images

জাতীয়

আলো ফুটলেই স্বপ্নের সেতুতে চলাচল, উচ্ছ্বসিত দক্ষিণাঞ্চলবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ জুন ২০২২, ১১:৩৭ পিএম

সব প্রতীক্ষার অবসান ঘুচিয়ে স্বপ্ন ছুঁয়েছে পদ্মার বুক চিরে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো সেতু। জমকালো আয়োজনে উদ্বোধনও করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবমিলিয়ে বহু বাধা পেরিয়ে শনিবার (২৫ জুন) বিশ্বের ইতিহাসে অদম্য জয়ের নতুন এক গল্প লিখেছে বাংলাদেশ। যার সাক্ষ্য দিয়েছে দেশীয় গণমাধ্যম ছাড়াও খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোও।

দক্ষিণাঞ্চলের এক-তৃতীয়াংশ জেলার (২১ জেলা) সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ছাড়াও কৃষিখাত সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে কর্মস্থানের সৃষ্টিসহ আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের দ্বার খুলতে চলেছে বহুল প্রত্যাশিত এই সেতু। ফলে অদম্য বাংলাদেশের নতুন এই অগ্রযাত্রায় দেশবাসীর সঙ্গে উচ্ছ্বসিত দক্ষিণাঞ্চলবাসীও।

তাদের ভাষ্য- স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালুর হওয়ায় ফরিদপুর থেকে উৎপাদিত কৃষিপণ্য রাজধানী ছাড়াও অন্যত্র সহজেই বাজারজাত করা যাবে। সেই সঙ্গে এই অঞ্চলে গড়ে উঠবে নানা ধরনের শিল্প-কারখানা। পাশাপাশি নদী পারাপারে আর কোনো ঝুঁকি না থাকায় যাতায়াতসহ আবাসন ও পর্যটন খাতেও বিপুল পরিবর্তন ঘটবে।

Padma Bridge

তবে পদ্মা সেতুর সবচেয়ে বড় অবদান হিসেবে ‘নিরাপদ যাত্রা’কেই প্রাধান্য দিচ্ছেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। তাদের মতে, এই সেতুর ফলে উত্তাল ঢেউয়ের মাঝে জীবনঝুঁকি নিয়ে পদ্মা পরাপারের প্রবণতা কমে আসবে। সেই সঙ্গে দূর হবে লঞ্চডুবির মতো বিভীষিকাময় দুর্ঘটনা।

এদিকে, রোববার সকাল ৬টা থেকে পদ্মা সেতুতে গাড়ি চলাচল শুরু হওয়া নিয়ে উচ্ছ্বাসিত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা। তাদের স্বস্তি- পদ্মা সেতুর ফলে তাদের ভোগান্তি শেষ হচ্ছে। সেই সঙ্গে পরিবহন খাতেও সুদিন ফিরবে।

এ বিষয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে খুলনা থেকে পেঁয়াজ, আদাসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য ঢাকায় পরিবহনকারী ট্রাকচালক মোরশেদ হোসেন বলেন, ‘২০ বছর ধরে ট্রাক চালাই। পদ্মা পাড়ের দুই ঘাটেই পারাপারের জন্য অপেক্ষায় কেটেছে অর্ধেক সময়। এমন সময়ও গেছে, তিন-চার দিন ঘাটে বসে ছিলাম। পদ্মা পার হতে পারিনি। তখন না খেয়েও কাটাতে হয়েছে। আমাদের সেই দুর্ভোগের ভয়াবহ দিন আর আসবে না ভাবলেই আনন্দ লাগছে।’

Padma Bridge

অন্যদিকে, রাজধানী থেকে পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের জন্য নতুন নতুন সব পরিবহন সড়কে নামাতে প্রস্তুত বাস-মালিকেরা। তাদের সবার অপেক্ষা রাত পোহানোর। ভোরের আলো ফুটলেই গন্তব্যে ছুটবে এসব পরিবহন।

সবমিলিয়ে দেশবাসীর সঙ্গে নতুন এক ভোরের প্রত্যাশায় দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ।

উল্লেখ্য, শনিবার সকাল ১০টার কিছু আগে ঢাকার তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টার যোগে মাওয়া পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। পরে সেখানে সুধী সমাবেশে যোগ দিয়ে বক্তব্য রাখেন সরকারপ্রধান। এরপর পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধন খাম ও সিলমোহর প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করে মোনাজাতে অংশ নেন।

এ দিন দুপুর ১২টায় পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর টোল দিয়ে গাড়িযোগে পদ্মা সেতুতে ওঠেন সরকারপ্রধান। পদ্মা সেতুতে উঠে ১৪ মিনিট দাঁড়ান তিনি। এ সময় সেখানে সেনা ও বিমান বিমান বাহিনীর কসরত দেখেন। পরে জাজিরার উদ্দেশে রওনা হন।

পথে দুপুর ১২টা ৩৮ মিনিটে জাজিরা প্রান্তে উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করে আবারও মোনাজাত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সেখান থেকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ির উদ্দেশে সড়কপথে যাত্রা করে সেখানে আওয়ামী লীগের জনসভায় অংশ নেন সরকারপ্রধান।

/আইএইচ