বোরহান উদ্দিন
২৭ জুন ২০২২, ০৭:৪১ পিএম
মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ঘাট থেকে মাঝিরকান্দি ও কাওড়াকন্দি রুটে ৮৭টির মতো ছোট লঞ্চ নিয়মিত চলাচল করতো। যাত্রীচাপের কারণে খুব একটা সময় ঘাটে অপেক্ষা করতে হতো না লঞ্চগুলোকে। কিছু সময় পরই ছেড়ে যেতো নিজ নিজ গন্তব্যে। যাত্রী বেশি থাকায় অনেক সময় অতিরিক্ত মানুষ নিয়েই ছুটতে হতো লঞ্চগুলোকে। কিন্তু পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে বদলে গেছে চিরচেনা সেই দৃশ্য।
যে ঘাট সবসময় মানুষের পদচারণায় সরগরম থাকতো, সেই স্থানটি এখন অনেকটা নীরব। দুই দিন ধরে যাত্রী খরায় ভুগছে নৌযানগুলো। যাত্রী সংকটের কারণে প্রতিটি লঞ্চ ধারণ ক্ষমতা চেয়ে প্রতি ট্রিপে ২০ জন করে যাত্রী কম নিচ্ছে। কমপক্ষে আগামী ঈদ পর্যন্ত এভাবে ভাগাভাগি করে সবাই টিকে থাকার চেষ্টা করছেন।
ধারণ ক্ষমতার চেয়ে যাত্রী কম নেওয়া, একদিন যারা যাত্রী পরিবহন করার সুযোগ পেয়েছে পরের দিনে সেখানে অন্য লঞ্চকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে লঞ্চঘাট সূত্রে জানা গেছে।
সোমবার দুপুরে মাওয়া-মাঝিরকান্দি রুটে চলা বাবুল ঢাণি নেভিগেশনের করণীক মো. মামুন ঢাকা মেইলকে বলেন, 'রোববার যাত্রী তাও ছিলো আজকে (সোমবার) আরও কমেছে। সামনে পরিস্থিতি কেমন হবে জানি না। তবে ঈদ পর্যন্ত পরিস্থিতি যাই হোক আমরা টিকে থাকতে চাই।'
মামুন আরও বলেন, প্রতিটি লঞ্চের যাত্রী ধারণক্ষমতা ১২০ জন। কিন্তু সবাই যেন যাত্রী পায় সেজন্য সব লঞ্চে ২০ জন করে কম যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। আবার সিরিয়াল করে দেয়া হয়েছে বাইরোটেশন সবাই ঘুরে ঘুরে যেন ট্রিপ দিতে পারে। সেভাবেই চলছে।’
ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাওয়া ঘাট থেকে দুই রুটে চলা একেকটি লঞ্চ দীর্ঘসময় বসে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছে। লঞ্চের সামনে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি কতজন যাত্রী উঠছে তার হিসাব করছেন।
নির্ধারিত সংখ্যার বেশি যাত্রী ওঠায় এক লঞ্চের সঙ্গে পরের সিরিয়ালে থাকা লঞ্চের লোকদের বাকবিতণ্ডায় জড়াতেও দেখা গেছে।
দীর্ঘদিন ধরে মাওয়া ঘাট থেকে ছোট লঞ্চ ও স্পিডবোটে যাত্রীরা এপার ওপার যাতায়াত করতেন। ফেরিতে সময় বেশি লাগায় নদীপারের জন্য এই দুই নৌযানকেই প্রমত্তা পদ্মা পারের জন্য বেছে নিতেন মানুষ। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এই নৌযানের সঙ্গে জড়িতদের চোখেমুখে অন্ধকার নেমে এসেছে। এজন্য বেঁচে থাকতে ভিন্ন কোনো রুটে চলার সুযোগ চেয়ে লঞ্চ মালিকদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জামালপুর থেকে উত্তরাঞ্চলের দিকে যাওয়ার একটা রুটে লঞ্চ চলার সুযোগ আছে বলে মালিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এছাড়া ঢাকার দোহারের মৈনটঘাট থেকে রাজবাড়ী জেলায় একটি রুটে লঞ্চ চলার সুযোগ আছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক লঞ্চ মালিক ঢাকা মেইলকে বলেন, 'দুটি রুট ছাড়াও সরকার যদি কোনো রুট বের করে আমাদের সুযোগ দেয় তাহলে কোনোভাবে সবার আয়ের সুযোগ থাকবে। না হলে বিপদ হয়ে যাবে। সব লঞ্চ না হলেও মৈনটঘাটে ২০টির মতো লঞ্চ চলতে পারবে।'
এদিকে সেতু চালুর পরও অনেককে লঞ্চে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। তাদের বেশিরভাগই শরীয়তপুরের যাত্রী। ঢাকা থেকে সরাসরি পুরোপুরি বাস সার্ভিস চালু না হওয়ায় এবং মাওয়া প্রান্তে কোনো স্টপেজ থেকে গাড়ি চলার ব্যবস্থা না থাকায় পদ্মাপারের জন্য তারা লঞ্চযাত্রাকেই বেছে নিয়েছেন বলে জানান। যদিও শরীয়তপুর থেকে রোববার কিছু বাস ঢাকায় চলাচল শুরু করেছে।
রোববারের তথ্য অনুযায়ী, লঞ্চঘাটে কমসংখ্যক যাত্রী নিয়ে সারা দিনে মাত্র ১২টি লঞ্চ চলাচল করেছে। দুই রুটে স্পিডবোটও তুলনামূলক কম চলেছে। যাও চলেছে তারমধ্যে অনেকে আবার সেতু দেখার জন্য এসেছেন।
অনেক যাত্রী আবার টোলপ্লাজার কাছ থেকে গাড়িতে উঠার চেষ্টা করেন। সকাল থেকেই টোলপ্লাজার পাশে যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে যে পরিমাণ যাত্রী ছিল, সেই তুলনায় পরিবহন ছিল কম।
শরীয়তপুরের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, টোলপ্লাজার কাছ থেকে দূরপাল্লার পরিবহনে সেতু পার হওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সম্ভব হয়নি। তাই লঞ্চে পার হতে হচ্ছে।
বিইউ/এমআর