মোস্তফা ইমরুল কায়েস
০৫ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৪৭ এএম
উত্তরায় এক ব্যক্তির প্রাইভেটকার চালাতেন আরাফাত। ভালোই চলছিল জীবন। বৌ ও ছেলেকে নিয়ে ভাড়া বাসায় দিন কাটছিল তার। কিন্তু গত বছরের জুলাইয়ে চলা ছাত্র-জনতার আন্দোলন তার জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে। আন্দোলনে না গিয়েও গুলিতে পা হারিয়ে আরাফাতের এখন ঠিকানা হয়েছে গ্রামে। আগের মতো আয়; কোনোমতে চলছে সংসার।
সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা মেইলকে এসব কষ্টের কথা বলছিলেন পাবনার মনোহরপুরের আরাফাত।
আরাফাত বলেন, আমি এক ব্যক্তির প্রাইভেট কার চালিয়ে সংসার চালাতাম। কিন্তু এখন তো পারি না। আর এই অবস্থায় কি কেউ কাজে রাখে নাকি! তাই পা কেটে ফেলার পর সপরিবারে গ্রামে ফিরে আসতে হলো। গ্রামে এসে ভাগ্যিস জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া এক লাখ টাকা পেয়েছিলাম; ফলে সেটা দিয়েই একটা ছোট মুদির দোকান চালাচ্ছি। কিন্তু কয় টাকা আর আয় হয়। কোনোমতে সংসার চলছে।
তিনি আরও বলেন, আমি আহত হওয়ার পর যার গাড়ি চালাতাম সেই মালিক বেশ সহযোগিতা করেছে। কিন্তু গত বছর থেকে সেই মালিকের ব্যবসাও খুব ভালো চলছে না। অপারেশনে পা কেটে ফেলার পর বেসরকারি সংস্থা ব্রাক থেকে কৃত্রিম পা লাগানো হয়েছে। সেটির মাধ্যমে এখন হাঁটাচলা করতে পারি; কিন্তু ভারি কোনো জিনিস তুলতে পারি না।
গত বছর প্রথম দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ১৮ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত ঢাকার উত্তরা, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, রামপুরা এবং শনিরআখড়া এলাকায় সংঘর্ষে গুলিতে আহত হয়ে ১৭৬ জন হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তার মধ্যে ছয়জনের পা কেটে ফেলতে হয়েছিল। তাদের একজন ছিলেন আরাফাত।
সেদিন তার সঙ্গে যা ঘটেছিল
আরাফাত জানান, গত বছরের ১৮ জুলাই উত্তরায় তার কাজ শেষ করে তিনি বাসায় ফিরছিলেন। যেহেতু সড়ক ছিল ছাত্র-জনতার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে রণক্ষেত্র, ফলে তিনি অলিগলি মাড়িয়ে বাসায় ফিরছিলেন। তবুও রক্ষা হয়নি। সামনে থেকে এসে গুলি লাগে তার পায়ে। সেই সময় তার থেকে কিছু দূরে পুলিশ সদস্যরা দাঁড়িয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে ছিল যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা। তাদের সবার হাতে বিভিন্ন অস্ত্র ছিল। তার ধারণা, হয় পুলিশ না হয় যুবলীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিনি আহত হয়েছেন।
সরকার ছাড়া আর কোনো সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে আরাফাত বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জুলাই ফাউন্ডেশনের এক লাখ টাকা দেয়ার পর স্থানীয় জামায়াতের নেতারা আমাকে দেখতে এসে ১০ হাজার টাকা দিয়েছিল। এছাড়া আর কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আমাকে কোনো সহায়তা করেনি। অনেক কষ্টে চলছে সংসার।
এমআইকে/এফএ