images

জাতীয়

‘সংসদ ব্যর্থ হলে প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৪৩ পিএম

জুলাই সনদের সুপারিশ আগামীতে নির্বাচিত সংসদ বাস্তবায়ন করবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সেই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে আন্তরিক হবেন বলে আশা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে নির্বাচিত সংসদ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে নির্দিষ্ট সময় পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাবে বলে সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এই কথা জানিয়েছেন।

এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের কমিশন সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে সেটা তুলে ধরে আলী রীয়াজ বলেন, আগামী সংসদ নিয়মিত কাজের পাশাপাশি প্রথম ২৭০ দিন (৯ মাস) সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করবে। গণভোটে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলো এই সময়ের মধ্যে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করবে। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে এমন সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, তবে যদি সংসদ তা করতে ব্যর্থ হয়, সে ক্ষেত্রে ঐকমত্য কমিশন একটি বিকল্প প্রস্তাবও করেছে। তা হলো—সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো খসড়া বিল (সংবিধান সংশোধনী আইনের খসড়া) আকারে তৈরি করবে সরকার। বিলটি গণভোটে দেওয়া হবে। গণভোটে তা পাস হলে সংবিধান সংস্কার পরিষদ মূল ভাব ঠিক রেখে প্রস্তাবগুলো অনুমোদন করবে। আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে তা অনুমোদন না করলে এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাবে।

RRR

আগামী সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটে যেসব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হবেন, তারা ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের দিনসহ তার আগে যেকোনো দিন সরকার জুলাই জাতীয় সনদের ওপর গণভোটের আয়োজন করতে পারে, এই মর্মে ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ দিয়েছে।

এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এবং বাংলাদেশের জনগণের ভোটে যারা নির্বাচিত হবেন, তারা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের যাত্রার সূচনায় ভূমিকা রাখবেন। তারা এই দায়িত্ব পালনে অকুণ্ঠিত থাকবেন, সফল হবেন এবং বাংলাদেশকে একটা নতুন পথের দিকে অগ্রসর করবেন।

আলী রীয়াজ বলেন, সেই বিবেচনা থেকেই আমরা দুটো প্রস্তাব দিয়েছি। দুটো বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করেছি। আমরা সরকারকে আজ সকালে আমাদের প্রস্তাবের বিস্তারিত দেওয়ার পর অনুরোধ করেছি, যত দ্রুততার সঙ্গে সম্ভব তারা যেন এই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সূচনা করেন। আমরা আশা করি, তারা সেটা করবেন।

কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ গত ১৭ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ভাষায় দ্ব্যর্থহীনভাবে এই অঙ্গীকার করা হয়েছে যে তারা এগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই প্রেক্ষাপটেই জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত সুপারিশগুলোকে সরকার কীভাবে বাস্তবায়িত করতে পারে, সেজন্য আমরা সুপারিশ করেছি।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আমাদের সুপারিশে প্রধানত তিনটি ভাগ আছে। প্রথমটি হচ্ছে- যে সকল বিষয় সাংবিধানিক বিষয় সংশ্লিষ্ট নয় সে সমস্ত বিষয়ে সরকার যেগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারেন, সেগুলো যেন অবিলম্বে সরকারের পক্ষ থেকে বাস্তবায়িত করা হয়। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে- এর মধ্যে সুপারিশের অনেক কিছুই আছে যেগুলো সরকারি নির্দেশ, এমনকি অফিস অর্ডার দিয়েও বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেগুলো যেন সরকার দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেন। এ দুটো বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত্য কমিশনের সঙ্গে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনোরকম ভিন্নমত নেই এবং আলোচনার মধ্য দিয়ে যখনই ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আমরা সেটা সরকারকে অবহিত করেছি।

Julay

আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করেছি, সাংবিধানিক বিষয়গুলোতে অনেক বিষয়ে ঐক্যমত আছে, কিছু বিষয়ে ভিন্ন মত আছে। এই সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে বাস্তবায়নের একটি আইনি ভিত্তি প্রদান এবং বাস্তবায়নের পথ নির্দেশ করার জন্য আমরা আমাদের তৃতীয় সুপারিশে কীভাবে এগুলোকে বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হওয়া যায়, সে বিষয়ে বেশকিছু সুপারিশ করেছি।

এর আগে দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’ বাস্তবায়নের সুপারিশমালা হস্তান্তর করেছে কমিশন।

জেবি