জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
২৮ জুলাই ২০২৫, ০৬:১৬ পিএম
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকমে পণ্য অর্ডার করে হাজার হাজার ব্যক্তি আজও সেই টাকা ফেরত পাননি। প্রতারণার মূল হোতা রিপন মিয়া এবং সহযোগী তানভীর হাসান গ্রাহকদের টাকায় করেছেন গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লট। ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করা কিউকমের কান্ডারিরা হাজার কোটি টাকা নিয়ে এখন পলাতক। গ্রাহকদের দাবি, তাদের সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা ফেরত দেওয়া হোক।
সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল ইসলাম মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান গ্রাহকরা।
গ্রাহকদের পক্ষে হাবিব বিন আব্দুল্লাহ লিখিত বক্তব্যে বলেন, কিউকমের মূলত যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রতারণার উদ্দেশ্যেই। আমরা গ্রাহকরা তা প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে বুঝতে পেরে প্রতিবাদ শুরু করলে উল্টো গ্রাহকদের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। অনলাইনে পণ্য অর্ডার ও অগ্রিম পেমেন্ট সংগ্রহ করে লক্ষ লক্ষ গ্রাহককে পণ্য সরবরাহ না করে পরিকল্পিতভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। সেই ঘটনায় জড়িত প্রতিষ্ঠানের মূল হোতা রিপন মিয়া এবং সহযোগী তানভীর।
হাবিব বিন আব্দুল্লাহ বলেন, প্রতিষ্ঠানটির মূল হোতা কিউকমের কর্ণধার রিপন মিয়া ফেসবুক লাইভ ও অনলাইনে ৩৫-৪৫ শতাংশ চমকপ্রদ অফার দিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতেন। তিনি ৭-৪৫ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারির গ্যারান্টি দেন এবং অগ্রিম টাকা নেন। এভাবে তিনি তার ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টেই প্রায় ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেন। কিন্তু বেশিরভাগ গ্রাহক সে পণ্যটি বুঝিয়ে পাননি। কিছু গ্রাহককে কমিশনের মাধ্যমে সামান্য টাকা ফেরত দিলেও অধিকাংশই এখনো টাকা ফেরত পাননি।
তিনি জানান, রিপন মিয়া প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার অর্ডার নেন। সরকার পেমেন্ট গেটওয়েকে নির্দেশ দেয়-পণ্য ডেলিভারি ছাড়া টাকা ছাড়া যাবে না। তখন ফস্টার গেটওয়েতে ৩৯৬ কোটি টাকা আটকে ছিল। সর্বশেষ আরও ৫০ কোটি টাকা তার অ্যাকাউন্টে পাওয়া গেছে। সেই টাকা রহস্যজনক কারণে উত্তোলন করা যাচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রিপন মিয়া বিভিন্ন ব্যাংকের একাধিক হিসাব নম্বরে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করেছেন। আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, সিটি ব্যাংক লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের হিসাব নম্বরে তিনি টাকাগুলো নিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, রিপন মিয়া নানা ছলচাতুরি ও ফাঁদ পেতে গ্রাহকদের ফুসলিয়ে ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা জমা নিতে শুরু করেন। ২০২২ সালের ১৬ জুন তিনি সুকৌশলে ব্যাংক ডিপোজিটের ৪৫০০টি চেকের মূল কপি জমা নিয়ে নেন। যাতে করে গ্রাহকদের কাছে তার চেকের কোনো প্রমাণ না থাকে। ব্যাংক ডিপোজিটের আনুমানিক ১৬৫ কোটি টাকা গ্রাহকরা এখনো পাননি। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর গেটওয়ে থেকে ৩৪৪ কোটি টাকা ছাড়া হয়েছে, কিন্তু এই টাকার অনেক বড় অংশ যা গ্রাহক পাননি যেটি রিপন মিয়া এসএমএস সার্ভিসের মাধ্যমে নিজের পকেটে টাকাগুলি ঢুকিয়ে নেন। এখনো আনুমানিক ৫২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা গেটওয়েতে আটকে আছে, যা অজ্ঞাত কারণে ছাড় করা হচ্ছে না। ফস্টারে চার বছর ধরে গ্রাহকের টাকা আটকে থাকায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার সুদ জমেছে বলে জানা গেছে। এই অর্থও গ্রাহকদের প্রাপ্য, কিন্তু এখনো তা ফেরতের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কিউকমের ওয়ার হাউসে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্য ছিল, যার প্রকৃত দাবিদার ক্ষতিগ্রস্ত লক্ষ লক্ষ গ্রাহক, অথচ সেখান থেকে গ্রাহকদের পাওনা টাকা পরিশোদের প্রতিশ্রুতি প্রদান করলেও তা করেননি বরং আইনি নিষেধ থাকা সত্ত্বেও এই পণ্যগুলো গোপনে বিক্রয় করে টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনের আরও অভিযোগ করা হয়, রিপন মিয়ার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলা, থানা ও আদালতে শত শত মামলা রয়েছে, যার বেশ কয়েকটিতে গ্রেফতারি পরোয়ানাও (ওয়ারেন্ট) জারি হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এখনো তাকে প্রশাসন গ্রেফতার করছে না।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রাহকদের পক্ষে হাবিব বিন আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা সাধারণ ভুক্তভোগী গ্রাহকরা আমাদের নিজের টাকা ফেরত পেতে পথে পথে ঘুরছি, অন্যদিকে প্রতারক রিপন মিয়া বিলাসবহুল জীবনযাপন করে চলেছেন। যার পেছনে রয়েছে আমাদেরই কষ্টার্জিত অর্থ। আমাদের জোর দাবি, রিপন মিয়ার সমস্ত সম্পদ দ্রুত চিহ্নিত করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জব্দ করা হোক এবং তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক, যাতে ভুক্তভোগীরা ন্যায্য অর্থ ফেরত পায়।
এমআইকে/জেবি