আব্দুল কাইয়ুম
১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১০:২৭ এএম
রাজধানী জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে অজানা এক আতঙ্ক। শেখ হাসিনার মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপাসনালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ককটেল নিক্ষেপ, বাসে অগ্নিসংযোগ করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল, জায়গায় জায়গায় বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। দেশের সকল বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিশেষ করে রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, মার্কেট, গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় দেখা গেছে পুলিশের বাড়তি তৎপরতা।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) ভোর থেকেই রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল, ফার্মগেট, গুলিস্তান,ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর এলাকায় মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সরব উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ভোর থেকে রাজধানীতে তেমন যান চলাচল নেই। মানুষের মধ্যে একটা অজানা আতঙ্ক কাজ করছে। কখন কোনদিক থেকে কী ঘটে যায় এমন আতঙ্কে থমথমে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছে, গত কয়েকদিনের চেয়ে আজ ভোর থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের পরিস্থিতিতে তারা প্রস্তুত রয়েছে। আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তারা টহল বাড়িয়েছে। তবে, নগরবাসীকে আতঙ্কিত না হয়ে তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ।
রাজধানীর চিত্র
সকাল সাড়ে ৮টা। রাজধানীর প্রবেশমুখ গাবতলী আমিন বাজার ব্রিজ এলাকায় বিজিবি, র্যাব, পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। কিছুক্ষণ পর পর সেনাবাহিনীর গাড়ি টহল দিচ্ছে। তবে, গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। পাশাপাশি, এই সড়কে তেমন যানবাহন চলাচল করছে না।
এদিকে, মিরপুর-১ সনি সিনেমা হল, স্টেডিয়াম, মিরপুর-১০ ও মেট্রোরেলের আশপাশে সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। অফিসগামী মানুষের যাতায়াত তেমন লক্ষ করা না গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে মানুষের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। তবে, যাত্রীবাহী গণপরিবহনের তেমন যাতায়াত না থাকায় মানুষের মাঝে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, হাইকোর্ট, প্রেসক্লাব, মতিঝিল, ফার্মগেটসহ পুরো রাজধানী জুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে।
তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজান বলেন, ‘গতকাল রাতব্যাপী যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্ট ও মোড়গুলোতে পুলিশের পাহাড়া ও চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে। যথারীতি কয়েকটি টহল দল বাড়ানো হয়েছে। যারা প্রতিনিয়ত মাঠে টহল দিচ্ছে। নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা নগরবাসীর সহায়তায় সদা প্রস্তুত আছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাতে কয়েক জায়গায় নানা ধরনের সংহিসতা করার চেষ্টা করলেও সকাল থেকে পুলিশ আরও সজাগ রয়েছে। কেউ কোনো নাশকতার চেষ্টা করলে আমরা তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’

বাসিন্দারা যা বলছে
ধানমন্ডি-ঝিগাতলা এলাকার বাসিন্দা আবদুল ওয়াহাব ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘গতকাল রাতে ঝিগাতলা থেকে কয়েকটি ককটেল উদ্ধারের ঘটনায় আমাদের সন্তানরা আতঙ্কে আছে। তারা আজকে স্কুলে যায়নি। কারণ, কোনদিক থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আওয়ামী লীগের লোকজন হামলা করে বসে এমন আতঙ্ক বিরাজ করছে। আমরাও আতঙ্কে আছি। কখন কী হয় এমন আতঙ্ক মনের মধ্যে বিরাজ করছে। আমরা চাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকুক।’
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মেহেরিন অঞ্জনা বলেন, ‘আমার সন্তান প্রিপারেটরি স্কুলে পড়াশোনা করে। পরশুদিন রাতে স্কুলে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনা এরা গতকাল স্কুলে গিয়ে জানতে পেরেছে। তখন থেকেই শিশুরা আতঙ্কে আছে। আজকে অনেক বুঝিয়েও স্কুলে পাঠাতে পারছি না। আমাদের মধ্যে একটা অজানা আতঙ্ক কাজ করছে। কখন কোনদিক থেকে কী হয়ে যায় এমন আশঙ্কায় আছি।’
একই শঙ্কার কথা জানিয়েছে তেজগাঁও, আগারগাঁও, কলাবাগান, যাত্রাবাড়ী ও মিরপুর এলাকার বাসিন্দারা। তারা বলছেন, নগরীতে জ্বালাও-পোড়াও, ককটেল হামলা যেভাবে শুরু হয়েছে; এতে নগরবাসী আতঙ্কে দিনানিপাত করছেন। কোনদিক থেকে কার ওপর হামলা করে বসে এমন আতঙ্কে শিশুরা স্কুলে-কলেজে যেতে চাচ্ছে না।
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ‘নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। নগরবাসীর সেবায় সর্বদা আমাদের পুলিশ সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে। আমি চাই নগরবাসী আতঙ্কিত না হয়ে আমাদের সহায়তা করবে। এ ছাড়াও, মাঠে সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি ও পুলিশসহ পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটগুলো সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত রয়েছে।
একেএস/এফএ