জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
২৫ মে ২০২৫, ০৬:১৪ পিএম
নারী কর্মীর অসহায়ত্ব ও বৈবাহিক সংকটের সুযোগ নিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। এরপর সেই নারী গর্ভবতী হয়ে পড়লে সন্তানের পিতৃ-পরিচয় দাবি করলে তাকে ও তার সন্তানকে গুম ও হত্যাচেষ্টা করা হয়।
রোববার (২৫ মে) দুপুরে রাজধানীর ইস্কাটনে একটি রেস্তোরায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী নারী মবিনা জান্নাত। রাজধানীর আদাবরে এএনএইচ গ্রুপের ব্যবস্থাপক (এমডি) মোকাদ্দেস হানিফ টলিনের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
সংবাদ সম্মেলনে মবিনা জান্নাত জানান, সেই এমডির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে জামিনে বেরিয়ে নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন মোকাদ্দেস হানিফ টলিন। মামলা তুলে নিতে নানাভাবে চাপও দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ২০১৭ সালে পারিবারিকভাবে খোরশেদ আলম রোমেল নামে এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কিন্তু স্বামী রোমেলের হাতে দীর্ঘদিন মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে অবশেষে ২০২০ সালে তালাকপ্রাপ্ত হন। এরপর চাকরির সুবাদে পরিচয় ঘটে এএনএইচ গ্রুপের এমডি মোকাদ্দেস হানিফের সঙ্গে। তার অভিযোগ, হানিফ তার স্বামীর সঙ্গে দূরত্ব ও সংকটের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং পরবর্তীতে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে একাধিকবার একই কাজ করেন।
মবিনা জান্নাত জানান, ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে মবিনা জানতে পারেন তিনি সন্তানসম্ভবা। কিন্তু মোকাদ্দেস বিষয়টি গোপন রাখতে বলেন এবং সন্তানের দায় নিতে গড়িমসি করেন। এ অবস্থায় সন্তান জন্ম নিলে সামাজিক স্বীকৃতি ও আইনি নিরাপত্তা পাওয়ার আশায় তিনি ডিএনএ পরীক্ষার উদ্যোগ নেন। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, মোকাদ্দেস হানিফই তার সন্তানের জৈবিক পিতা। তারপরও সন্তানের পিতৃত্ব স্বীকার করতে রাজি হননি হানিফ, বরং রাজনৈতিক যোগাযোগ ও ক্ষমতা ব্যবহার করে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এমনকি বিশেষ একটি সংস্থা দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ভুক্তভোগী এই নারী আরও জানান, মামলার পর মোকাদ্দেস হানিফের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। কিন্তু এক সময়ের প্রভাবশালী ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সহযোগিতায় গত ৫ মে জামিনে বেরিয়ে যান হানিফ। এরপর থেকে মবিনাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি সন্তানের পিতৃ-পরিচয়ের জন্য লড়াই করছি। অথচ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, প্রাণনাশের হুমকি ও সামাজিকভাবে হেয় করার চেষ্টা চলছে।’
মবিনা জান্নাত বলেন, আমার আড়াই বছরের মেয়েটি জন্ম থেকে হার্টে ফুটো। আর্থিক অভাবে তার চিকিৎসা চালাতে পারছি না। জরুরি ভিত্তিতে তাকে দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। কিন্তু মোকাদ্দেস তার ক্ষমতা ব্যবহার করে আমাকে হয়রানি করছে। কিন্তু সন্তানের চিকিৎসার জন্য কোনো সহযোগিতা করছে না। বরং সে টাকা পয়সা খরচ করে আমাকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এমনকি মোকাদ্দেসের স্ত্রী ও বোনও অতীতে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাসীনদের ব্যবহার করে মবিনাকে হয়রানি ও হত্যার চেষ্টা করছে। বর্তমানে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের ব্যবহার করে মবিনা ও তার সন্তানকে হয়রানি করে আসছে।
এসময় সন্তানকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য সহায়তা এবং আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন মবিনা জান্নাত।
এদিকে, অভিযোগের বিষয়ে জানতে এএনএইচ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাদ্দেস হানিফ টলিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এই সন্তান আমার। বিষয়টি পরবর্তীতে সুরাহা করব।’ এই কথা বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।
এমআইকে/এমএইচটি