images

জাতীয়

এখনই পদ্মা সেতুর শতভাগ সুফল পাচ্ছেন না নড়াইল-যশোরবাসী

আবুল কাশেম

১৯ জুন ২০২২, ০৯:১৩ এএম

আর ছয়দিন পরই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে। ২৫ জুন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এ নিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। খুব বেশি দূরত্ব না হলেও পদ্মা নদীর কারণে এসব অঞ্চলের মানুষের কাছে ঢাকা ছিল ভিন্ন এক দেশের মতো। বহু বাধা অতিক্রম করে রাজধানীতে পৌঁছাতে হতো তাদের। তাইতো পদ্মা সেতু তাদের কাছে স্বপ্নপূরণের মতো। ২১ জেলার মানুষের জন্য পদ্মা সেতু আশির্বাদ হলেও এখনই সেতুর শতভাগ সুফল পাচ্ছেন না নড়াইল ও যশোরের মানুষ। 

পদ্মা সেতু পার হয়ে মাদারিপুর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা এবং গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া হয়ে নড়াইল দিয়ে সোজা পথ যশোরের। পদ্মার পর এই পথের প্রধান বাধা গোপালগঞ্জ ও নড়াইলকে পৃথককারী মধুমতী নদীর কালনা ঘাট। সেখানে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতুর কাজ শেষের পথে। কালনা সেতুর কাজ পুরোপুরি শেষ হতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। এই সময়ে নড়াইল ও যশোরবাসীর দুর্ভোগ কিছুটা হলেও থেকে যাবে।

কালনা সেতু সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে চালু হবে বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ) খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ আসলাম আলী।

padma bridge
রাতে মোহনীয় পদ্মা সেতু

চলতি মাসের শুরুতে তিনি জানান, এ পর্যন্ত সেতুর ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে এ সেতুটি নির্মিত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি ‘কালনা সেতু’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ সেতুর পশ্চিমপ্রান্তে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা এবং পূর্বপ্রান্তে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা। কালনা সেতু চালু হলে বেনাপোল, যশোর, খুলনা, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, ঢাকাসহ আশপাশের জেলার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কালনাঘাট থেকে ঢাকার দূরত্ব মাত্র ১০৮ কিলোমিটার। ফলে সেতুটি চালু হলে নড়াইল, বেনাপোল, যশোর, খুলনাসহ আশপাশের সড়ক যোগাযোগ কোথাও ১০০ কিলোমিটার, কোথাও আবার ২০০ কিলোমিটার কমে যাবে। এ ছাড়া শিল্প শহর যশোরের নওয়াপাড়া এবং মোংলা বন্দর ও সাতক্ষীরা স্থলবন্দরের যোগাযোগ সহজ হবে। সাতক্ষীরার মানুষ খুলনা দিয়ে বাড়তি পথে না এসে নড়াইল যশোর দিয়ে সরাসরি যাতায়াত করতে পারবেন।

ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ‘এক্সপ্রেস ওয়ে’ নির্মাণ করা হলেও ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত এ ধরনের সড়ক নির্মিত হয়নি। ফলে ‘এক্সপ্রেস ওয়ে’র সুফল পাচ্ছে না দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি অংশ। 

kalna bridge কালনা সেতু
কাজ চলছে কালনা সেতুর

পদ্মা সেতুর মতো এই সেতু উদ্বোধনের পর গতি আসবে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানিতে। ঘটবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধি। বেনাপোল থেকে পণ্যবোঝাই ট্রাক রাজধানীতে পৌঁছাতে পারবে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে। যেতে পারবে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায়। এতে একদিকে যেমন পরিবহন খরচ কমবে, অন্যদিকে বাজারে কমে আসবে বিভিন্ন পণ্যের দামও।

দেশের বেশিরভাগ কলকারখানা ও পোশাক শিল্পের কাঁচামাল শতকরা ৮০ ভাগ আমদানি হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। বন্দর থেকে খালাস করা কাঁচামাল দ্রুত শিল্প কলকারখানায় পৌঁছাতে পারলে কমে যাবে পণ্যের উৎপাদন খরচ। প্রসারিত হবে শিল্প-কলকারখানা। কৃষিজাত পণ্যের বাজার বেশ প্রসারিত হবে। উৎপাদিত পণ্য স্বল্প সময়ে় এবং অল্প খরচে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে অধিক মুনাফা পাবে এই অঞ্চলের কৃষকরা। বেনাপোল স্থলবন্দরের কার্যকারিতাও বৃদ্ধি পাবে বহুগুণে। এ অঞ্চলের সামগ্রিক যাতায়াত ব্যবস্থা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের আমূল পরিবর্তন হবে। জিডিপি এবং রাজস্ব আয় দুইই বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে বেনাপোল কাস্টমস হাউস থেকে সরকার প্রতিবছর ছয় হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকে। পদ্মা সেতুর কারণে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়ে দাঁড়াবে ১০ হাজার কেটি টাকায়। 

দেশের সবজির বড় অংশের জোগান দেওয়া হয় যশোর থেকে। রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকায় ট্রাকে করে এগুলো সরবরাহ করা হয়। ফেরিঘাটে যানজট বা বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় এগুলো যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছে না। পচনশীল হওয়ায় এসব পণ্যের মান কমে যায়। কমে দামও। লোকসানে পড়তে হয় কৃষকদের। তাই পদ্মা সেতু ও কালনা সেতু চালু হলে যশোর অঞ্চলে শুধু যোগাযোগের দ্বারই উন্মুক্ত হবে না; এই অঞ্চলের কৃষি খাতে প্রসার ঘটিয়ে অর্থনীতিকে করবে সমৃদ্ধ। সৃষ্টি হবে নবদিগন্তের সূচনা।  

kalna
সেপ্টেম্বরে চালু হতে পারে কালনা সেতু

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক নূরুজ্জামান বলেন, যমুনা সেতু চালুর হওয়ার ফলে উত্তরঞ্চলে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক বিপ্লব ঘটেছে। তেমনি পদ্মা সেতু চালু হলে উত্তরের মতো কৃষি বিপ্লব ঘটবে এই যশোর অঞ্চলেও। 

এরই মধ্যে পদ্মা সেতু পার হয়ে যেসব বাস দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৩ রুটে চলাচল করবে তার ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে চলা এসব বাসে ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে এই ভাড়া নেওয়া হবে।

তবে এই রুটে নেই নড়াইল ও যশোেরের ভাড়া। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন কালনা সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় এই রুটের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়নি। কালনা সেতু চালু হলে এই রুটের নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হতে পারে।

এক নজরে কালনা সেতু

কালনা সেতু বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের গোপালগঞ্জ জেলা ও নড়াইল জেলায় প্রবাহিত মধুমতি নদীতে নির্মাণাধীন একটি ৬ লেন বিশিষ্ট সেতু। ১৪টি পিলারের ওপর নির্মাণাধীন সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার ও প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার।  নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) সেতু এটি। পদ্মা সেতুর চেয়েও ২ লেন বেশি নির্মাণাধীন সেতুর মাঝখানের ৪টি লেন দিয়ে সার্বক্ষণিক ভারী যানবাহন চলাচল করবে এবং সেতুর দুই পাশের দু’টি লেন দিয়ে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক ও মোটরসাইকেলসহ নানা যানবাহন চলাচল করবে। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় প্রায় ৯৫০ কোটি টাকা।

একে/এমআর