images

জাতীয়

জাতীয় নির্বাচনে কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী নিশ্চিত করার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৩৮ পিএম

নারী ও যুবদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ানো, নিরাপদ ভোট পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ছয় দফা অঙ্গীকার ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অন্তত ৩৩ শতাংশ নারী ও যুব প্রার্থীর মনোনয়ন নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পর্যটন ভবনের শৈলপ্রপাত মিলনায়তনে নাগরিক সমাজের এক সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়। এর আয়োজন করে ঢাকা সিএসও হাব ও সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি।  

প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. হালিদা হানুম আখতার, আমাল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক ইশরাত করিম, সাংবাদিক পার্থ সারথি দাস, শিক্ষা গবেষক নাহিদ আক্তার, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শাহানা আক্তার এবং সাভার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কে. এম. শহীদুজ্জামান। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সংস্থা থেকে আগত নারী ও যুব প্রতিনিধিরা মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন। প্যানেল আলোচনার সঞ্চালনা করেন সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক মো. সেকেন্দার আলী মিনা।

ডা. হালিদা হানুম আখতার বলেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের মেয়াদ গত মে মাসে শেষ হয়েছে। আমরা ১৫টি বিষয়ে সুপারিশ তৈরি করেছি। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনার জন্য সময় চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা সময় দেয়নি। নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে হলে শক্ত অবস্থান নিতে হবে এবং তা বাস্তবায়নকারীদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। অধিকার আদায় না হলে যৌথভাবে তা অর্জন করতে হবে। নারীর অধিকার নারীকেই আদায় করতে হবে। আগামী নির্বাচনে নারী ও যুব ভোটারদের দেখতে হবে—প্রতিশ্রুতিপূর্ণ ও সক্ষম প্রার্থী কারা। সমাজের স্বার্থ রক্ষায় যোগ্য প্রার্থী বেছে নিতে হবে। ভোটারদের নিরাপদ পরিবেশে ভোট দেওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করাও জরুরি।

ইশরাত করিম বলেন, নির্বাচনের আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। অনেক তরুণী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এনজিও কর্মীরাও হামলার শিকার হচ্ছেন। ভিন্নমত প্রকাশ করলে হামলা করা হয় কেন? ভোটের আগে ভয়মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

নাহিদ আক্তার বলেন, নারীর প্রতি বৈষম্যের কারণ গভীর। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কারণে নারীর প্রতিনিধিত্ব সেভাবে প্রকাশ পায় না। কোটায় সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না; যোগ্য নারীর মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

পার্থ সারথি দাস বলেন, ভুল জনধারণা সমাজকে এগিয়ে যেতে দিচ্ছে না। এই ভুল দূর করতে হবে প্রজ্ঞার আলো দিয়ে। পরিবার থেকে সচেতনতা তৈরি হলে তার ইতিবাচক প্রভাব সমাজে পড়বে।

শাহানা আক্তার বলেন, পরিবার থেকেই নারী ও যুবকদের প্রতি মূল্যায়নের চর্চা গড়ে তোলা জরুরি। যোগ্য ও মূল্যবোধসম্পন্ন ভোটাররাই ভবিষ্যতে যোগ্য জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবেন।

কে. এম. শহীদুজ্জামান বলেন, যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করতে ভোটারদের সচেতন হতে হবে। সচেতন ভোটারই সঠিক তথ্য যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

সম্মেলনের আগে আগত নারী ও যুব প্রতিনিধিরা আগারগাঁও এলাকায় শোভাযাত্রায় অংশ নেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা সিএসও হাবের প্রেসিডেন্ট মুশফিকা লাইজু। সম্মেলনের উদ্দেশ্য তুলে ধরেন একশনএইড বাংলাদেশের সুশীল প্রকল্পের পরিচালক মৌসুমী বিশ্বাস। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সুশীল প্রকল্পের ঢাকা জেলা সমন্বয়কারী নাসরিন মাহমুদ।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী, ভোটার ও নেতৃত্ব পর্যায়ে নারী ও যুবকদের অংশগ্রহণ বাড়ানো, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের নেতৃত্ব বিকাশে প্রশিক্ষণ ও সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা, নির্বাচনকালীন সহিংসতা, ভয়ভীতি ও হয়রানির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া, দলীয় মনোনয়ন ও অর্থ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং স্থানীয় প্রশাসন, গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে সহযোগিতামূলক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা।

এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, মনোনয়নের ক্ষেত্রে নারী ও যুবকদের জন্য অন্তত ৩৩ শতাংশ কোটা নিশ্চিত করতে।

সমাপনী বক্তব্য রাখেন ঢাকা সিএসও হাবের জেনারেল সেক্রেটারি মো. আব্দুল ওয়াহেদ।

এআর