মোস্তফা ইমরুল কায়েস
২২ জুলাই ২০২৫, ১০:১০ পিএম
প্রতিদিনের মতো সন্তানকে স্কুল থেকে আনতে গিয়েছিলেন মা সালেহা বেগম। স্কুল ছুটি হয়েছিল। কিন্তু ছেলে আর বের হচ্ছিল না। তিনি ভাবছিলেন, হয়তো ছেলে তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছে, বের হবে। এমন চিন্তার মাঝেই বিকট আওয়াজ। যেন পুরো স্কুল মাঠ কেঁপে উঠল। মুহূর্তেই আগুন। তখনও সেই মা বুঝে উঠতে পারেনি, ছেলে তার আগুনে পুড়ছে।
সালেহা বেগম বলছিলেন, নিজ চোখে ছেলেকে আগুনে স্কুলের রুমে আটকে থাকতে দেখেছি। ওকে আমি সুস্থভাবে বের করতে পারিনি। অনেককেই শরীরে আগুন নিয়ে বের হয়ে আসতে দেখি।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুরে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে কথাগুলো বলছিলেন মাইলস্টোন উত্তরার দিয়াবাড়ি শাখার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আব্দুল মোসাব্বির মাকিনের মা সালেহা বেগম। অসুস্থ ছেলের ব্যথায় কাতর তিনি। বারবার সন্তানের জন্য কান্না করতে করতে মূর্ছা যাচ্ছেন। সঙ্গে থাকা স্বজনেরাও তাকে সান্ত্বনা দিতে পারছেন না।
ঘটনার সময় সালেহা বেগম স্কুলটির গেটের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন আর দেখছিলেন। তখনই ঘটনাটি ঘটে। যে ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটির ক্লাস রুমে ছিল তার ছেলে মাকিন। আগুন ছড়িয়ে পড়ার দৃশ্য দেখে তার মাথায় আসে মাকিন তো পুড়ে যাচ্ছে।
এসময় ছেলেকে পাগলের মতো খুঁজতে থাকেন সালেহা বেগম। কিন্তু তার হদিস মিলছিল না। এভাবে কেটে যায় কয়েক ঘণ্টা। এরপর তার কাছে খবর আসে, তার মাকিন বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। পরে উত্তরা থেকে ছুটে আসেন হাসপাতালে।
সালেহা বেগম বলেন, ‘ছেলের শরীরের বেশিরভাগই পুড়ে অঙ্গার হয়েছে। ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। বাবাটার কষ্ট আমি আর সহ্য করতে পারছি না।’
মা ছেলের জন্য এতটাই পাগল হয়ে গেছেন যে, মহান আল্লাহকে তার জীবনের বিনিময়ে হলেও তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন। সালেহা বেগমের ভাষায়, ‘বুকের ধনকে ফেরত দাও আল্লাহ। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। বুকের মধ্যে হাহাকার করছে।’
তিনি জানান, গাজীপুরের বোর্ডবাজার থেকে ছোট ছেলে মাকিনকে বেশির ভাগ সময় তিনিই আনা নেওয়া করেন। সোমবারও গিয়েছিলেন। দুপুর একটায় স্কুল ছুটিও হয়। কিন্তু সেদিন আর সন্তানকে বাড়িতে নিতে পারেননি। স্কুলটির ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের দ্বিতীয় তলায় কোচিং করছিল মাকিন। কোচিং শেষও হয়েছিল। এরপর ঘটে যায় বিভীষিকাময় ঘটনা।
এদিকে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাকিনের শরীরের ৬৮ শতাংশ পুঁড়ে গেছে। এখন তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
মাকিনের মামা সুমন জানান, প্রথম দেড় ঘণ্টা তারা মাকিনের খোঁজ পাননি। পরে তার স্কুলের এক প্রাইভেট শিক্ষক খবরটি দেন। মাকিনকে উদ্ধারের পর প্রথমে উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে দুপুরের পর জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়।
মাকিনের মামা সুমন ঢাকা মেইলকে বলছিলেন, ‘ওর মাকে আজ বিকেলে দেখার জন্য ভেতরে ঢুকতে দিয়েছিল। কিন্তু ছেলেকে দেখার পর থেকে তিনি খুব কান্নাকাটি করছেন। মাকিন কথা বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না। তার শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন বাকিটা আল্লাহ ভরসা।’
মাকিনের মামাতো ভাই মাহি হায়দার দুর্জয় জানান, মাকিনরা দুই ভাই। মাকিন সপ্তম শ্রেণিতে আর বড় ভাই আব্দুল মোমিন মাহাদি একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।’
এমআইকে/এএইচ