images

জাতীয়

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদে থাকার কোনো নৈতিক ভিত্তি নেই: অধ্যাপক সামিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩১ আগস্ট ২০২৫, ১১:০২ পিএম

দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেছেন, গত এক বছরে মাজার, বাউল, নারী ও আদিবাসীদের ওপর হামলা হয়েছে। সম্প্রতি নুরুল হক নূরের ওপর যে নির্মম আক্রমণ হয়েছে, এর পর আর এই সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদে থাকার কোনো নৈতিক ভিত্তি নেই।

রোববার (৩১ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ‘সারাদেশে শিক্ষকদের ওপর নিপীড়ন, নাগরিক কর্মসূচিতে হামলা এবং নুরুল হক নূরের ওপর সেনা-পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে’ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক আয়োজিত প্রতিবাদী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

সমাবেশে বক্তারা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সভা করতে গিয়ে হামলা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সামিনা লুৎফা বলেন, এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো নিরাপত্তা দেয়নি। সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। পুরো বছরজুড়ে শ্রমিক, তথ্য আপা, ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। তখন কাউকে কথা বলতে দেখা যায়নি। অথচ এখন সরকারের উপদেষ্টারা নিন্দা জানাচ্ছেন, যেখানে তাঁদের দায় ছিল মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সে দায়িত্ব পালনে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন। এই ব্যর্থতার দায় তাঁদের নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, কিছু রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী মহল আইনশৃঙ্খলার অবনতির সুযোগ নিয়ে দেশকে অস্থির করে তুলছে। সরকার তা নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিদিন আমাদের জীবন নিয়ে রাস্তায় বের হতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আমরা শঙ্কিত। অবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে।

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, চব্বিশ ছিল কথা বলার স্বাধীনতা, কিন্তু এখন মানুষ কথা বলতে গিয়ে বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে। পাঁচ আগস্টের পর একটি গোষ্ঠী নিজেদের ক্ষমতায়িত মনে করছে এবং দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মতপ্রকাশের পরিসর সংকুচিত হচ্ছে। এজন্যই বলি, দেশের ঘাড়ে ভূত চেপেছে—এই ভূত আমাদের সরাতে হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক নাসির উদ্দীন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নূরের ওপর সেনা ও পুলিশের হামলা, বুয়েটের ছাত্রদের ওপর আক্রমণ—এসব রাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়। অন্তর্বর্তী সরকারকে এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

শিক্ষকদের ওপর নিপীড়নের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিক্ষকদের নামে অহেতুক মামলা, হয়রানি, রুমে তালা দেওয়া, চাকরিচ্যুতির ঘটনা ঘটছে। এই প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সুনির্দিষ্টভাবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কার্জনকে যেভাবে নিগৃহীত করা হয়েছে আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। প্রশাসনকে শিক্ষকদের নিরাপত্তায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাহমিনা খানম বলেন, মব ভায়োলেন্সের কারণ খুঁজে বের করে সমাধান করতে হবে। না হলে বাংলাদেশ সুস্থ পরিবেশে ফিরতে পারবে না।

সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের কাজী মারুফুল ইসলাম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজলী সেহরীন ইসলাম ও সহকারী অধ্যাপক মার্জিয়া রহমান।

এসএইচ/এআর