্রবর্তনের সুপারিশ রাখেন তিনি।

সংলাপে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের বক্তব্য শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, নির্বাচনি আচরণ প্রয়োগের ক্ষেত্রে যদি আরও কোনো পরিপত্র জারি করে স্পষ্টকরণের প্রয়োজন হয়, তা করা হবে। আমি নিশ্চিত, কমিশন এগুলো নিয়ে আলোচনা করবে। কয়েকটি বিষয় আছে, যেগুলোর বিষয়ে সম্ভবত একটু ক্লারিফিকেশন প্রয়োজন।

এআই অপব্যবহার এবং সোশ্যাল মিডিয়ার হ্যারাসমেন্ট নিয়ে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা একটি সেল স্থাপন করছি। রাষ্ট্রীয় সক্ষমতাও ব্যবহার করা হবে। এটি একটি গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ। আমরা ভালো ইনফরমেশন দ্বারা খারাপ ইনফরমেশন ফাইট করব। ডিনাই, বেটার করা, আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ, সময়মতো সঠিক তথ্য তুলে ধরা—এগুলো সব কার্যক্রমের অংশ।

পেশির শক্তি মোকাবিলার বিষয়ে তিনি বলেন, অবৈধ অস্ত্র একটি সিরিয়াস চ্যালেঞ্জ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিচ্ছে। হারিয়ে যাওয়া অস্ত্রের ৮১ শতাংশ এবং মিশন থেকে হারিয়ে যাওয়া ৭৩ শতাংশ রিকভার হয়েছে। নির্বাচনের আগে ক্রস-বর্ডার অ্যাক্টিভিটি বৃদ্ধি পায়। ড্রাগ এবং কিশোর গ্যাংও নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। 

সানাউল্লাহ আরও বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৮০ হাজার থেকে এক লাখ সদস্য অনুরোধ করা হয়েছে। কেন্দ্র সংখ্যা ৪২ হাজার ৬৭১টি। রিজিয়নাল রিজার্ভ, মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্সের জন্য সংখ্যাগত সীমা রয়েছে।

এমএইচএইচ/এএইচ