images

জাতীয়

টিয়ারগান কেড়ে নিয়ে কনস্টেবলকে দেওয়া হয় চাইনিজ রাইফেল

মোস্তফা ইমরুল কায়েস

০৫ আগস্ট ২০২৫, ০৬:৪৮ পিএম

৫ আগস্ট ২০২৪। তখন দুপুর ১২টা। ছাত্র-জনতা বিভিন্ন দিক থেকে চানখারপুল হয়ে কেন্দ্রীয়  শহীদ মিনারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তাদেরকে বাধা দেয় পুলিশ এবং সরাসরি গুলি করতে থাকে। গুলি করা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে অন্যতম কনস্টেবল সুজন, যিনি সরাসরি চাইনিজ রাইফেল দিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি করেন এবং সেখানে মারা যাওয়াদের   বেশিরভাগই তার গুলিতে। 

কনস্টেবল সুজনের চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার সেই দৃশ্য সরাসরি দেখেছেন সেই সময় ঘটনাস্থলে থাকা সাংবাদিক আজহার লিমন। আজহার লিমন তখন সময় টেলিভিশনে কাজ করতেন। 

৫ আগস্ট সকাল থেকে আজহার লিমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। হঠাৎ দুপুর ১২টার দিকে চানখারপুলের দিকে ব্যাপক গুলির শব্দ শুনতে পান। এরপর সেখানে ছুটে যান অন্য সহকর্মীদের নিয়ে। 

সেই ঘটনার আদ্যোপ্রান্ত তুলে ধরে আজহার লিমন বলেন, ওইখানে গিয়ে যা দেখলাম, ছাত্র জনতা দুই দিক থেকে সেখানে ঢোকার চেষ্টা করছে। আর পুলিশ মেরে ফেলার জন্য গুলি করছে। সেখানে কাকে কাকে মারতে হবে তৎকালীন এতিরিক্ত কমিশনার আশরাফুজ্জামান ও এডিসি আকতার নামে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা দেখায় দিচ্ছিলো। সেখানে সুজন নামে এক কনস্টেবল ছিল। যে এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গণহত্যা মামলার আসামী। সেদিন তার হাতে প্রথমে ছিল টিয়ার গ্যাস মারার যন্ত্র। পরে তার হাত থেকে সেটি নিয়ে চাইনিজ রাইফেল তুলে দিলো এক পুলিশ সদস্য। হয়তো সে উৎসাহী বা সেটি চালানায় গুলি করে মেরে ফেলায় পারদর্শী ছিল। 

সেদিন মাঠে থাকা এই গণমাধ্যমকর্মী বলেন, আমি নিজেই দেখলাম, সুজন একজনকে গুলি করে মেরে ফেললো। এরপর সুজন বলছিল, যা (বিশ্রি একটা গালি) পড়ে গেছে। সেই যুবক গুলি খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে পড়ে যায়। সুজন গুলি করে বাচ্চাটাকে মেরে ফেললো। একটা কলা গাছকে কেটে ফেলে দিলে যেমন পড়ে যায় তেমনিভাবে সেই ছেলেটা মাটিতে পড়ে গেল। পরে তাকে ধরাধরি করে আন্দোলনকারীরা সরিয়ে নিচ্ছে। এরপরও সুজনের গুলি থামছিল না। এরপর দেখলাম, গুলি করার পর সুজন কার সঙ্গে যেনো ভিডিও কলে কথা বললো। গুলির দৃশ্য দেখে আমাদের খারাপ লাগছিল। কিন্তু তার মাঝে কোনো বিন্দুমাত্র অনুশোচনাবোধ দেখা যায়নি। 

সেদিন সকালে পুলিশ ছাত্রদের গুলি ও টিয়ারগ্যাস মারার জন্য খরচ করার ব্যাগে ভরে সেগুলো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে গিয়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন হলেন সাংবাদিক আজহার লিমন।

আজহার লিমন ঢাকা মেইলকে বলেন, এটা দেখে তো আমি ট্রমাটাইজ হয়ে ‍যাই। তখন আমি তাদের বলতেছিলাম, আপনারা এসব কী শুরু করলেন। এ কথা শুনে সেখানে আমার পাশে থাকা বিবিসি বাংলার আজাদ ভাই ও যমুনা টিভির মনিরুল ভাই আমাকে টেনে অন্য পাশে নিয়ে যান। তারা বলে, এখানে থাকার দরকার নাই। এরা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। 

আজহার লিমনের ভাষ্য, যে ব্যাগটি ধরে রাখছিল, আমার এসব কথা শুনে তার চোখ মুখ অন্যরকম হয়ে গেল। সে অন্যভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। এরপর আমরা শাহবাগের দিকে যাই। শাহবাগ থানার দিকে যাই। দেখি আর্মিরা ছাত্রদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। 

এমআইকে/ক.ম