আব্দুল কাইয়ুম
১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৬ পিএম
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রায়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৭ নভেম্বর। এ রায়কে সামনে রেখে জেনেভা ক্যাম্প থেকে আঁকা হচ্ছে সর্বোচ্চ নাশকতার ছক। এমন একটি ককটেলের কারখানায় অভিযান চালিয়ে বিপুল সংখ্যক ককটেল বোমা, ককটেল তৈরির কাঁচামালসহ বিপুল পরিমান বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় ককটেল তৈরির কয়েকজন কারিগরকে আটক করা হয়।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর জেনেভা ক্যাম্পের ৭ নম্বর সেক্টরের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এসব জব্দ করে পুলিশ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিস্ফোরণ হওয়া ককটেলের আলামত ও জেনেভা ক্যাম্প থেকে উদ্ধার হওয়া ককটেলের আলামত একই রকম। জেনেভা ক্যাম্পের ককটেলের কারখানায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা ককটেলের খোসার সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় বিস্ফোরিত ককটেলের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মূলত জেনেভা ক্যাম্পে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা অর্ডার দিয়ে এসব ককটেল বোমা বানিয়ে তা বিস্ফোরণ ঘটাতো। এসব ককটেল তৈরি থেকে বিস্ফোরণ পর্যন্ত চুক্তিতে কাজ করতো জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক কারবারিরা।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক কারবারিদের ব্যবহার করে নাশকতার ছক আঁকছিলো কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ জন্য জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক কারবারি বুনিয়া সোহেল, পিচ্ছি রাজা, চুয়া সেলিম, ইশতিয়াক ও গালকাটা মনু মাদক ব্যবসার আধিপত্য বিস্তার করতে আওয়ামী লীগের পলাতক আসামিদের নির্দেশনায় জেনেভা ক্যাম্পে ককটেল তৈরির কারখনা গড়ে তুলে। এমন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জেনেভা ক্যাম্পের ৭ নম্বর সেক্টরে শীর্ষ মাদক কারবারি বুনিয়া সোহেলের ভাই টুনটুনের একটি নির্মাণাধীন বাড়ির ভিতর অভিযান চালিয়ে বিপুল সংখ্যক ককটেল ও বিপুল পরিমান ককটেল তৈরির কাঁচামাল জব্দ করে পুলিশ।
তবে স্থানীয়রা জানায় জেনেভা ক্যাম্পে প্রতিটি বড় মাদক কারবারির ককটেল তৈরির কারখানা আছে। এরা আওয়মী লীগের নাশকতায় সহায়তা করতে তাদের দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী ককটেল সরবরাহ করে। এছাড়াও জেনেভা ক্যাম্পের মাদক কারবারিদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এসব ককটেল সরবরাহ করে।
একাধিক গোয়েন্দা তথ্য বলছে, জেনেভা ক্যাম্পে অন্তত দুটি আস্তানায় বোমা, হাতবোমা বা ককটেল তৈরি করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে ক্যাম্পের ৪ নম্বর সেক্টর ও ৭ নম্বর সেক্টরে ককটেল তৈরির দুটি অস্থায়ী আস্তানা খুঁজে পেয়েছেন তারা। জেনেভা ক্যাম্পের ভিতর ককটেল তৈরিতে সবচেয়ে সক্রিয় কারিগর জসিম ওরফে কাল্লু। সে মিরপুরের পল্লবী বিহারী ক্যাম্পে বসবাস করে। যখন জেনেভা ক্যাম্পে ককটেলের অর্ডার আসে। তখন জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক কারবারি বুনিয়া সোহেলের ডাকে ক্যাম্পে এসে ককটেল বানিয়ে দিয়ে যায়।
এছাড়াও জসিমের পাশাপাশি জেনেভা ক্যাম্পে নবাব ওরফে কালা নবাব নামে আরেকজন কারিগর রয়েছে। সে জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দা হলেও গ্রেফতার এড়াতে ভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে। ককটেল তৈরির এসব কারিগররা বুনিয়া সোহেলের ককটেল তৈরিতে কাজ করে। এসব কার্যক্রম সহজে করতে জেনেভা ক্যাম্পে ছোট আকারে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বহুতল ভবন তৈরি করেছে বুনিয়া সোহেল ও তার ভাই টুনটুন।
তারা তাদের মাদক কারবার আধিপত্য ধরে রাখতে ককটেল তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছে। তাদের পাশাপাশি, জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক কারবারি চুয়া সেলিম, পিচ্ছি রাজা, ইশতিয়াক ও গাল কাটা মনু নতুনভাবে ককটেল তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছে। যেসব কারখানা নজরদারি করছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। যেকোন সময় এসব কারখানায় অভিযান চালাতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাগুলো।
জেনেভা ক্যাম্পে ককটেল তৈরির ২২ জন কারিগর রয়েছে, যারা ককটেল বানাতে পারদর্শী। জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বলছে, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে বোমা তৈরির অর্ধশত কারিগর রয়েছে। তবে গত কয়েক মাসে সক্রিয় ২২ জন কারিগরের নাম পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে রয়েছে নবাব ওরফে কালা নবাব, বাবু ওরফে মো. জসিম, তারেক, পার মনু, শাহ আলম, রনি, লালন, শুভ, এলেক্স সাজ্জাদ ওরফে গোলাপী, সামির পিচ্চি, ফারুক ওরফে হিরোঞ্চি ফারুক, রুবেল ওরফে দাগী রুবেল, কালু, আরিফ, ফরিদ, আকরাম, আহমেদ আলী, পান্ডু হিরা, আজম, ফয়সাল, মুক্তা রুবেল এবং মুন্না ওরফে পোপলা মুন্না।
এদিকে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, গত ১০ নভেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টার, ইবনে সিনা ও মোহাম্মদপুরে প্রবর্তনা, প্রিপারেটরি স্কুলের ভেতর ককটেল ও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপে বুনিয়া সোহেল গ্রুপের দাগী রুবেল ও তার সহযোগীরা জড়িত। তাদের কাছ থেকে ককটেলের কেনার আদেশ নিয়ে তা কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের নির্দেশনা মতো নিক্ষেপ করে জেনেভা ক্যাম্পের এসব ককটেল কারিগররা।
এ বিষয়ে তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা আজকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে জেনেভা ক্যাম্পের ৭ নম্বর সেক্টরের মোক্তারের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল সংখ্যক ককটেল ও বিপুল পরিমান ককটেল তৈরির কাঁচামাল জব্দ করি। জেনেভা ক্যাম্পের ভেতর আরও কয়েকটি ককটেল তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছি আমরা। এসব ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।
একেএস/ক.ম