images

জাতীয়

ঝকঝকে হাতিরঝিলের ‘বেহাল দশা’

আব্দুল হাকিম

২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৫৫ পিএম

  • মূল পরিকল্পনায় ফিরিয়ে আনার তাগিদ
  • সেনাবাহিনীর সময় রক্ষণাবেক্ষণ ভালো ছিল
  • মাসখানেকের মধ্যে মূল সংস্কার শুরু হবে
  • আবর্জনা ও আগাছা সৌন্দর্য নষ্ট করছে
  • জনসাধারণের চলাচলে ঝুঁকি বেড়েছে
  • লেকের পানি কালচে ও দুর্গন্ধযুক্ত

একসময় রাজধানীর প্রাণবন্ত বিনোদনকেন্দ্র ছিল হাতিরঝিল। ঝকঝকে রাস্তা, পরিষ্কার জলরাশি, আধুনিক আলোকসজ্জা এবং মনোরম পরিবেশ। কিন্তু দায়িত্বহীনতা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং অব্যবস্থাপনার কারণে নগরবাসীর প্রিয় স্থানটি এখন ভাঙাচোরা রাস্তা, দুর্গন্ধ ও নিরাপত্তাহীনতার জন্য পরিচিত হয়ে ওঠেছে। নগরবাসীর চলাচলের স্বাচ্ছন্দ্য এখন হুমকির মুখে। হাতিরঝিলের নান্দনিকতা এখন কেবলই অতীত স্মৃতি। 

হাতিরঝিল প্রকল্প উদ্বোধন হয় ২০১৩ সালে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে তৈরি এই প্রকল্প ছিল রাজধানীর অন্যতম সফল নগরায়ণ উদ্যোগ। লেক, সেতু, উড়ালসড়ক, ফুটপাথ, জলাধার—সব কিছুই পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল। কিন্তু সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধান শেষ হয়ে রাজউকের হাতে দায়িত্ব যাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় অবনতি। শুরুতে সামান্য ত্রুটি দেখা দিলেও সময়ের সঙ্গে তা ভয়াবহ রূপ নেয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাতিরঝিলের চারপাশের রাস্তা এখন যেন গর্তের ফাঁদে পরিণত হয়েছে। বৃষ্টির কিংবা শুকনো উভয় মৌসুমেই একই দুরবস্থা। কোথাও পিচ উঠে গেছে, কোথাও পাথর বেরিয়ে পড়েছে। বৃষ্টির পানি জমে গর্ত ঢেকে যায়, ফলে মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার কিংবা রিকশা—যানবাহন চলাচল হয়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এই পথে চলাচল করে দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে।

H1

ফার্মগেট থেকে তেজগাঁও হয়ে রামপুরা পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটারের এই সড়ক এক সময় শহরের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ও মনোরম পথ হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু এখন তা খানাখন্দে ভরা। রাত নামলেই আলো না থাকার কারণে পুরো এলাকা অন্ধকারে ঢেকে যায়, সুযোগ নেয় ছিনতাইকারীরা। লেকের পানি কালচে হয়ে দুর্গন্ধ ছড়ায়, আশপাশে জমে থাকা আবর্জনা আর আগাছায় সৌন্দর্যের কোনো ছাপ আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

রাজউকের হাতিরঝিল ব্যবস্থাপনা অফিসের পাশেই এখন অব্যবস্থাপনার চিত্র। ভবনের সামনে সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটুপানি জমে থাকে। ভেতরে সিঁড়ির নিচে কুকুর ঘুমায়, রিসেপশনে কেউ থাকে না। ভবনটি মূলত গাড়ির গ্যারেজ ও পার্কিং স্পেস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। একজন অফিস সহকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এখানে তেমন কোনো প্রশাসনিক কাজ হয় না। কর্মকর্তারা মতিঝিল অফিস থেকেই কাজ করেন।’

এদিকে, হাতিরঝিলের একসময়ের জনপ্রিয় ওয়াকওয়ে ও পার্কগুলোও এখন পরিত্যক্ত। কোথাও ভাঙা বেঞ্চ, কোথাও ভাঙা টাইলস, কোথাও ঘাসে ঢেকে গেছে হাঁটার পথ। তরুণদের আড্ডার জায়গা এখন নোংরা ও অরক্ষিত। রাতের বেলা পুরো এলাকা নিস্তব্ধ, কেবল মাঝে মাঝে মোটরসাইকেলের শব্দ বা ছিনতাইকারীদের আনাগোনা।

