নিজস্ব প্রতিবেদক
২৯ জুলাই ২০২৫, ১১:৩৯ এএম
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ১২টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্য হয়েছে। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেমন সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন, ক্ষমতার ভারসাম্য সংক্রান্ত প্রস্তাবসহ আরও আটটি বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এসব বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।
এখন পর্যন্ত যেসব প্রস্তাবে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলোর অন্তর্ভুক্তি নিয়ে গত মাসে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন একটি খসড়া সনদ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছে। ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ শিরোনামের এই খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচন পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে এসব সংস্কার কার্যকর করা হবে।
ঐকমত্য হওয়া প্রস্তাবগুলোর সারাংশ
এখন পর্যন্ত যেসব মৌলিক প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কথা বলা হয়েছে। প্রথমত, প্রধানমন্ত্রী পদে এক ব্যক্তির সর্বোচ্চ মেয়াদ সীমিত করা হবে। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি একাধিক মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হতে পারছেন। কিন্তু নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এক ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন।
এছাড়া, সংসদ সদস্যদের ভোট দেয়ার স্বাধীনতা বাড়ানো হবে। বর্তমানে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদ সদস্যরা দলীয় নির্দেশনার বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারেন না। কিন্তু নতুন প্রস্তাব অনুসারে, অর্থবিল ও আস্থা ভোট ছাড়া অন্য যেকোনো বিষয়ে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতির পদ নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিরোধী দলের আসনসংখ্যার অনুপাতে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ ভাগ করা হবে। এই পদগুলোতে বিরোধী দলের প্রভাব বেড়ে যাবে, যা তাদের রাজনৈতিক সক্রিয়তা বাড়াবে।
নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণও এই প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া, প্রধান বিচারপতির নিয়োগ এবং ইসি গঠন পদ্ধতি সংশোধন করা হবে, যাতে এটি আরও স্বচ্ছ এবং সমন্বিত হয়ে উঠবে। এর পাশাপাশি, পুলিশ বাহিনীর পেশাদারিত্ব বাড়াতে একটি নতুন ‘স্বাধীন পুলিশ কমিশন’ গঠন করার প্রস্তাবও রয়েছে। পুলিশি সেবা জনগণের জন্য আরও সহজবোধ্য এবং জনবান্ধব করতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
যেসব বিষয়ে এখনও আলোচনা চলছে
এদিকে, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এখনও ঐকমত্য হয়নি। বিশেষ করে, সংবিধানের উচ্চকক্ষ গঠন এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা চলছে। এক্ষেত্রে, বিএনপির মতপার্থক্য রয়েছে, যার কারণে এখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
এছাড়া, সংবিধানে নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে আরও আলোচনা হবে, যা পরবর্তী সময়ের জন্য অপেক্ষমান।
বিএনপির আপত্তি এবং জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন থেকে প্রাপ্ত খসড়ায়, যে বিষয়গুলোতে ইতিমধ্যে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তবে বিএনপি, বিশেষ করে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে কিছু আপত্তি জানিয়েছে। বিএনপির মতে— এই ধরনের নিয়োগ পদ্ধতি নির্বাহী বিভাগের কাজের উপর অযথা বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গত মঙ্গলবার এ বিষয়ে বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান। পরে তিনি আলোচনায় যোগ দেন, তবে দলটি এখনও তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি।
জুলাই সনদ: একটি ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতি
‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ একটি ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতি হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতাকে আরও শক্তিশালী করবে। রাজনৈতিক দলগুলো আগামী জাতীয় নির্বাচনের পর সরকারের গঠনের দুই বছরের মধ্যে এই সংস্কার কার্যকর করার অঙ্গীকার করেছে। সনদে থাকা ৭টি মূল প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হলে দেশের শাসনব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, পুলিশি ব্যবস্থাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন আসবে।
এটি শুধু রাজনীতির সংস্করণ নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো এবং নাগরিক অধিকারকে সুসংহত করার একটি উদ্যোগ। সনদে সংবিধানের সংশোধন, নতুন আইন প্রণয়ন, এবং বিদ্যমান আইন ও বিধির সংশোধন অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এইউ