মোস্তফা ইমরুল কায়েস
০১ জুলাই ২০২২, ১১:০০ এএম
রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারির সেই জৌলুস আর নেই। ২০১৬ সালে ১ জুলাই জঙ্গি হামলার পর চিত্র পাল্টে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন আবাসিক ভবন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। থাকছেন ভবনটিতে মালিকের পরিবার।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) সকাল সাড়ে ৮টা। রিকশা থেকে নেমে ৭৯ নম্বর সড়ক ধরে দেখা কিছুদূর এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ল পুলিশ সদস্যরা ডিউটি করছেন। এই সড়ক ধরে সামনে এসে শেষ মাথায় গেলে চোখে পড়ল একটি লোহার গেট। গেট মাড়িয়ে ভেতরে যাওয়ার চেষ্টাকালে দরজার সামনে যেতেই নিরাপত্তাকর্মী আটকে দিলেন। বললেন, সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ। বাসাটিতে বর্তমানে মালিকের পরিবার বসবাস করছে। তারা চান না, সেই দিনের ঘটনা স্মরণ করে লোকজনের সেখানে ভিড় করুক।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, আলোচিত হামলার ছয় বছরে সকাল সাড়ে ৭টায় নিহতদের স্মরণে সকালে চার দেশের রাষ্ট্রদূত ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অস্থায়ী বেদীতে। পরে দুই দেশের রাষ্ট্রদূত গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।
হামলার সময় ভবনের সামনের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেটি মেরামত করে ঝাউ ফুলের গাছ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাইর থেকে দেখলে বোঝার শক্তি নেই এই সেই হলি আর্টিজান। যেটি জঙ্গি হামলায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল।
এই বেকারিতে সেই সময় আসতেন অভিজাত এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তি ছাড়াও বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা। বিকেল হলে সরগরম হয়ে উঠতো এটি। ভালো মানের খাবার পাওয়া যেত। এছাড়াও লেকের পাশে নান্দনিক পরিবেশ হওয়ায় ক্রেতারা এসে ভিড় করতেন ও আড্ডা দিতেন বলে জানালেন পাশে লেক ভিউ ক্লিনিকের এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মচারী।

মালিক এখন দেশের বাইরে। বাসাটি এখন আবাসিক হিসেবে ব্যবহার করছেন মালিক পক্ষের লোকজন বলে জানিয়েছেন ভবনটি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি।
তারা আরও জানালেন, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে সেটি মেরামত করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে মালিককে। মালিকের পরিবার সেই ঘটনা মনে করতে চান না। ভবনটিকে ভিন্নভাবে সাজিয়ে তারা বসবাস করতে শুরু করেছেন। তবে প্রতিবছর এই দিনে দেশি-বিদেশি নিহত নাগরিকদের শ্রদ্ধা জানাতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত আসেন। গত দুই বছর করোনার কারণে এখানে শ্রদ্ধা নিবেদন বন্ধ ছিল।

সকাল থেকে অবস্থান করে যা দেখা গেল, চার দেশের রাষ্ট্রদূত (জাপান, ইটালি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত) ও কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া কেউ আসেনি। তবে আর আসার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন সেখানে দায়িত্বরত পুলিশের কর্মকর্তারা।
গুলশান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসান জানালেন, সেখানে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ। এককভাবে কেউ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারবে না। তবে কারও সঙ্গে যৌথভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে চাইলে পুলিশের অনুমতি নিয়ে সেটি করতে হবে।
বেকারিটিতে হামলার দিন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে উৎসব জনতা এলেও আজ তেমনটি দেখা যায়নি। ভবনের সামনের ক্লিনিকের ফাঁকা জায়গায় একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গাড়ি সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছে। গেটে দুই নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ হামলার পর ৬ মাস বেকারি বন্ধ ছিল। কর্মচারীদের ছুটি দেওয়া হয়েছিল। তবে হামলার সময় বেঁচে যাওয়া সাত কর্মচারীকে নতুন করে শুরু করা হলি আর্টিজানে চাকরি দেওয়া হয়েছে। তারা চাকরি পেয়ে বেশ খুশি। গুলশান দুই এলাকায় নতুনভাবে শুরু করা হলি আর্টিজান বেকার এটা এখন পুরাতন ক্রেতারা আসেন। সেভাবে তারা কোনো প্রচার করেন না।
একজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ হামলা তাদের বিক্রি বাট্টা ও ক্রেতা পাওয়াতে কোনো প্রভাব ফেলেনি। আগের মতোই তারা স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করেন। তবে সেদিনের ঘটনা এখনও তাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। জঙ্গিদের হাত থেকে প্রাণে রক্ষা পাওয়া এই কর্মী জানান, এখনও তারা বেঁচে আছেন এটাই সৃষ্টিকর্তার কাছে বড় শুকরিয়া। তিনি আরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তার মালিকের প্রতি।
এমআইকে/এইউ