নিজস্ব প্রতিবেদক
২৮ আগস্ট ২০২৫, ০৫:২৫ পিএম
সীমান্তে বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের হাতে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) ঢাকায় চার দিনব্যাপী ৫৬তম সীমান্ত সম্মেলন শেষে দুই দেশের যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সম্মেলনে বাংলাদেশি, ভারতীয় ও বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার (পুশ ইন) ঘটনাতেও উদ্বেগ প্রকাশ করে বিজিবি।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ আশ্বাস দিয়েছে, ভারতে থাকা অবৈধ বাংলাদেশিদের সমঝোতার মাধ্যমে গৃহীত প্রক্রিয়া মেনে ফেরত পাঠানো হবে।
সম্মেলনে নিজ নিজ পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এবং বিএসএফ মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরী।
যৌথ দলিলে যা আছে
আলোচনা শেষে যৌথ দলিলে স্বাক্ষর করেন উভয় দেশের কর্মকর্তারা। পরে বিজিবি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যৌথ দলিলের বিষয়ে জানায়।
ক) বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্তে বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিক কর্তৃক নিরীহ বাংলাদেশি নাগরিকদেরকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা ও আহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। জবাবে বিএসএফ মহাপরিচালক সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রাতের বেলায় টহল জোরদার করে সীমান্ত হত্যার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সে ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি পূনর্ব্যক্ত করেন।
উভয় পক্ষ যৌথভাবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ, সীমান্তের অলঙ্ঘনীয়তা সম্পর্কে প্রেষণা প্রদান এবং অপরাধীদের আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম প্রতিরোধের মাধ্যমে এ ধরনের আক্রমণ, নির্যাতন ও হামলার ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়।
খ) বিজিবি মহাপরিচালক বিএসএফের মাধ্যমে অবৈধভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি, ভারতীয় নাগরিক ও বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের বাংলাদেশে পুশইনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণের আহ্বান জানান।
বিএসএফ মহাপরিচালক ভারতে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদেরকে পারস্পরিকভাবে সম্মতির ভিত্তিতে ফেরত পাঠানোর আশ্বাস দেন।
গ) সীমান্ত দিয়ে মাদক, অস্ত্র-গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক দ্রব্য, স্বর্ণ, জাল নোট এবং অন্যান্য চোরাচালান প্রতিরোধে ‘সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’র গুরুত্ব তুলে ধরে উভয় পক্ষ পাচার ও পাচারকারীদের ‘রিয়েল-টাইম’ তথ্য বিনিময় এবং অধিক সতর্কতার মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে সতর্ক ও দৃঢ় থাকার বিষয়ে একমত হয়।
ঘ) উভয় পক্ষ সীমান্তবর্তী জনগণকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান, মানবপাচার, সীমান্ত স্তম্ভ উপড়ে ফেলা ও অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত অপরাধ থেকে বিরত রাখার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে একমত হয়। সার্বিকভাবে উভয় পক্ষ সীমান্তের অলঙ্ঘনীয়তা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি জানায়।
ঙ) উভয় পক্ষ সীমান্ত শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে পূর্ব অনুমোদন ছাড়া কোনো উন্নয়নমূলক কাজ না করার পাশাপাশি সীমান্তবর্তী এলাকায় চলমান উন্নয়নমূলক কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার বিষয়ে একমত হয়। এছাড়া যৌথ নদী কমিশন অনুমোদিত নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ সহজতর করা এবং সীমান্তবর্তী অভিন্ন নদীগুলোতে অননুমোদিত কাজ বন্ধ রাখার ব্যাপারে একমত হয়।
চ) ‘কানেক্টেড বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় তিন বিঘা করিডরের মাধ্যমে দহগ্রামকে সংযুক্ত করার জন্য অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার বিষয়ে বিএসএফ মহাপরিচালক ভারতের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/সংস্থার কাছে উপস্থাপন করে তা সমাধানের আশ্বাস দেন।
আরও পড়ুন: সীমান্তে ১১ জনকে পুশইন করল বিএসএফ
ছ) আন্তঃসীমান্তে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী অবস্থান করলে সে ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি পুনর্ব্যক্ত করে উভয় প্রতিনিধিদল। এ বিষয়ে ‘রিয়েল-টাইম’ তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে একমত হন।
জ) বিজিবি মহাপরিচালক ফেনীর মুহুরীর চর এলাকায় স্থায়ী সীমান্ত পিলার নির্মাণ এবং ইছামতি, কালিন্দী, রায়মঙ্গল ও হারিয়াভাঙ্গা নদী এলাকায় সীমান্ত রেখা নির্ধারণের কাজ সম্পন্নের ব্যাপারে জোর তাগিদ দেন। বিএসএফ মহাপরিচালক এ বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/সংস্থার কাছে উপস্থাপন করে তা সমাধানের আশ্বাস দেন।
ঝ) উভয় পক্ষ কোনো ধরনের আকাশসীমা লঙ্ঘন না করার বিষয়ে একমত হয়। ভবিষ্যতে যাতে কোনো ভুল বোঝাবুঝি না ঘটে সেজন্য পূর্বনির্ধারিত ফ্লাইট সম্পর্কে ‘রিয়েল-টাইম’ তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে পরস্পরকে অবহিত করার বিষয়ে সম্মতি জানায়।
ঞ) উভয় পক্ষ নিজ নিজ দেশের গণমাধ্যমে পরস্পরবিরোধী বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার /গুজব ছড়িয়ে সীমান্তে যাতে কোনো উত্তেজনা সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে উভয় দেশের গণমাধ্যমকে পরামর্শ দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়।
উভয় মহাপরিচালক সম্মেলনের ফলাফলে ‘সন্তোষ’ প্রকাশ করেন। তারা সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
এআর