H2

স্থানীয় বাসিন্দা বেলার হোসেন বলেন, ‘এক সময় এই জায়গাটা এত সুন্দর ছিল যে, সন্ধ্যার পর পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসতাম। এখন দুর্গন্ধে দাঁড়ানোই যায় না। রাস্তার গর্তে দুর্ঘটনা ঘটে প্রায়ই, আর রাতে আলো না থাকায় ছিনতাই বেড়েছে। বছরের পর বছর মেরামত হচ্ছে না।’ সেনাবাহিনীর হাতে থাকাকালে এমন অবস্থার কথা কেউ ভাবতেও পারত না বলে জানান এলাকার বাসিন্দারা। ভাঙা রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন চালকরা। প্রাইভেটকার চালক দেলায়ার হোসেন বলেন, ‘এখন এই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালানো মানেই যুদ্ধ করা। চাকা গর্তে পড়ে যায়, গাড়ির নিচের অংশ ঘষে যায় রাস্তায়। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা ডুবে যায়।’

মোটরসাইকেলচালক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমার এক বন্ধু গর্তে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। বৃষ্টিতে গর্ত ঢেকে যায় বলে বোঝাই যায় না কোথায় ফাঁদ।’
কুনিপাড়ার বাসিন্দা মাজহার আলী বলেন, ‘আগে সন্ধ্যায় এখানে লোকজন হাঁটত, শিশুরা খেলত, এখন কেউ আসতে চায় না। দুর্গন্ধ, আলো নেই, নিরাপত্তাহীনতা। পুরো এলাকা পরিত্যক্ত মনে হয়।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী জামাল উদ্দীন বলেন, ‘সেনাবাহিনীর সময়ে হাতিরঝিল ছিল পরিচ্ছন্ন ও শৃঙ্খলাপূর্ণ। রাজউক দায়িত্ব নেওয়ার পর রাস্তা ভাঙা, আলো নিভে যাওয়া, আবর্জনা জমা—সবই শুরু হয়েছে। এখন এমন অবস্থা, রাতে কোনো নারী একা হাঁটতে পারে না।’

H5

বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, হাতিরঝিলের লেকের পানিও এখন অস্বচ্ছ ও দুর্গন্ধযুক্ত। চারপাশে ভাসমান আবর্জনা, পলিথিন আর প্লাস্টিক জমে রয়েছে। এর ফলে জলজ প্রাণী কমেছে, লেকের পানি কালচে হয়ে গেছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, লেকের পানি বিশুদ্ধ রাখতে নিয়মিত বর্জ্য পরিশোধনের কোনো ব্যবস্থা নেই, ফলে দূষণ বাড়ছে। এটি সাময়িক পদক্ষেপ, স্থায়ী সমাধান আসবে না যতক্ষণ না প্রকল্পটির জন্য আলাদা রক্ষণাবেক্ষণ কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়।

বুয়েটের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ইশরাত ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এমন বড় প্রকল্পগুলো টিকিয়ে রাখতে হলে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ বাজেট থাকতে হয়। আমাদের দেশে বেশির ভাগ অবকাঠামো প্রকল্প উদ্বোধনের পরই অবহেলায় পড়ে যায়। হাতিরঝিলও সেই ধারার ব্যতিক্রম নয়। এই ধরনের উন্নয়ন কেবল নির্মাণে সীমাবদ্ধ থাকলে তা টেকসই হয় না। রক্ষণাবেক্ষণ কাঠামো ও জবাবদিহি থাকতে হয়, না হলে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। ঠিক সেটাই হচ্ছে।’

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এটা এখন সিটি করপোরেশনের অধীনে আছে, যদিও অবোকাঠামোগত দিকগুলো রাজউক দেখভাল করে। এখন এগুলো এভাবে থাকছে, কারণ তাদের দায়বদ্ধতা নেই, কোনো জবাদিহিতা নেই। যদি বলি বিআরটিসি, বিআরডিএ, বিআরডিসি, সিটি করপোরেশন কোনো সরকারি জায়গায় দায়বদ্ধতা নেই। ফলে এমন হচ্ছে, কোনো সুরহা হচ্ছে না। এখন দরকার জবাদিহিতা। দায়িত্ব অবহেলার কারণে কোনো কর্মকর্তার চাকরি হারাতে হচ্ছে, এটার কোনো নজির বাংলাদেশে নেই। যদি জবাদিহিতা আর দায়বদ্ধতা অথবা চাকরি হারানোর ভয় থাকত তাহলে এই ধরনের অবহেলা করত না।’

H6

তিনি আরও বলেন, ‘জবাদিহিতা আর আইনের শাসন না থাকার কারণে এমনটা হচ্ছে। তাদের তো আগে স্বচ্ছ হতে হবে। যেহেতু এটা সিটি করপোরেশনের অধীনে তাই তাদেরকেই এই দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হতো। কিন্তু তারা দায়িত্বে অবহেলা করছে। এখন উচিত দায়িত্বে অবহেলা করার কারণে তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা। তাছাড়া এসব কখনো ঠিক হবে না, এটাই হলো বড় সমস্যা।’

