images

জাতীয়

‘বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার সুযোগ রয়েছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩১ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৩ পিএম

বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার বিদ্যমান সম্পর্ক এখনও তার পূর্ণ সম্ভাবনার স্তরে পৌঁছায়নি, বিশেষ করে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে দায়িত্বপ্রাপ্ত দক্ষিণ আফ্রিকার হাইকমিশনার প্রফেসর অনিল সুকলাল। তিনি বলেন, এই সম্পর্কের মধ্যে যে সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষত বাণিজ্যে, তা আমরা এখনও কাজে লাগাতে পারিনি। কিন্তু এর ব্যাপক সুযোগ রয়েছে এবং উভয় দেশ যৌথভাবে কাজ করলে এ সম্পর্ক আরও দৃঢ় ও বিস্তৃত হতে পারে।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব)-এর সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। ডিক‍্যাবের সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান মামুনের সঞ্চালনায় মত বিনিময় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি এ কে এম মঈনুদ্দিন।

এসময় তিনি বলেন, আমার মনে হয়, সম্পর্কের ক্ষেত্রে উভয় দিকেই দৃশ্যমানতার ঘাটতি রয়েছে। আমরা জানি না একে অপরের বাজারে কী অফার রয়েছে। এই অজ্ঞতা থেকেই ব্যবসাগুলো পিছিয়ে পড়ে।

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া এবং ওষুধ শিল্পে সহযোগিতা বাড়াতে দক্ষিণ আফ্রিকার গভীর আগ্রহ রয়েছে জানিয়ে হাইকমিশনার বলেন, সরকার শুধু সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে পারে, কিন্তু অর্থনৈতিক সম্পর্কের মূল চালক হওয়া উচিত বেসরকারি খাত। এই পরিবেশ আমরা তৈরি করেছি, যদিও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ভিসা ইস্যু, যা আমরা সরল করতে কাজ করছি।

দক্ষিণ আফ্রিকায় দূতাবাস না থাকাকে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখলেও, বিষয়টি নিরসনে কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। ভিসা আবেদন গ্রহণে দিল্লি ও ঢাকার ভিএফএস-এর মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তির পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন হাইকমিশনার। এর ফলে আবেদন সংগ্রহ করে দিল্লিতে পাঠিয়ে তা প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, আমরা সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে কিছু অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেছি। এই বছর শেষ হওয়ার আগেই ফরেন অফিস কনসালটেশন হওয়া জরুরি। এটাই সম্পর্ক পর্যালোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক।

দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘ তিন দশকের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে হাইকমিশনার বলেন, আমরা আশা করছি, অক্টোবর কিংবা নভেম্বর মাসে পরবর্তী এফওসি অনুষ্ঠিত হবে। তখন যদি বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধি দল দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যায়, তাহলে একটি ছোট ট্রেড ডেলিগেশনও যেতে পারে। এতে করে চেম্বার পর্যায়ের সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, সমঝোতা স্মারকের খসড়া প্রস্তুত রয়েছে এবং এটি এই বছরের মধ্যেই চূড়ান্ত করার চেষ্টা চলছে। দুই দেশের ব্যবসায়িক চেম্বারগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশ্নে হাইকমিশনার বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় মাঝে মাঝে বিদেশি সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। তবে এটি একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর কাজ, যা সরকার অত্যন্ত কার্যকরভাবে দমন করে থাকে। বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে সরকার সচেতন এবং এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু আপনার দূতাবাসকেও আরও সক্রিয়ভাবে আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে কাজ করতে হবে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রায় ৪ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি একটি বড় জনগোষ্ঠী এবং এটাই আমাদের সম্পর্কের জন্য একটি বড় সুযোগ। বাংলাদেশের কৃষি খাতে দক্ষতা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিস্তৃত জমির সমন্বয়ে যৌথ উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে জানিয়ে হাইকমিশনার বলেন, কৃষি আমাদের জিডিপির মাত্র ২ শতাংশের সামান্য বেশি অবদান রাখে। আপনারা এই খাতে অত্যন্ত দক্ষ। আর আমাদের আছে জমি। আমি মনে করি, এই জায়গায় যৌথ বিনিয়োগের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার খনিজ ও খনিশিল্পে দক্ষতা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই খাতেও দুই দেশ পারস্পরিকভাবে কাজ করতে পারে।

দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক, বিশেষ করে শিক্ষার্থী, গবেষক, সাংবাদিক ও থিঙ্ক ট্যাঙ্কদের মধ্যে বিনিময় ও যোগাযোগ আরও বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রফেসর সুকলাল। তিনি বলেন, এই সম্পর্ককে দৃশ্যমান ও টেকসই করতে হলে জনগণের অংশগ্রহণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ১৯৯৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রিটোরিয়ায় হাইকমিশন চালু করে। উভয় দেশ কমনওয়েলথ অব নেশনস-এর সদস্য হওয়ায় কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে। গণতন্ত্র ও উন্নয়নের যে অভিন্ন মূল্যবোধ আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি গড়ে তুলেছে, তা মহান নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার আদর্শে অনুপ্রাণিত।

এসএইচ/এফএ