images

জাতীয়

হাজারীবাগ গরুর হাট: যানজট-শব্দ দূষণ-দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

মো. মেহেদী হাসান হাসিব

৩১ মে ২০২৫, ০৫:০২ পিএম

রাজধানীর হাজারীবাগ পশুরহাট ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অনুমোদিত হলেও বেলা গড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাটকে কেন্দ্র করে বাড়ছে এলাকাবাসীর ভোগান্তি। সেখানে নেই কোনো পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো। রাস্তার দুপাশে অস্থায়ী ছাউনি তৈরি বানানো হয়েছে গরুর জন্য অস্থায়ী আশ্রয়স্থল। 

সবমিলিয়ে ওই এলাকায় তৈরি হওয়া যানজট, শব্দ দূষণ, আবর্জনা ও দুর্গন্ধে এখনই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী।

শনিবার (৩১ মে) সরেজমিনে হাজারীবাগ গরুর হাট ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

হাট ঘুরে দেখা যায়, গরুর বেপারী ও খামারীরা তাদের গরু নিয়ে ক্রেতার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। কিন্তু ঈদের মাত্র ছয় দিন বাকি থাকলেও হাটে এখনো ক্রেতার তেমন দেখা নেই। আগামী দুই-তিন দিন পর ক্রেতার চাপ  বাড়বে বলে ধারণা করছেন বিক্রেতারা। 

H4

গরুর হাটের সীমানা

হাজরীবাগ গরুর হাটের নাম শুনলে মনে হবে, কোনো বিশাল একটা ফাঁকা মাঠে এ হাট বসে। কিন্তু বাস্তবে এ হাটের বেশির ভাগ গড়ে উঠেছে দুপাশের রাস্তাকে ঘিরে।

১০টি গরু নিয়ে আসা আব্দুস ছাত্তার ঢাকা মেইলেকে বলেন, ‘এবার হাটের জন্য সময় দেওয়া হয়েছে পাঁচ দিন। এখন দুই-একটি করে গরুর ট্রাক আসছে। আজ বিকেলের মধ্যে দেখা যাবে পুরো হাট ভরে গেছে।’ 

হাটের সীমানা নিয়ে জানতে চাইলে আব্দুস ছাত্তারের পাশে বসে থাকা গরুর আরেক বেপারী মালেক বলেন, ‘আপনে শুধু এ ছোট মাঠ কেন দেখছেন, এ হাটের সেকশন ঢাল থেকে সিকদার মেডিকেল পর্যন্ত যে বড় রাস্তাগুলো আছে তার দুই পাশ পর্যন্ত। এখনো গরু তেমন আসেনি। আপনে একটু ভেতরে গিয়ে দেখেন, তাহলে হাটের আসল চিত্র দেখতে পাবেন।’

মালেকের কথা মতো হাজারীবাগের কয়েকটি রাস্তা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার দুপাশে সেড তৈরি করে সারি সারি গরু রাখা হয়েছে। ৩০ ফুট রাস্তা সরু হয়ে ৬ ফুটে চলে এসেছে। একটি প্রাইভেটকার রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করলে অন্য কোনো গাড়ি আর ঢোকার সুযোগ থাকে না। এতে ধীরগতিতে চলাফেরা করছে এ এলাকায় আসা রিকশা থেকে শুরু করে সকল যানবাহন।

H2

যানজট, শব্দ দূষণ ও দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

গরুর হাটকে কেন্দ্র করে তেমন কোনো পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা লক্ষ্য করা যায়নি। মাইকের উচ্চ শব্দ, অনবরত তাতে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে, বিশাল গরুর হাট। 

কয়েকজন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাটের জন্য এবার পরিকল্পনা সঠিক হয়নি। প্রতিবারের মতো এবারও পরিকল্পনা ছাড়া এ হাট বসানো হয়েছে। এতে কোরবানির হাটকে ঘিরে যে আনন্দ, সেটি ম্লান হয়ে আসছে।

H_lead

হাজারীবাগের বাসিন্দা রাকিব হোসেন বলেন, ‘এতো তাড়াতাড়ি হাটটি বসানো উচিত হয়নি। আরও ২ থেকে ৩ দিন পর যদি বসাতো, তাহলে ভোগান্তিটা একটু কম হতো। দিনের বেশির ভাগ সময় মাইকে গরুর হাট, গরু হাট বলেছে। এতো উচ্চ শব্দের কারণে বয়স্ক ও বাচ্চারা  মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া হাটের কারণে অতিরিক্ত যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, যেখানে এ সকল রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া কষ্ট। 

আরেক পথচারী আব্দুল মতিন জানান, শুধু যে যানজট তা কিন্তু নয়, রাস্তার পাশে গরু রাখার কারণে যেমন রাস্তা দখল হয়েছে, তেমনি ফুটপাত দখল হয়েছে। বেপারীরা যাবতীয় মালামাল ফুটপাতের উপর রেখেছে। হেঁটে যে একটু বাজার করতে যাবো, তা পারছি না। তার উপর গরুর গোবরে রাস্তা ছয়লাব। পা ফেলা যাচ্ছে না। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকাতে।

H

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ইতোপূর্বে হাটগুলোর বজ্র সরানোর জন্য পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি। নতুন করে কোনো পরিকল্পনা নেই। বজ্র সরানোর জন্য কিন্তু আমাদের লোকবলের স্বল্পতা নাই।

তিনি বলেন, আমরা দেখছি বর্তমানে রাস্তার উপর ময়লা কম থাকে। কোনো কোনো জায়গা থেকে আমাদের নিতে দেরি হলে সেখানে কিছুক্ষণ থাকে। এরপরও আমাদের কোনো ঘাটতি থাকলে তা আমরা আগে পূরণ করতে চাই। 

হাটের বজ্রের কারণে নগরবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীন বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের বজ্র ব্যবস্থাপনা বিভাগ সব রকম ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে। তাই হাটের আশেপাশের এলাকার বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি হওয়ার কথা না।

এমএইচএইচ/এএইচ