নিজস্ব প্রতিবেদক
০১ আগস্ট ২০২৫, ০৮:২৬ এএম
বাগেরহাটে চারটি নির্বাচনি আসন পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বাগেরহাট-৪ (শরণখোলা-মোড়েলগঞ্জ) আসনের তরুণদের অংশগ্রহণে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচনি এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। গত ৩০ জুলাই প্রকাশিত তালিকায় বাগেরহাটের ৪টি আসন থেকে কমিয়ে ৩টি আসন করার কথা জানানো হয়।
মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, বাগেরহাট-৪ আসন সবসময় অবহেলিত। আমাদের আসনটি বাদ দিয়ে আমাদেরকে বাগেরহাট-৩ আসনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করলে আমরা আরও বেশি বঞ্চিত হবো।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এক চোখের আলো হারানো রোমানুল ইসলাম বলেন, বাগেরহাট নিয়ে ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। শরণখোলা-মোড়েলগঞ্জকে পানিশমেন্ট এলাকা হিসেবে ব্যবহার করে সকল দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়, এগুলো নিয়ে কোনো সংস্কার নেই। কিন্তু বাগেরহাট-৪ আসনের মানুষেরা এমনিতেই সেবাবঞ্চিত তার উপরে আবার এরকম সিদ্ধান্ত নিলে ভোগান্তি চরমে পৌঁছাবে।
তিনি আরও বলেন, সিডর, আইলাসহ সকল ঘূর্ণিঝড়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের আসনের মানুষেরা, খরা মৌসুমে পানযোগ্য পানির সংকট, বর্ষা মৌসুমে পানিবন্দি হওয়া, বৃষ্টি নামলেই লোডশেডিং, চিকিৎসা সেবা না পাওয়া-সামান্য হাত পা কাটলেও ডাক্তারসহ বিভিন্ন সংকটের কারণে আমাদেরকে খুলনা-ঢাকায় রেফার করা হয়। আমাদের আসনকে বাদ দিয়ে তিন আসনে অন্তর্ভুক্ত করলে এই ভোগান্তি আরও বাড়বে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী নাইম বলেন, আমাদের আসনের মোড়েলগঞ্জ উপজেলায় ১৬টি, শরণখোলায় ৪টি ইউনিয়নের এত বড় সীমানা বেষ্টিত আসনকে বাদ দিয়ে শরণখোলা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের একটি উপজেলার সাথে এক করা এবং একটি আসন কমিয়ে ফেলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।
এসময় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ ঢাকা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী আমান উল্লাহ ফারাবি বলেন, আমাদের বাগেরহাটে সমুদ্র বন্দর রয়েছে, ইপিজেড রয়েছে। প্রয়োজনে মোংলা নিয়ে আলাদা আসন ঘোষণা করা হোক কিন্তু বাংলাদেশের বড় উপজেলাগুলোর একটি মোড়েলগঞ্জ এবং শরণখোলাকে নিয়ে গঠিত বাগেরহাট-৪ আসনকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র মেনে নেওয়া হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী রাকিব বলেন, মোংলা-মোড়েলগঞ্জ-শরণখোলা পর্যটন স্পটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ তিনটি উপজেলাকে নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা সরকার হাতে নিয়ে এগুতে পারে। তবে নির্বাচনী আসন করলে রামপাল, মোংলা, শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ সবার সংকট বাড়বে।
বাংলাদেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের গড় ভোটার ৪ লাখ ২০ হাজার ৫০০ হিসেবে বাগেরহাটের আসন কমিয়ে গাজীপুরে একটি আসন বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে হাস্যকর দাবি করে ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, শুধু বাগেরহাটে নয় অসংখ্য নির্বাচনী আসনে বাগেরহাটের চেয়ে ভোটার সংখ্যা কম এবং তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো তাহলে তাদের আসন কেন কমানো হলো না? সবাই দাবি তুলেছে গোপালগঞ্জ জেলাকে ভেঙে বিভিন্ন জেলার আসনগুলোতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সেটি না করে কেন বাগেরহাটের উপর নজর নির্বাচন কমিশনের? আমাদের ফেরির মাধ্যমে নদী পার হতে হয়, অনেকবার নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ, রাস্তা ভাঙাচোরা। ৪টি আসন থাকার পরও উন্নয়নের আলো পৌঁছায় না, তারপরও আমাদের সাথেই প্রহসন কেন?
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা দুই দফা দাবি জানিয়ে বলেন, নির্বাচন কমিশন আমাদের বাগেরহাটের মানুষের সাথে যোগাযোগ না করেই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাই নির্বাচন কমিশনকেই স্বউদ্যোগে ৪টি আসন পুনর্বহাল করতে হবে এবং আগামী নির্বাচনের পর কোনো সংসদ সদস্যকে নিজ আসন ব্যতীত ঢাকায় প্লট বা ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়া যাবে না কারণ তারা নিজ আসনের খোঁজ খবর না নিয়ে ঢাকায় এসে বসে থাকে। শুধুমাত্র সংসদ অধিবেশন বা গুরুত্বপূর্ণ সভায় যোগ দেয়ার জন্য গেস্ট হাউজে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে তবে ঢাকায় প্লট বা ফ্ল্যাট দেয়া যাবে না।
/এএস