ঢাকা মেইল ডেস্ক
০৫ আগস্ট ২০২৫, ০২:৩৪ পিএম
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের যে আগুন প্রথম জ্বলে উঠেছিল, তার আঁচ আমি দিয়েছিলাম। এটা কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না। বহুদিন ধরে আমাদের পরিকল্পনা ছিল এই স্থানটিকে আওয়ামী লীগ বিরোধীদের জন্য এক নিরাপদ আশ্রয়স্থলে রূপান্তরিত করার। আর ঢাকা থেকেই একটি সরকার বিরোধী অনলাইন সংবাদমাধ্যম চালুর সাহসী ভাবনাটিও ছিল আমার ও মারুফ মল্লিকের। মারুফ, যে তখন নির্বাসনে। সেই পোর্টালের নাম দেওয়া হয়েছিল বাংলা আউটলুক।
আমরা ঝুঁকি নিয়ে শক্তিশালী, যুগান্তকারী অনেক প্রতিবেদন করেছিলাম— সুইডেন বা মধ্যপ্রাচ্য থেকে নয়, সরাসরি ঢাকার মাটি থেকে। পরে বুঝলাম, এটি ছিল তারেক রহমানের অভিপ্রায় দেশের ভেতর থেকেই প্রতিরোধের কণ্ঠস্বর গড়ে তোলা। এক সময় আমাদের পুরো দলটি দি মিরর এশিয়া-তে যোগ দেয়।
বছরের পর বছর ধরে আমরা শেখ হাসিনার, বাংলাদেশের কসাই নামে পরিচিত তার বিরুদ্ধে এই প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছি, রাজধানীর ছায়ায় থেকেই। আর সেই প্রতিরোধের জন্য আমাকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে।
কখনোই স্থায়ী কোনো চাকরি পাইনি। পুলিশ নেকড়ের মতো আমাকে তাড়া করেছে। আমার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে জ্ঞানী, মেধাবী, সম্ভাবনাময়। কিন্তু শুধু আমার সন্তান হওয়ার অপরাধে বারবার কারাবরণ করেছে।
শিক্ষার্থীদের আয়োজিত বৈষম্যবিরোধী প্রেস কনফারেন্সে পুলিশকে ঢুকতে না দেওয়ার ধারণা আমার মাথায় আসে তার আগের দিন। আমি নিজের চোখে দেখেছিলাম কীভাবে প্রেস ক্লাবের সামনেই রিজভী ভাইকে দিবালোকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, সাইদ খানের সামনে থেকে। সেই দৃশ্য আমাকে নাড়িয়ে দেয়। তখন সিদ্ধান্ত নিই— আর না। আমি ডিআরইউ সভাপতি’র হস্তক্ষেপ চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি তখন জুয়া খেলায় ব্যস্ত ছিলেন। তিনি দাঁড়ালেন কেবল তখনই, যখন আমি দাঁড়ালাম।
আর যখন আমি উঠলাম, আমার মনে পড়লো আমার বাবার কথা— ‘কপিল মুমুর শেষ কাজ’ নামে যে গল্পটা আমি কখনও ভুলিনি। গল্পটা বোধ হয় এখন ইন্টারমিডিয়েটে পাঠ্য। এক বৃদ্ধ মানুষ, যিনি শেষবার নিজের ভিটেমাটি রক্ষার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। সেদিন আমি দাঁড়িয়েছিলাম ঠিক তার মতোই ভূমির জন্য নয়, আমাদের সন্তানদের জন্য।
আমি জানতাম এর পরিণতি কী হতে পারে। জানতাম ভালো কিছু হবে না। তবুও আমি দাঁড়িয়েছিলাম। কারণ, যখন তুমি স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে দাঁড়াও, তখন নিরাপত্তার হিসাব করো না; বলিদানের পথ বেছে নাও।
আমি জানি যদি আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরে আসে, তারা আমাকে তখন জীবিত রাখবে! আশা করি তখনও টিকে থাকব।
লেখক: সাংবাদিক