মো. আব্দুস সবুর (লোটাস)
১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০২:১১ পিএম
গত সেপ্টেম্বর মাসে এন আর ফ্যাশনে চাকরি শুরু করেন খালিদ হাসান সাব্বির। এক মাস ১৪ দিনের মাথায় মিরপুর শিয়ালবাড়ী এলাকায় কেমিক্যাল গুদামে আগুন লাগার পর থেকে তার আর কোনো খোঁজ মেলেনি। সাব্বিরের বাবা মনিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ, হাসপাতাল ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা কেউ ছেলের সন্ধান দিতে পারছে না। গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএনএ স্যাম্পল দিয়েছি। কিন্তু এখনও ছেলেকে শনাক্ত করা যায়নি। হাসপাতালে লাশগুলোর যে অবস্থা তাতে সাধারণভাবে ছেলেকে চিনতে পারা সম্ভব নয়।
আজ শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে শিয়ালবাড়ী এলাকায় ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যদের কাছে আকুতি করে ছেলের খোঁজ চাইছিলেন মনিরুল। বরগুনা সদর এলাকার বাসিন্দা তিনি।
সাব্বিরের বাবা বলেন, আমার ছেলে এলাকায় একটি এনজিওতে চাকরি করত। সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে ঢাকায় এসে এখানে চাকরি শুরু করে। আর গত ১৪ অক্টোবর রাতে ফোনে জানানো হয় আমার ছেলের কাজের জায়গায় আগুন লেগেছে। এটা শোনার পর চোখ দিয়ে অনেক সময় আর কিছু দেখিনি। চোখে শুধু ছেলের ছবি ভাসছিল।
তিনি আরও বলেন, আগুন লাগার পর ছেলের ফোনে রাত ১১টা পর্যন্ত কল যায়। কিন্তু তারপর ফোন বন্ধ পাই। হাসপাতালে ৬টা লাশের মধ্যে একটা লাশ সাব্বিরের বলে কিছুটা ধারণা করতে পারি; কিন্তু সঠিকভাবে বলতে পারছি না। কারণ লাশগুলোতে চেহারা বা মাংস বলে সেভাবে আর কিছু নেই। তবে ছেলে লম্বা ছিল বলে একটু ধারণা করছি। তারপর ডিএনএ স্যাম্পল দিলাম; কিন্তু তারা এখনও শনাক্ত করতে পারেনি সাব্বিরের লাশ।
মনিরুল বলেন, এভাবে আর কারো ছেলে যেন মারা না যায়। দেশে এত আন্দোলন হলো তারপরও এভাবে কেনো মানুষ মারা যাবে। নিখোঁজ ছেলের লাশ বা যা কিছু হোক দ্রুত চাই।
পুলিশ, হাসপাতাল ও ফায়ার সার্ভিসের কেউ আমার ছেলের সন্ধান দিতে পারছে না। যে যা বলছে তাই করতেছি কিন্তু ছেলের খোঁজ পাচ্ছি না বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন মনিরুল ইসলাম।
সরেজমিনে শিয়ালবাড়ী এলাকায় দেখা যায়, ওই কেমিক্যাল গুদাম থেকে এখনও ধোঁয়ার মতো কিছু উড়ছে। এ ছাড়া পুরো এলাকায় কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। ক্রাইম এরিয়া হিসেবে গুদামের আশেপাশের রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। প্রবেশপথের মুখে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা অবস্থান করছেন। এ সময় উৎসুক জনতাকে দূরে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, এই অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জন মারা গেছে। বরাবরের মতো এবারও অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির পরই জানা গেল রাসায়নিক গুদাম ও পোশাক কারখানা কোনোটারই অগ্নিনিরাপত্তা সনদ ছিল না। কারখানা ভবনটির কোনো জরুরি বহির্গমন পথ ছিল না। অনেককে ভবনটি থেকে জানালা ভেঙে বের হতে হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আব্দুল আলীম বলেন, আগুন পুরোটাই নিভে গেছে। কিন্তু গুদামের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল থাকায় সেগুলো থেকে ফ্রেয়ন উড়ছে। এগুলো মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর। আমরা এখানে আছি যাতে সাধারণ ও উৎসুক মানুষ গুদামে না প্রবেশ করে।
এএসএল/এফএ