জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
০৩ জুলাই ২০২২, ০৯:২৭ পিএম
আগামী ১০ জুলাই পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। ৬ জুলাই থেকে রাজধানীর বিভিন্ন হাটে পশু বিক্রির কথা থাকলেও ইতোমধ্যেই ঢাকায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। বিক্রিও হচ্ছে। জোট ঝামেলা এড়াতে আর পছন্দের ফলে আগে ভাগেই পশু কিনছেন কেউ কেউ।
গরু দেখতে ভিড় করছেন এলাকার উৎসুক মানুষ। এখন থেকে প্রতিদিনই গরু আসবে বলে জানিয়েছেন হাট ইজারাদাররা। তবে বিক্রি পুরো দমে শুরু হতে আরো কিছু দিন সময় লাগবে বলে মনে করেন তারা।
রোববার (৩ জুলাই) গরুর বাজারের এ দৃশ্য দেখা যায় রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশনের উত্তরার হাটে। উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরের বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে অবস্থিত বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গায় পশুর হাটে রোববার দুপুরে দেড় লাখ টাকায় গরু কেনেন উত্তরার বাসিন্দা ওবায়দুর রহমান। যা হাসিল সহ আরো প্রায় দশ হাজার বাড়বে বলেও জানান।
হাসিল ঘরের সামনে দাড়িয়ে এতো আগে গরু কেনার কারণ সম্পর্কে ঢাকা মেইলকে ওবায়দুর রহমান জানান, এই গরু পছন্দ হয়েছিল গতকাল শনিবার। আজ পরিবারে অন্য সদস্যদের নিয়ে এসে গরুটি কিনে নিয়েছি। আল্লাহর জন্য কোরবানি দু’দিন পর হলেও কিনতে হবে। পছন্দ হয়েছে যেহেতু দেরি করে লাভ কি বলেন।
এতো আগে কেনায় দেখভালে সমস্যা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, লোকজন আছে আর একটু দেখাশুনা করলে একটু মায়াও তৈরি হয় পশুর প্রতি।
গরু কিনে দাম নিয়েও সন্তুষ্টির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গরু হিসেবে দেড় লাখ আমার কাছে ঠিকই আছে। কেননা, নিত্য পণ্যের যে হারে দাম বাড়ছে, খামাড়ি যারা সারাবছর লালন পালন করে তাদেরতো অনেক খরচ আছে সে হিসেবে ঠিকই আছে। গরু বিক্রেতা কুষ্টিয়া থেকে আসা জলিল বলেন এটি আমাদের প্রথম বিক্রিত গরু।
তবে এই হাটে কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে এর আগেও। গতকালও (২ জুলাই) এই হাটে গরু বিক্রি হয়েছে। প্রথম যে গরুটি বিক্রি হয়েছিল সেটিও কুষ্টিয়ার। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার বেপারি সোহেল ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি ১০টি গরু নিয়ে এসেছি। গতকাল শনিবার একটি বিক্রি করেছি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তিনি আরও বলেন, দেশে বন্যা হলেও গরুর দামে খুব একটা সুবিধা নেই। এখানে ঢাকায় হাট কেমন যাবে এখনো বুঝতেছি না। তবে গরু পালতে খরচ বেশি লোকসান দিয়ে গরু বেচবো না। গরুর মতো এই হাটে আজ রোববার (৩ জুলাই) একটি খাসিও বিক্রি হয়েছে। প্রথম খাসি বিক্রি হওয়া সেটিও কুষ্টিয়া থেকে আসা। কুষ্টিয়ার বেপারি সুলতান মিয়া জানান ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা কয়েকজন মিলে ১৪০টি খাসি নিয়ে এসেছি। এখানে প্রতিদিনই বিশেষ করে বিকেলে অনেকে ঘুরতে আসে দাম জিগায়। আরেক বেপারি আব্দুল বলেন আমরা দু’জনে ৯০টি খাসি এনেছি। আমার এখানে মানুষ দাম জানতে চেয়ে ঘুরে দেখে, ছবি উঠায় তবে বিক্রি হয়নি। পাশে দেখিয়ে বলেন তারা একটি আজ বেচে দিছে। এখন থেকে প্রতিদিন বিক্রি হতে পারে বলেও ধারণা করেন তিনি। রাজশাহী থেকে আসা বিক্রেতা ছবুর বলেন, অনেকেই আছে বাচ্চাদের জন্য শখের বশে আগেই খাসি কেনন। অনেক পরিবারের বাচ্চারা ডাল পালা খাসিকে খেতে দেন। আবার কেউ কেউ আছেন শেষ রাতে ঈদের আগের রাতে কিনেন।
