সেলিম আহমেদ
১৮ জুন ২০২২, ১১:৫৯ এএম
মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান। চাকরি সুবাদে থাকেন ঢাকায়। গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদরের ষোলঘরে থাকেন বৃদ্ধ মা-বাবা আর ছোট বোন। গত বুধবার বন্যার পানি উঠতে শুরু করে তাদের বাড়িতে। ওইদিনই শেষ কথা হয় বাবার সঙ্গে।
হাফিজুর ঢাকা মেইলকে বলেন, বাবা-মা-বোন নিরাপদে আছে কী না বলতে পারছি না। শুনেছি গত তিনদিন থেকে আমাদের এলাকা বিদ্যুৎহীন। আবার নেটওয়ার্কও নেই। আশপাশের অন্তত ৩শ মানুষকে ফোন দিয়েছি কাউকে পাই নাই। চিন্তায় কাল রাত ঘুমাতে পারি নাই।
ঢাকার একটি গণমাধ্যমের সিনিয়র সাংবাদিক রুদ্র মিজান। তার বাড়িও সুনামগঞ্জের দিরাই পৌরশহরে। রুদ্র মিজান বলেন, গতকাল শুক্রবার দুপুরেই পানি উঠেছে আমাদের বাসায়। গ্রামগুলোর অবস্থা আরও ভয়াবহ। যা হয়তো কল্পনা করাও কঠিন। গত রাত থেকে কারো কোনো খবরই জানি না। কী করবো তাও বুঝতে পারছি না।
শুক্রবার সকালে রুদ্র মিজান বলেন, সকাল থেকে শতাধিক ফোন নম্বরে চেষ্টা করেছি। কিন্তু কথা বলতে পারিনি। পরিবার, স্বজন, এলাকাবাসী, সরকারি কর্মকর্তা কারও সঙ্গেই না। বিদ্যুৎ নেই। নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন। দেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্নও হয়েছে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই।
হাফিজুল ও রুদ্র মিজানের মতো লাখ লাখ মানুষ রয়েছেন এভাবে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। এমন কঠিন দুঃসময়ে কাজের প্রয়োজনে প্রিয়জনদের পাশে থাকতে পারছেন না। নেটওয়ার্ক না থাকায় খোঁজও রাখতে পারছেন না। কেমন আছেন তাদের প্রিয়জন তাও জানেন না অনেকে। প্রতিটি মুহূর্ত কাটাচ্ছেন উদ্বেগে।
কারণ ভয়াবহ বন্যায় ভেঙে পড়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। বিশেষ করে সুনামগঞ্জ জেলার বেশিরভাগ এলাকা গত ৩-৪ দিন থেকে বিদ্যুৎহীন। বিদ্যুতের কারণে নেটওয়ার্কের সমস্যায় ঠিকমতো কাজ করছে না মোবাইল ফোনও।
বিভিন্ন মুঠোফোন কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, তাদের কর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় পোর্টেবল জেনারেটর (বহনযোগ্য) পৌঁছে মোবাইল টাওয়ার সচল রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানি বাংলালিংকের সুনামগঞ্জের কাস্টমার কেয়ারের পরিচালক জসিম আহমদ বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় বাংলালিংকসহ সব মোবাইল অপারেটরদের টাওয়ার কাজ করছে না। এতে মানুষ একে অন্যের খোঁজ নিতে পারছে না।
টেলিটকের সিলেট জোন থেকে বলা বলা হয়েছে, সুনামগঞ্জের ৬০ শতাংশ টাওয়ার ডাউন হয়ে গেছে। হাওর এলাকায় অবস্থা বেশি খারাপ। যেখানে সম্ভব হচ্ছে, কর্মীরা জ্বালানি নিয়ে গিয়ে জেনারেটর চালু রাখার চেষ্টা করছে। সিলেটের হাওর এলাকারও অবস্থা একই। নগরের কিছু এলাকায় নেটওয়ার্ক ঠিক আছে। যেগুলোতে সম্ভব হচ্ছে টাওয়ার চালু করতে জেনারেটর চালানোর জন্য জ্বালানি সরবরাহ করা হচ্ছে। দুর্গম এলাকায় জ্বালানি পৌঁছাতে বেগ পেতে হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বানভাসি মানুষদের সহায়তা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে অঝোর বৃষ্টি হচ্ছে সুনামগঞ্জে। পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়ার শঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে সুনামগঞ্জে দ্রুত টেলিযোগাযোগ সেবা দিতে না পারলে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।
শুক্রবার (১৭ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সুনামগঞ্জে সকাল থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে বিটিএসগুলো ‘পাওয়ার ব্যাকআপ’ দিতে পারছে না। ফলে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, দ্রুত সুনামগঞ্জে টেলিযোগাযোগ ইন্টারনেট সেবা দিতে না পারলে আটকে পড়া মানুষরা যোগাযোগ করতে পারবে না, এমনকি সেনাবাহিনীর রেসকিউ টিম-কে জানাতে সক্ষম হবে না। ফলে প্রাণহানির আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে।
যত দ্রুত সম্ভব ভ্রাম্যমাণ জেনারেটরের মাধ্যমে বিটিএসগুলোতে পাওয়ার সাপ্লাই করা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।
এসএএস/এএস