নিজস্ব প্রতিবেদক
১৫ জুন ২০২৫, ০১:২৬ পিএম
নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। পারিবারিকভাবেও অস্বচ্ছল পরিবারের সন্তান শাহিদুল ইসলাম। তবে ঢাকায় এসে অপরাধ সাম্রাজ্যের মাফিয়া হয়ে শতকোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি। তার তোপে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা। ভয়ে মুখ খোলেন না কেউ। এ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ঢাকার দক্ষিণখান থানাধীন আশকোনা এলাকার একটি অভিজাত বাড়ি থেকে শুরু হয় রহস্যময় এই চোরাকারবারির পথচলা। এর আগে শাহিদুল ইসলাম জামালপুরের সরিষাবাড়ীর প্রত্যন্ত গ্রামে বড় হয়েছেন। ঢাকায় এসেই সময়ের ব্যবধানে তিনি হয়ে ওঠেন একটি আন্তর্জাতিক চোরাচালান সিন্ডিকেটের মূলহোতা। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘিরেই গড়ে ওঠে শাহিদুলের অবৈধ সাম্রাজ্য। সেখানে কিছু অসাধু কর্মচারীর সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধভাবে দেশে ঢোকানো হচ্ছে স্বর্ণ, নিষিদ্ধ ওষুধ, যৌন উত্তেজক দ্রব্য, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, সেন্সেটিভ প্রযুক্তি ও মাদক তৈরির উপাদান। এসব পণ্য শহরের অভিজাত মার্কেট এবং গুদামে সরবরাহ করা হয় সুপরিকল্পিতভাবে।
শুধু তাই নয়, দুদকের অভিযোগে উঠে এসেছে, তার বিস্ময়কর সম্পদের বিবরণ। রাজধানীর বসুন্ধরা ও উত্তরায় একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট, আশকোনায় নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন, গ্রামের বাড়িতে ডুপ্লেক্স বাড়ি, ১৭৬ বিঘা কৃষিজমি, ব্যাংকে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত এবং দামি গাড়ির বহর—সব মিলিয়ে শত কোটি টাকার মালিকানা এখন তার হাতে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই সম্পদ অর্জিত হয়েছে মূলত চোরাচালানের টাকায়। অথচ প্রকাশ্যে তার কোনো বৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নেই। যা থেকে এই আয়ের ব্যাখ্যা মেলে। বরং শাহিদুলের জীবনের আরেকটি অন্ধকার দিক উঠে এসেছে, যেখানে রয়েছে নারীসঙ্গ, মাদকাসক্তি ও বিলাসী ভোগবিলাস।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুলশান, বনানী ও বিমানবন্দর এলাকার হোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে তার নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে।
শাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা না থাকলেও সূত্র বলছে, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং প্রশাসনের নীরবতায় ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন তিনি। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে দেশের বাইরের একটি বড় নেটওয়ার্কেরও সম্পর্ক রয়েছে। যারা দুবাই, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে এসব পণ্য পাঠিয়ে থাকে। বিমানে আগত যাত্রীদের মাধ্যমে এসব অবৈধ পণ্য গোপনে দেশে প্রবেশ করানো হয় এবং বাংলাদেশে থাকা সিন্ডিকেট সদস্যরা তা গ্রহণ করে রাজধানীর বিভিন্ন গুদামে সরবরাহ করে।
অবৈধ সম্পদের বিষয়ে জানতে শাহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না। যা আছে, তা ইনকাম ট্যাক্স ফাইলেই আছে।’
দুদকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। দুদকের অভিযোগ আসার পর আমলে নেওয়া হয়েছে।’
এমআই/জেবি