হাটের ইজারাদার মো. নূর হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, আল্লাহর রহমত। বিক্রেতারা গরু নিয়ে আসছেন। হাট আনুষ্ঠানিক বিক্রি দেড়ি আছে তবে এর আগেইতো গরু আসবে এটাই নিয়ম। এরমধ্যে দু'একটি বিক্রি হতে পারে স্থানীয়রা কিনে ফেলে কেউ কেউ এটিতো আর বাধা দেয়া যায় না। হাটের ইজারা সংশ্লিষ্টরা এবং হাসিল ঘরের দায়িত্বে থাকা একাধিক ব্যক্তি জানান, এখন সবাই পশুবাহি ট্রাকগুলো যাতে নিরাপদে হাটে আসতে পারে গরু নামিয়ে বেপারিরা নিরাপদে থাকতে পারে সেসব দেখছেন। এরমধ্যে যদি স্থানীয়রা কিনে ফেলেন যে জন্য একটি কাউন্টারে চারজনকে রাখাও হয়েছে। কাউন্টার থেকে জানা যায় গতকালই প্রথম গরু বিক্রি হয় এরপর আজ রোববার একটি খাসি একটি গরু বিক্রি হয়েছে।
উত্তরার বৃন্দাবন হাট ঘুরে একাধিক বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা হাটে বিক্রির বিষয়ে খুব আশাবাদি। মো. ইসমাইল হোসেন ২০টি গরু এনেছেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া থেকে। তিনি এনেছেন সবই প্রায় ছোট গরু। লাখের মধ্যে দাম সবগুলোর।
তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি এই হাটেই গরু বেচি। এই হাটে আশপাশের মানুষের পাশাপাশি পুরান ঢাকা থেকেও মানুষ আসে। কারণ হিসেবে বলেন, হাটে এমনভাবে গরু রাখার ব্যবস্থা যে মাঝখান দিয়ে আরামে হাটা চলা করা যায়। অন্য হাটে এতো দুরত্ব থাকে না। হাট অনেক খোলামেলা এতে করে অনেক সাহেবরা, ম্যাডামরা একটু দূরে থেকেই ভালোভাবে ঘুরে দেখতে পারেন। এসব কারণে এখানে অনেক জায়গার ক্রেতা আসে।
পাবনা থেকে ১৬টি গরু নিয়ে ভোরে হাটে এসেছেন আব্দুল জব্বার। তিনি বলেন, গতবার কিছু গরু ফেরত নিয়ে যাই এবার আশা আছে যদিও খাদ্যের দাম চরা দেখি বাজার কেমন যায়।
রাজধানীর শিয়াল ডাঙা কাউলা হাট ঘুরে দেখা গেছে হাটে যে গরু এসেছে তার দেখভালে ব্যস্ত বিক্রেতারা। কেউ গরুকে গোসল করাচ্ছেন কেউ খর, ভুষি দিচ্ছেন। অনেকেই পরিবার নিয়ে গরু দেখতে এসেছেন। একটি গরু দরকষাকষি করে হাসিল ঘর পর্যন্ত এসেও ফিরে গেছে বলে জানা যায়।
এছাড়াও গাবতলির পশুর হাটে নিয়মিতই গরু বিক্রি হচ্ছে। তবে গাবতলি থেকে স্থানীয় কসাইরা মাংস বিক্রির জন্যও কিনে থাকেন বলে সাধারণ মানুষ কিনেছেন কিনা সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আর অস্থায়ী হাটগুলোতে বিক্রি হওয়া পশু সাধারণ মানুষ কোরবানির জন্যই কিনেছেন বলে জানা গেছে।
রাজধানীর অন্যান্য হাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবগুলো হাটে প্রতি রাতেই গরুভর্তি ট্রাক আসছে। ঈদের সময় গড়ানোর সাথে সাথে আরও বেশি ট্রাক যেমন ঢুকবে তেমনি বিক্রিও বাড়বে প্রত্যাশা হাট সংশ্লিষ্টদের।
ডব্লিউএইচ/ একেবি