মহিউদ্দিন রাব্বানি
০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪৭ পিএম
# ফেস্টুনের চাপে ঢাকা শাপলা চত্বর
# দেখা যাচ্ছে না পানির ফোয়ারা
# ব্যাংক ভবনের সামনেও ব্যানারের দখল
# দুই-এক দিনের মধ্যেই নামছে ডিএসসিসি
রাজধানীর আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত মতিঝিল—যেখানে একসময় চোখে পড়ত শাপলা চত্বরের দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা ও চারপাশে সুশৃঙ্খল অফিসপাড়া। কিন্তু এখন দৃশ্যপট একেবারেই ভিন্ন। ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো ব্যাংকপাড়া। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে এলাকার প্রাকৃতিক ও স্থাপত্যিক সৌন্দর্য।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শাপলা চত্বরের চারপাশে আর দেখা যায় না সেই পরিচ্ছন্ন বৃত্তাকার ফোয়ারা। এর চারদিকে ঝুলছে অসংখ্য রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর শুভেচ্ছা ব্যানার, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণামূলক ফেস্টুন এবং বিভিন্ন সংগঠনের অভিনন্দন পোস্টার। এমনকি সোনালী ব্যাংক ভবনের সামনেও দেখা গেছে বিশাল আকারের ব্যানারের স্তূপ, যা মূল ভবনের নামফলককেও আড়াল করে ফেলেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিদিন এই এলাকায় হাজারো মানুষ আসা-যাওয়া করেন। অথচ এসব ব্যানার-ফেস্টুনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মতিঝিলের সৌন্দর্য। ব্যাংকপাড়ার কর্মরত অনেকে জানান, এখন চারদিকে চোখে পড়ে শুধু রাজনৈতিক পোস্টার—মনে হয় যেন ব্যানারের শহর।
তবে রাজনৈতিক নেতারা বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখছেন। তাঁদের মতে, এটি গণতান্ত্রিক অধিকার ও রাজনৈতিক প্রচারণার অংশ। এক নেতা বলেন, “আমরা কাউকে ক্ষতি করছি না। নেতাদের পক্ষ থেকে শুধু শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।”
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) জানিয়েছে, অনুমতি ছাড়া লাগানো এসব ব্যানার ও ফেস্টুন দ্রুত অপসারণ করা হবে। দুই-এক দিনের মধ্যেই অভিযান চালিয়ে এলাকা পরিষ্কার করা হবে বলেও সংস্থাটি জানিয়েছে।
একসময় পরিচ্ছন্ন ও সুশৃঙ্খল এই ব্যাংকপাড়া রাজধানীর ‘বাণিজ্যিক হৃদয়’ হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু এখন ব্যানার-ফেস্টুনের চাপে হারাতে বসেছে তার সৌন্দর্য ও স্বকীয়তা।
স্থানীয়রা জানান, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে প্রার্থীদের প্রচারণা বেড়েছে। বিশেষ করে ঢাকা-৮ আসনের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সম্ভাব্য প্রার্থী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের ব্যানার ও ফেস্টুন বেশি চোখে পড়ছে। এছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, গণঅধিকার পরিষদ ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রচারণাও চলছে জোরেশোরে। এক স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “আগে সিটি করপোরেশন এসব ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে নিত, এখন আর তেমনটা দেখা যায় না।”
মতিঝিল এলাকার ব্যবসায়ী রাকিবুল ঢাকা মেইলকে বলেন, “সম্প্রতি ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন বেড়ে গেছে। এতে পরিবেশ ও রাজধানীর সৌন্দর্য দুই-ই নষ্ট হচ্ছে। শাপলা চত্বরের ফোয়ারাটিও আর উপভোগ করা যায় না।”
জানা গেছে, বাণিজ্য এলাকা মতিঝিলের শোভাবর্ধনে ১৯৭৭ সালের ১৫ জুন উদ্বোধন করা হয় শাপলা চত্বরের ভাস্কর্যটি। এটি দেশের জাতীয় ফুল শাপলার প্রথম ভাস্কর্য, যার নকশা করেন স্থপতি আজিজুল পাশা। এই ভাস্কর্যকে কেন্দ্র করেই এলাকার নাম হয়েছে ‘শাপলা চত্বর’।
বর্তমানে অবহেলা ও অযত্নে ভাস্কর্যটি অনেকটাই অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। ধুলা-ময়লায় হারিয়ে গেছে তার আসল সৌন্দর্য।
সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, অনুমোদন ছাড়া পোস্টার, ব্যানার ও দেয়াললিখন আইনত নিষিদ্ধ। দেয়াললিখন ও পোস্টার লাগানো নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২-এর ধারা ৩ ও ৪ অনুযায়ী এসব কার্যক্রম অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। একই আইনের ধারা ৬-এ অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে আইনের প্রয়োগ খুব একটা দেখা যায় না।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদার ঢাকা মেইলকে বলেন, “আমরা চাই নগর পরিচ্ছন্ন থাকুক, নগরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাক। আমরা বর্জ্য অপসারণে সব সময় সচেষ্ট। তবে সম্প্রতি প্রশাসক না থাকায় কিছুটা গ্যাপ তৈরি হয়েছিল। এছাড়া রাজনৈতিক পোস্টার ও ফেস্টুন সরাতে স্থানীয়দের কিছু জায়গায় আপত্তিও থাকে। এখন নতুন প্রশাসন এসেছে—দুই-এক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আমি কথা বলেছি। খুব শিগগিরই আপনারা দেখবেন, পুরো এলাকা পরিষ্কার হয়ে গেছে।”
জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা-৮ আসনের দলীয় প্রার্থী অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন ঢাকা মেইলকে বলেন, “আমাদের দেশ গণতান্ত্রিক। নির্বাচন সামনে—প্রচার না করলে জনগণ আমাদের চিনবে না। সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে বলব, সবাই-ই তো করছে। এসব ফেস্টুন সাময়িক, নির্বাচনের পর এগুলো আর থাকবে না।”
এমআর/এআর