তবে নগরবিদরা বলছেন, সমস্যা কেবল মেরামতে সীমাবদ্ধ নয়—এটি মূলত ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা। রাজউকের হাতে অসংখ্য প্রকল্প থাকলেও তাদের তদারকি ও জনবল সীমিত। হাতিরঝিলের মতো সংবেদনশীল এলাকা রক্ষণাবেক্ষণে আলাদা কর্তৃপক্ষ বা করপোরেশন গঠন করা উচিত ছিল। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে ‘হাতিরঝিল ম্যানেজমেন্ট অথরিটি’ গঠন করতে হবে। আর সেখানে রাজউক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, পুলিশ, পরিবেশ অধিদফতর ও নাগরিক প্রতিনিধি থাকতে হবে।

পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, রাজউক হাতিরঝিলকে রাজস্বভিত্তিক প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করে মূল পরিকল্পনা ও হাইকোর্টের নির্দেশনা থেকে সরে এসেছে। ফলে সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই এলাকার রক্ষণাবেক্ষণ নিয়মিত ও টেকসই হওয়া প্রয়োজন ছিল, কিন্তু সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং অবকাঠামো ব্যবস্থাপনায় এখন কোনো শক্ত নিয়ন্ত্রণ নেই। পয়ঃবর্জ্য ও আবর্জনা ফেলার ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, যা হাতিরঝিলের সৌন্দর্য ও নগরবাসীর ব্যবহারের উপযোগিতা নষ্ট করছে।

H3

পরিকল্পনাবিদদের মতে, হাতিরঝিলের জন্য আলাদা ম্যানেজমেন্ট অথরিটি বা সমন্বিত তদারকি কাঠামো প্রয়োজন, যেখানে সরকার, সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সম্মিলিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। তারা মনে করেন, নেকলেসম প্রকৃতির অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করে প্রকল্পটিকে তার মূল পরিকল্পনায় ফিরিয়ে আনা জরুরি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এখন হাতিরঝিলের তত্ত্বাবধায়ন রাজউকের অধীনে রয়েছে। রাজউকই এটি টেক কেয়ার করছে। হাতিরঝিল একটি বিশেষজ্ঞ এলাকা হিসেবে সামগ্রিক ও বিশেষায়িত পরিকল্পনা, কার্যকর ব্যবস্থাপনা এবং সুনির্দিষ্ট রক্ষণাবেক্ষণ দরকার ছিল। কিন্তু রাজউকের পরিচালনায় এখানে অনেক ক্ষেত্রে উদাসীনতা দেখা গেছে। তারা অনেক সময় অর্থনৈতিক লাভ বা অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশে এমন কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, যা হাইকোর্টের নির্দেশনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে মূল পরিকল্পনার বাস্তবায়ন গুরুতরভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। এ ধরনের বিশেষায়িত এলাকার ক্ষেত্রে সবকিছু একত্রে মিশিয়ে শুধু আর্থিক ব্যয় ও জনপ্রিয়তার নামে মানুষের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা উপযুক্ত নয়। এখানে নিয়মিত সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের কোনো স্থায়ী কার্যক্রম নেই, কার্যকর কন্ট্রোল মেকানিজমও দুর্বল। রাজউক সামগ্রিকভাবে এই এলাকাটিকে কাঙ্ক্ষিতভাবে ম্যানেজ করতে পারছে না।’

আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘এক পর্যায়ে আলোচনা হয়েছিল— হাতিরঝিলের জন্য কি আলাদা কোনো ডেভেলপমেন্ট অথরিটি গঠন করা যেতে পারে কি না। এমন বিশেষ এলাকার জন্য আলাদা উদ্দেশ্য ও নীতিমালা থাকা উচিত। কিন্তু বর্তমানে রাজস্বভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি সিটি করপোরেশন বা ক্যান্টনমেন্টসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ ছাড়াই রাজউককেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনার দিকে ধাবিত করেছে। অথচ এই প্রকল্পটি যদি সরকার, সিটি করপোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সম্মিলিতভাবে তদারকি করে, তবে হাতিরঝিল তার সৌন্দর্য ও কার্যকারিতা বজায় রাখতে পারত।’

