মো. আব্দুস সবুর (লোটাস)
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:২৬ পিএম
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টা। কারওয়ান বাজার থেকে জাহাঙ্গীর গেটের দিকে দ্রুত গতিতে যানবাহন ছুটছে। রাস্তা পার হওয়ার জন্য ফার্মগেটের নতুন ফুটওভার ব্রিজের দিকে গেলাম। ব্রিজে ওঠার জন্য চলন্ত সিঁড়ি থাকলেও সেটি সচল নয়। তাই বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে ওপরে উঠলাম। কিন্তু ওপরে উঠে মনে হলো, এটি নামেই দৃষ্টিনন্দন ফুটওভার ব্রিজ—বাস্তবে যেন ছোটখাটো একটি বাজার। জামা-কাপড়, কসমেটিকস, ব্যাগ, চশমা—কী নেই সেখানে! হকারদের হাঁকডাকে যেমন ক্রেতারা আকৃষ্ট হচ্ছেন, তেমনি জমছে ভিড়ও।
পথচারীদের অভিযোগ, সাধারণ মানুষের চলাচলের জায়গায় এসব হকার। প্রশাসন আসলে কী কাজ করে সেটা বুঝি না। চাঁদাবাজ গোষ্ঠীর কাছে ফুটওভার ব্রিজ দখল কেউ যেন দেখছে না।

সরজমিনে দেখা যায়, ব্রিজের চলন্ত সিঁড়িগুলো কাজ করছে না। ব্রিজের ওপর প্রায় ৬০টি ছোট ছোট দোকান বসেছে। যার মধ্যে রয়েছে গার্মেন্টস সামগ্রী, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, কসমেটিকস, ঘর সাজানোর নানা উপকরণ, সানগ্লাস, শিশুদের খেলনা, ওজন মাপার মেশিন ও খাবারের দোকান। শুধু ফার্মগেট ফুটওভার ব্রিজেই নয়, মিরপুর, নতুন বাজার, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন ফুটওভার ব্রিজে কমবেশি দোকান দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকায় পথচারীদের নিরাপদ রাস্তা পারাপারের জন্য দৃষ্টিনন্দন ফুটওভার ব্রিজ তৈরি করা হয়। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ফুটওভার ব্রিজটি আনুষ্ঠানিকভাবে পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ডিএনসিসির অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড। নির্মাণ ব্যয় বহন করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এটি ১৩২ ফিট লম্বা ও প্রায় ১৮ ফুট চওড়া। ব্রিজটিতে রয়েছে ছয়টি পকেট, যেখানে দাঁড়িয়ে নিচের রাস্তাসহ আশপাশের দৃশ্য দেখার সুযোগ রাখা হয়। এছাড়া পরে নগরবাসীর সুবিধার্থে বসানো হয় চলন্ত সিঁড়ি।
হকারের হাঁকডাক ও জটলা, চলাচলকারীদের ভোগান্তি
এসব ফুটওভার ব্রিজে বিভিন্ন ধরনের হকার পণ্য বিক্রির জন্য হাকডাক দিয়ে থাকে। এতে পণ্য কেনার চেয়ে উৎসুক জনতার ভিড়ই বেশি হয়। ফলে সাধারণ চলাচলকারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অনেক সময় মোবাইল-মানিব্যাগও খোয়া যায়।
ফার্মগেট ব্রিজের দোকানদার রউফ ইসলাম বলেন, আমরা খুব ছোট ব্যবসা করি। অল্প টাকায় নিজেদের পণ্য বিক্রি করতে নানা ধরনের কথাবার্তা বলতে হয়। আমরা নিজেরাও চাই বেশি মানুষ যাতে আমাদের পণ্য দেখে, তাহলে বিক্রিও বেশি হয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহমেদ নাফিস বলেন, আমরা নিয়মিত ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাফেরা করি। সকালে ভিড় না থাকলেও বিকেল বা সন্ধ্যায় এসব দোকানের কারণে ব্রিজের ওপর ভিড় হয়। এতে সময় যেমন বেশি লাগে, তেমনি ভয়ও লাগে যে কিছু খোয়া যায় কিনা।
নাসরিন বেগম নামের একজন গৃহিণী বলেন, ছোট মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে আসার জন্য নিয়মিত ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু ব্রিজের ওপর দোকান হওয়ায় বিভিন্ন সময় যাতায়াতে অসুবিধায় পড়তে হয়। এসব জায়গা শুধু চলাচলের জন্য হওয়া উচিত।

মাসে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকার চাঁদাবাজি
ফুটওভার ব্রিজের দোকান থেকেও স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতারা নিয়মিত চাঁদা আদায় করেন। প্রতিটি দোকান থেকে গড়ে ৭০ থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয় বলে জানা গেছে। এতে শুধু ফার্মগেট ফুটওভার ব্রিজ থেকে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা তোলা হয়। যেটির মাসিক হিসেবে প্রায় দেড় লাখ টাকার বেশি চাঁদাবাজি হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফার্মগেট ফুটওভার ব্রিজের একজন ব্যবসায়ী বলেন, এখন যে অবস্থা তাতে টাকা দিলেও কেউ আর দোকান পাচ্ছে না। কারণ সবার ব্যবসা ভালো, কেউ জায়গা ছাড়তে চায় না। প্রতিদিন ব্যবসা অনুসারে ৭০ থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়।
আরেকজন ব্যবসায়ী বলেন, অনেক সময় কারো ব্যবসা খারাপ গেলে সে নিজেই পরিচিত কাউকে নিয়ে এসে পাশের জায়গায় নতুন ব্যবসা শুরু করে। এতে করে জায়গা ধরার এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা দ্রুতই এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সিটি করপোরেশনের নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
এআর