মোস্তফা ইমরুল কায়েস
০৩ জুলাই ২০২২, ০৯:৫৪ পিএম
রাজধানীর হাটগুলোতে গরুর বিক্রি বাট্টা আগামী ৬ জুলাই থেকে শুরু হবে। কিন্তু তার আগেই গাবতলী গরুর হাটে আসতে শুরু করেছে গরু। এ হাটের এখনো সাজসজ্জা চলছে। এরই মধ্যে গরু বিক্রেতারা তাদের ও গরুর থাকার জায়গা খুঁজে নিচ্ছেন। তবে এবার হাট শুরুর অঘোষিত দ্বিতীয় দিনে হাটে গরুর চেয়ে উৎসুক জনতাই বেশি।
শনিবার রাত ও রোববার বিকেলে গাবতলী গরুর হাট ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
মেহেরপুরের রাসেদ আহমেদ এবার চারটি দেশাল জাতের গরু নিয়ে এসেছেন। আশা করছেন সবার আগে বিক্রি করে বাড়ি চলে যাাবেন। কিন্তু প্রথম দিনে কেউ দাম হাঁকায়নি। )
তিনি বলছিলেন, ‘আগাম আসলাম। যাতে আগে ভাগেই বিক্রি করে চলে যেতে পারি। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে তো কোনো ক্রেতা নেই। অনেকে এসে শুধু দেখছে আর দাম জিজ্ঞাসা করছে। কিন্তু কেনার কোনো লোক পেলাম না।
মিরপুর মাজার এলাকা থেকে হাটে গরু দেখতে এসেছেন কলেজ শিক্ষার্থী রাজীব আহমেদ। তিনি জানালেন, হাট শুরু হবে আরও দুই দিন পর। তখন হাটে অনেক ভীড় থাকে। এসব বিষয় মাথায় রেখে আগাম হাটে এসেছেন যাতে ভিড় ছাড়াই গরু দেখতে পারেন।
রোববার বিকেল থেকে ঘুরে দেখা গেল, গরুর চেয়ে উৎসুক জনতাই বেশি। এদের বেশির ভাগই এসেছেন গরু দেখতে। গরুর ভিডিও ও কোরবানির হাটে আসা নাদুস নুদুস পশুটিকে সেলফি বন্দী করতে।
মোহাম্মদপুরের খিলজী রোড থেকে সপরিবারে কোরবানির পশু দেখতে এসেছেন ইমরান আহমেদ। বলছিলেন, এখন তো হাট জমেনি। প্রতি বছর আমার গিন্নী ও বাচ্চারা গরুর হাট কেমন তা দেখতে চায়। এবার শুনলাম হাট এখনো তেমনভাবে শুরু হয়নি। সে কারণে দুপুরে খেয়ে বের হলাম।
হাটে বেড়াতে এসে ৫ বছরের মেয়ে তো বেজায় খুশি। সে গরুর সাথে ছবিও তুললো। তবে গিন্নী ভয়ে গরুর কাছে যায়নি। সে নাকি কোনো এক ভিডিওতে দেখেছে কোরবানির গরু লাথি মারে এ ভয়ে গরুর কাছেও যাইনি, বলছিলেন তিনি।
রাজধানীসহ আশপাশের সবচেয়ে বড় গরুর হাট গাবতলী। এ হাটে প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার গরু বিক্রি হয়। বিশেষ করে উত্তরের জেলাগুলো থেকেই বেশি খামারী এই হাটে গরু নিয়ে আসেন। এর মধ্যে পাবনা, মেহেরপুর, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, গাংনী, বগুড়া, রাজশাহী এছাড়াও মানিকগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর থেকেও গরু আসে। এবারও সেই তালিকা থাকা জেলার খামারিরা গরু নিয়ে আসবেন বলে মনে করছেন হাটে সংশ্লিষ্টরা।
হাটের ইজারাদারের লোক হিসেবে রাজু আহমেদ নামে একজন বলছিলেন, প্রতি বছর এসব জেলা থেকে বিক্রেতারা আসে। এবারও তাই হবে বলে আশাবাদী। যদিও হাট শুরু এখনো হয়নি। আবার এক প্রকার হচ্ছেও । মঙ্গলবার থেকে এ হাট পুরোপুরি জমে উঠবে বলে তারা বিশ্বাস করছেন। যদিও এখনো তাদের প্রস্তুতি শেষ হয়নি। পুরো হাটে বাঁশের খুঁটি পোতা ও লাইটিংয়ের কাজ এখনো চলছে।
তিনি জানালেন, গেল দুই বছর করোনার কারণে হাট জমেনি। এবার হাটকে তারা ভিন্নভাবে পরিপাটি ও জাঁকজমক করে সাজাচ্ছেন যাতে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই আকৃষ্ট হয়। হাটে এসে কষ্ট অনুভব না করেন। এজন্য প্যান্ডেল করে সাজানো হয়েছে। মাথার উপর থাকছে সামিয়ানার অস্থায়ী ছাদও। সাথে ফ্যান ও লাইটিং তো থাকছেই।
হাট ঘুরে জানা গেল, গত দুই দিনে লাখ টাকার উপরের গরুই বেশি এসেছে। সিরাজ নামে এক ব্যক্তি কুষ্টিয়া থেকে মাত্র একটি গরু নিয়ে এসেছেন। তিনি তার গরুর দাম হাকাচ্ছেন ২০ লাখ। কারণ এ গরু থেকে ২৫ মনের বেশি গোস্ত মিলবে বলে দাবি তার।
গাইবান্ধা থেকে গরু নিয়ে এসেছেন সজল আহমেদ। মাত্র একটি গরু। সেটি শাহীওয়াল জাতের। তিনি তার গরুর নাম রেখেছেন তুফান। আর দাম হাকাচ্ছেন ১০ লাখ টাকা। যদিও এখনো কেনার জন্য কেউ তাকে দাম জিজ্ঞাসা করেনি ।
রোববার দুপুর ২ টায় হাটে চুয়াডাঙ্গা থেকে ১০টি গরু নিয়ে এসেছেন আমির হোসেন। তিনি তার বড় গরুটির দাম চাচ্ছেন সাড়ে ৬ লাখ। তিনি আশাবাদী তার কাঙ্খিত দাম পাবেন।
গাবতলী হাটে অন্যান্য বছরগুলোতে ঘোষিত সময়ের আগেই হাট শুরু হয় কিন্তু এবার হাটে আজ অবধি মাত্র শতাধিক গরু এসেছে। এখনো হাটে ছাগল, ছোট গরু ও উটের দেখা মেলেনি।
এমআইকে/ একেবি