H4

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘হাতিরঝিলের অবকাঠামোসংক্রান্ত দায়িত্ব বর্তমানে রাজউকের অধীনে রয়েছে, আর আইনগত বিষয় এবং ট্রাফিক সম্পর্কিত বিষয়গুলো দেখভাল করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্বাভাবিকভাবে এখানকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। তবে ভাঙাচুরার মতো অবকাঠামোগত দায়িত্বগুলো রাজউক পালন করবে। কিছু কাজ হয়েছে, তবে তা এলোমেলো এবং সুশৃঙ্খলভাবে নয়।’

এই পরিকল্পনাবিদ বলেন, ‘বর্তমানে যা প্রয়োজন তা হলো রাজউক এবং সিটি করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকরভাবে হচ্ছে না। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব ঢাকা মহানগর পুলিশের। যেহেতু হাতিরঝিল একটি বিনোদনের কেন্দ্র, এখানে জনসাধারণের চলাচল বেশি হওয়ায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও তৎপর হতে হবে। নিরাপত্তা জোরদার করা প্রয়োজন, যাতে নাগরিকরা নিরাপদে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে এই স্থান ব্যবহার করতে পারে। সার্বিকভাবে, অবকাঠামোগত রক্ষণাবেক্ষণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং নিরাপত্তা— সব মিলিয়ে হাতিরঝিলকে টেকসই ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করতে হলে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’

H8

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, হাতিরঝিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং নিরাপত্তার দায়িত্ব তাদের। নগরবাসীর নিরাপদ চলাচলের জন্য পুলিশ আরও তৎপর হবে এবং জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

ডিএসসিসির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বৃষ্টির পানিতে রাস্তার সংস্কারকাজ দীর্ঘস্থায়িত্ব হারায়। বর্ষাকালে সড়কে জমে থাকা পানি মেরামতকাজের স্তর নষ্ট করে দিয়ে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত করে, ফলে প্রলম্বিত বৃষ্টির সময়ে কোনো সংস্কার ও উন্নয়নকাজ শুরু করলে তা টেকসই হওয়ার নিশ্চয়তা থাকে না। বর্ষার কারণে চলমান টেন্ডার প্রক্রিয়া ও মাঠপর্যায়ের প্রস্তুতিও মন্থর ছিল। যদিও টেন্ডার অনুমোদন শেষ হয়েছে, আবহাওয়ার অনিশ্চয়তার ফলে কাজ জোরদার করা সম্ভব হয়নি।

ডিএসসিসি বলছে, বর্ষা শেষে এখন সড়ক সংস্কারের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হওয়ায় খানা-খন্দ ও ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু প্রকল্প মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেয়েছে এবং প্রয়োজনীয় বাজেট ও কারিগরি পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। খুব শিগগিরই বিভিন্ন ওয়ার্ডে পুনর্নবীকরণ কার্যক্রম শুরু হবে।

H7

এদিকে রাজউক বলছে, টেন্ডার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে সড়ক সংস্কারকাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। বর্ষাকালের কারণে কাজের অনুকূল পরিবেশ না থাকায় পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নেও দেরি হয়। তবে বর্তমানে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে থাকা খানা-খন্দ মোকাবিলায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামত কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কিছু স্থানে অস্থায়ীভাবে রিপেয়ারিং করে চলাচলে সাময়িক স্বস্তি নিশ্চিত করা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ জানায়, পুরো এলাকায় একটি পূর্ণাঙ্গ পুনর্নবীকরণ বা ‘প্যাসিভ রিনোভেশন’ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হচ্ছে, যাতে সড়কগুলো দীর্ঘমেয়াদে টেকসই থাকে। সংশ্লিষ্ট কাজের প্রস্তাব ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে গৃহীত হয়েছে এবং প্রক্রিয়াগত অনুমোদনও সম্পন্ন হয়েছে। সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোলে আগামী এক মাসের মধ্যেই সংস্কারের মূলকাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সুপারিনটেন্ডিং (সিভিল) ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ মোজাফফর উদ্দিন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘টেন্ডার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় সংস্কারকাজ সময়মতো শুরু করা সম্ভব হয়নি। বর্ষাকালের কারণে কাজ শুরুর উপযুক্ত পরিবেশও ছিল না। তবে বর্তমানে বৃষ্টিপাত কমে আসায় আমাদের পরিকল্পনা হলো শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর খানা-খন্দগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কার করা। এরই মধ্যে কিছু স্থানে অস্থায়ীভাবে রিপেয়ার করা হয়েছে। এখন আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ পুনর্নবীকরণে (প্যাসিভ রিনোভেশন) যেতে যাচ্ছি। কাজের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া গেছে এবং সবকিছু ঠিক থাকলে মাসখানেকের মধ্যেই সংস্কারকাজ শুরু করতে পারবো।’

এএইচ/জেবি