images

জাতীয়

এক সপ্তাহ আগেই প্রস্তুত বসিলা ৪০ ফিটের পশুর হাট

মোস্তফা ইমরুল কায়েস

৩০ জুন ২০২২, ০৯:২৬ পিএম

‘বাঁশের খুঁটিগুলো সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মাটিতে পুঁতে দিতে হবে। এই, সিরিয়ালগুলো ঠিক রাখিস। হাতে তো আর বেশি সময় নেই। একদিন পরই গরু আসা শুরু করবে। তখন কিন্তু হাটের কোনোকিছু ঠিক করা সম্ভব হবে না। সন্ধ্যা নামার আগেই সব কাজ শেষ করতে হবে।’

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) মোহাম্মদপুর এলাকার বসিলা ৪০ ফিট হাটের শেষ প্রান্তে আসামাত্রই এমন কথা কানে ভেসে আসে। পরে জানা গেল, কথাগুলো যিনি বলছিলেন, তিনি পশুর হাটটির ইজারাদারের লোক।

রিকশা থেকে নামতে গিয়ে আরও চোখে পড়ল- কাঁচা রাস্তার দুই পাশে প্লট করে রাখা জমিতে সারিবদ্ধভাবে সাজানো বাঁশের খুঁটি। সঙ্গে সাদা কাগজে নম্বর বসিয়ে একটি করে লেমিনেটিং করা কাগজ বসানো হয়েছে। তবে এখনও চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজ।

Bosila Qurbanir Hat

হাটের প্রস্তুতির ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় কয়েকজন জানান, আগামী ৬ জুলাই থেকে এই হাটে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হবে। যদিও আগামীকাল শুক্রবার (১ জুলাই) থেকেই বিক্রেতারা এই হাটে গরু নিয়ে আসা শুরু করবেন। তবে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আগামী ৬ জুলাই থেকে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হবে। এ জন্য এক সপ্তাহ আগেই হাটের শেষ সময়ের প্রস্তুতি চলছে।

বসিলা হাউজিংয়ের উত্তর পাশের ৪০ ফিট এলাকায় প্রতিবছর উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীনে কোরবানির এই হাট বসে। বিগত বছরগুলোয় এই হাটের ডাক উঠেছিল প্রায় আড়াই কোটির বেশি। তবে গত বছর থেকে এর পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। ২০২১ সালে এই হাটের ডাক হয় ৭০ লাখ টাকায়। আর এবার ১০ লাখ কমে হয়েছে ৬৯ লাখ।

Bosila Qurbanir Hat

হাট সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আনুষ্ঠানিক বিক্রি শুরু হওয়ার সপ্তাহখানেক আগেই সব প্রস্তুতি শেষ করতে চান তারা। তবে আগামীকাল শুক্রবার (১ জুলাই) থেকেই এখানে গরু আসা শুরু হবে। কারণ, প্রতিবছর এক সপ্তাহ আগে থেকেই এই হাটে গরু আসে এবং নির্ধারিত সময় পর্যন্ত বেচাকেনা চলে।

হাট ঘুরে দেখা যায়, কোরবানির পশুর এই হাটের পশ্চিমে তাবু দিয়ে বানানো হয়েছে হাসিল আদায়ের প্যান্ডেল। এই প্যান্ডেলটি বানানো হয়েছে নদীর সীমানা পিলারকে সংযুক্ত করে। তবে অনেকেই হয়তো কাঁচা রাস্তা ধরে গাড়ি টেনে সোজা বরাবর চলে যেতে পারেন- এই আশঙ্কায় হাটের শেষ প্রান্তে বালু দিয়ে ভরা বস্তায় বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। সঙ্গে মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠেছে দু’-একটি ভাতের হোটেল। পাশাপাশি আছে চা, পানসহ আরও কিছু খাবারের দোকান।

Bosila Qurbanir Hat

এ সময় রুবেল নামে এক ব্যক্তিকে নদীর তীরে কয়েকজনকে হাতের ইশারায় কিছু একটা বুঝিয়ে দিতে দেখা যায়। পরে জানা গেল, তারা এই হাঁটে গরু নিয়ে আসবেন। এ কারণে আগাম এসেছেন। আর রুবেল হাট ইজারাদারের লোক হওয়ায় তাদের নানা বিষয় বুঝিয়ে দিচ্ছেন।

ঢাকা মেইলের সঙ্গে কথা হলে রুবেল জানান, প্রতিবছর বসিলার এই হাটে নদীর ধরে নৌকা ও ট্রলারে করে হাজার হাজার গরু আসে। কারণ, বসিলা ব্রিজ হয়ে চলে আসা রাস্তাগুলো দিয়ে হাউজিংয়ে বসবাসরত ব্যক্তিরা কোনো গরু ঢুকতে দেন না। এ জন্য অধিকাংশ গরু লাউতলা ও হাটের শেষ মাথার নদীপথ দিয়ে হাটে প্রবেশ করে। আর হাট শুরুর পরদিন থেকে এর সীমানাও বাড়তে থাকে। গরুর সংখ্যা বেশি হলে হাটের আয়তন চলে যায় বসিলা ব্রিজের হাউজিং এলাকা পর্যন্ত।

Bosila Qurbanir Hat

সার্বিক বিষয়ে মোহাম্মদপুরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ আসিফ ঢাকা মেইলকে বলেন, এবার এই হাট তারা কয়েকজন মিলে ৬০ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন। গত বছরও তারাই পেয়েছিলেন।

বিগত বছরগুলোতে হাটের দাম বেশি উঠলেও এবার কম কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে বসিলা হাউজিং এলাকায় খালি জায়গাগুলোতে নতুন নতুন ভাবন উঠেছে। ফলে জায়গাগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে গরু রাখার জায়গাও কমে আসছে। এসব কারণে হাটের দাম কমে আসছে।

রাজধানীতে ২০টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫টির ইজারা চূড়ান্ত করেছে দুই সিটি করপোরেশন। এরমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) তাদের ১০টি অস্থায়ী হাটের ইজারা প্রক্রিয়া শেষ করেছে। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও (ডিএনসিসি) পাঁচটি হাটের ইজারা প্রক্রিয়া শেষ করেছে। বাকি পাঁচটি হাটের বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রতিবারের মতো এবারও দুই সিটি করপোরেশনের আওতায় থাকা গাবতলী ও ডেমরার সারুলিয়ার স্থায়ী হাটেও বিক্রি হবে কোরবানির পশু।

এমআইকে/আইএইচ