images

জাতীয়

পরিবেশ ধ্বংসকারীদের মনোনয়ন না দিতে একমত রাজনীতিবিদরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

২৬ জুলাই ২০২৫, ০৯:৩২ পিএম

পরিবেশ ধ্বংসকারীদের দলীয় মনোনয়ন না দেয়ার পক্ষে একমত পোষণ করেছেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। তারা বলেছেন, খাল দখল, নদী দূষণ কিংবা প্রাকৃতিক সম্পদের অবৈধ ব্যবহারকারীদের দলীয়ভাবে বর্জন করা এখন সময়ের দাবি।

শনিবার (২৬ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ‘Road to Green Manifesto: Dialogue on Political Manifesto’ শীর্ষক সংলাপে পানি, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনি ইশতেহারে পরিবেশ বিষয়ক অঙ্গীকারগুলো তুলে ধরেন বক্তারা।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ইশতেহারে চমৎকার সব প্রতিশ্রুতি থাকে; কিন্তু ক্ষমতায় গেলে তার বাস্তবায়ন খুবই দুর্বল। এবার সময় এসেছে— পরিবেশকে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে আনার।

তিনি আরও বলেন, পরিবেশ এখন আর শুধু নীতি নয়, এটি মানবিক দায়িত্ব। তরুণ ভোটাররা এখন বড় অংশ তাদেরকেই রাজনীতিকদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বাধ্য করাতে হবে।

উপদেষ্টা বলেন, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়তে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহার শুধু ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। জনগণের প্রতি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পরিবেশ ধ্বংসকারী, খাল ও জলাভূমি দখলকারীরা যেন দলীয় মনোনয়ন না পায়; এটা আমাদের স্পষ্ট অবস্থান।

তিনি আরও বলেন, পরিবেশ রক্ষাকে বিএনপির নির্বাচনি ইশতেহারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এছাড়া কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়েও দলটি গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

আমীর খসরু বলেন, আগের ‘স্বৈরাচারী শাসনামলে’ জবাবদিহিতা ছিল না; সেজন্য পরিবেশ দূষণ ও দখল বেড়েছে। এবার জনগণের মনোজগতে পরিবর্তন এসেছে। ক্ষমতায় গেলে জনগণ জিজ্ঞেস করবে— আপনারা যে পরিবেশ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন, বাস্তবে করেছেন কী?

তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্র না থাকায় রাজনৈতিক দলগুলো অতীতে জবাবদিহিতার বাইরে ছিল। এখন একসঙ্গে বসে আলোচনা হচ্ছে এটাই গণতন্ত্রের ইতিবাচক দিক।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, পরিবেশ রক্ষায় প্রতীকী হলেও কার্যকর ব্যবস্থা দরকার। আমরা প্রস্তাব করছি— রাজনীতিবিদ, মেয়র, ডিসিরা বছরে দুইবার ঢাকার চারটি খালে এবং নদীতে গোসল করবেন। মেয়র, সংসদ সদস্য এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে আমরা বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যায় গোসল করব। ইউরোপ, চীনেও এমন উদ্যোগ আছে। আগে ঘোষণা দিতে হবে, তাহলে জনগণও সচেতন হবে, খালও পরিষ্কার থাকবে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, যারা নদী দখল করে, বায়ু দূষণ করে, পরিবেশ নষ্ট করে শিল্প স্থাপন করছে— তাদের পরিবেশ অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত। তারা যেন মনোনয়ন না পায়, তা দলগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, পরিবেশ রক্ষা করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ‘পলিটিকাল ইউনিটি’ প্রয়োজন। এনসিপি স্মার্ট সিটির মতো গ্রিন সিটি করতে চায়। জলবায়ু ও পরিবেশকে ক্লাইমেট কমপ্লেক্সের আওতায় এনে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে ক্লাইমেট জাস্টিসের মাধ্যমে সহায়তা করা হবে।

তবে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পরিবেশ, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার নামে বাজেটে বরাদ্দ থাকলেও মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন দুর্বল। অনেক ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পর্যায়ে বরাদ্দের ১০ ভাগও খরচ হয় না।

এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, জমি দখলের কারণে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমছে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। বসবাসযোগ্য জমির সঠিক ব্যবহার না করলে পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা সম্ভব নয়।

বিইউ/এফএ