images

জাতীয়

পদ্মা সেতু চালুর পরও কেন স্পিডবোট-লঞ্চে পারাপার?

বোরহান উদ্দিন

২৬ জুন ২০২২, ০৮:৩৫ পিএম

‘সেতু তো হইছে ভালো কথা। কিন্তু আমরা শরীয়তপুর যাবো সেই বাস তো নাই। আবার ব্রিজ দিয়ে যাওয়ারও তো সুযোগ নাই। এইজন্য আগের মতো লঞ্চে মাঝিরকান্দি যাইতেছি।’- পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পরও কেন লঞ্চে যেতে হচ্ছে এমন প্রশ্ন রাখতেই কথাগুলো বলছিলেন হাবিব মিয়া। শরীয়তপুরের নড়িয়ার এই বাসিন্দা সেতু হওয়ায় একদিকে যেমন খুশি তেমনি এখনও শরীয়তপুরে যাওয়ার বাস না পাওয়ায় তার আছে অসন্তোষও।

রোববার (২৬ জুন) দুপুরে মাওয়ার লঞ্চঘাটে কথা হয় হাবিব মিয়ার সঙ্গে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে আশপাশের আরও অনেকে এগিয়ে আসেন নিজেদের কষ্টের কথা জানাতে।

যদিও প্রায় দেড় যুগ পর রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় শরীয়তপুর পৌর বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি বাস চলাচল শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু পেরিয়ে প্রথম বাসটি ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পৌঁছায় বেলা ১১টার দিকে। তবে এই তথ্যটি এখনও সবাই না জানায় সেতু চালু হওয়ার পরও এই রুটে চলা যাত্রীদের বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হচ্ছে।

এছাড়া এখনও এই রুটে চালু হওয়া বাসের কাউন্টার কোথায় বসানো হয়েছে, না আদৌ বসানো হয়নি সে সম্পর্কেও বলতে পারছেন না যাত্রীরা।

lonch1

তথ্যমতে, একসময় ফেরিতে পদ্মা নদী পার হয়ে শরীয়তপুর থেকে ঢাকায় বাস চলাচল করত। কিন্তু ফেরিতে অতিরিক্ত সময় লাগা, যাত্রীদের দুর্ভোগসহ নানা কারণে লোকসানের মুখে ২০০৪ সালে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ করে দেন মালিকরা।

দীর্ঘদিনের ভোগান্তি শেষে আজ শরীয়তপুরের যাত্রীরা বাসে করে পদ্মা সেতু পার হওয়ার সুযোগ পেয়ে যাত্রী-চালক সবাই বেশ উৎফুল্ল।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হালিম হাওলাদার যাবেন শরীয়তপুরে। বললেন, সেতু হওয়ার পরও আমাদের আপাতত কষ্ট রয়ে গেছে। শুনতেছি ২৮ তারিখ থেকে বাস চলা শুরু করবে। সেই পর্যন্ত তো ঘরে বসে থাকা যাবে না।

পদ্মা সেতু মাওয়া প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে ওপারের জাজিজার নওডোবা এলাকায় গিয়ে মিশেছে। যেখান থেকে কাছে মাদারীপুরের শিবচর।

কিন্তু শরীয়তপুরে যেসব মানুষ যাবেন তাদের আপাতত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কারণ ঢাকা থেকে এখনও শুরু হয়নি সরাসরি বাস চলাচল। অন্যদিকে টোল প্লাজার আশপাশে কোনো বাসে ওঠারও সুযোগ নেই। কারণ অন্য রুটের গাড়ি এদিকের যাত্রীদের পরিবহনও করছে না।

ঘাটে দুটি রুটের যাত্রীদের সঙ্গে কথা হয়। কাওড়াকান্দি ও মাঝিরকন্দি রুটের লঞ্চগুলোও ছাড়ছে বেশ বিলম্ব করে। কারণ যাত্রী সংকট।

lonch3

সেলিমা রহমান নামের একজন কলেজ শিক্ষার্থী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আগে যাত্রীর ভিড় বেশি থাকায় একটু পর পর লঞ্চ ছেড়ে যেত। এখন দুই ঘণ্টায়ও লোক হচ্ছে না। কেউ আবার লঞ্চে উঠে বিলম্ব হওয়ায় আবার স্পিডবোটে চলে যাচ্ছেন। আমাদের দাবি দ্রুত শরীয়তপুরে সরাসরি যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হোক।’

লঞ্চের মালিক ও স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেতু উদ্বোধনের পরদিন থেকেই যাত্রী সংকট তৈরি হয়েছে। সামনে রুট বন্ধ করা ছাড়া উপায় থাকবে না।

কাওড়াকান্দি রুটে চলা একটি লঞ্চের কেরানী মো. মামুন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘যাত্রীর সংকট। আমরা সামনে কী পরিস্থিতির মুখে পড়বো জানি না। এভাবে চলা মুশকিল হয়ে যাবে।’

এদিকে পাশের স্পিডবোট ঘাটেও এমন চিত্র দেখা গেছে। যারা ওপার থেকে আসছেন বা এপার থেকে যাচ্ছেন সবার একই সমস্যা। শরীয়তপুরে যাওয়ার এখনও বিকল্প ব্যবস্থা হয়নি। তাই যত দ্রুত হবে ততই উপকৃত হবেন এই পথের যাত্রীরা।

lonch4

শহীদুল ইসলাম নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীয়তপুর রুটে যাওয়ার ভালো ব্যবস্থা করা গেলে এখন স্পিডবোটে করে যেতে হতো না। কারণ সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই টাকা বেশি খরচ হলেও অল্প সময়ে এটাতে যাওয়া আসায় শান্তি আছে।’ যদিও অনেককে স্পিডবোটে করে পদ্মা সেতু এলাকা ঘুরে দেখার জন্য যেতে দেখা গেছে।

শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহম্মেদ তালুকদার ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৮টায় আমাদের শরীয়তপুরবাসীর যোগাযোগে নবদিগন্তের সূচনা হলো। বেলা ১১টা পর্যন্ত ১২টি বাস ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। শরীয়তপুর থেকে অন্তত ৩০০ বাস চলাচল করবে। এখানকার পরিবহন ব্যবসায়ীরা এমন প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।’

বিউই/জেবি