images

জাতীয়

প্রবাসীদের এনআইডি সেবা সম্প্রসারণে জোর দিচ্ছে ইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ মে ২০২৫, ০৯:১৪ এএম

বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা সম্প্রসারণে জোর দিয়ে আরও ১০ থেকে ১২ দেশে এ কার্যক্রম চালু করার পরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সম্প্রসারণের সকল কাজ শেষ করতে চায় সংস্থাটি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন কমিশন ৪০টি দেশেই কার্যক্রমটি সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে তা হাতে নেওয়া হবে।

প্রবাসীদের এনআইডি সেবা সম্প্রসারণের বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ৩১টি দেশ থেকে এখনো ক্লিয়ারেন্স পাইনি। তবে আমরা আলাদাভাবে যোগাযোগ করছি। অনেক দেশে জনবল ও অফিস স্পেসের ঘাটতির কারণে ক্লিয়ারেন্স মিলছে না। আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যেই অন্তত ১০ থেকে ১২টি দেশে এনআইডি কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে সেবা সম্প্রসারণের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠানো হয়েছে। দূতাবাসগুলোর কাছ থেকে ক্লিয়ারেন্স পাওয়া গেলে দ্রুত কার্যক্রম শুরু করা হবে।

নির্বাচন কমিশন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনশক্তি ব্যুরো, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি-বায়রাসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দেখেছে ৪০টি দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের আধিক্য রয়েছে। এইসব দেশকেই মাথায় রেখে কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দেশগুলো হলো- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন, লেবানন, জর্ডান, লিবিয়া, সুদান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, ইতালি, হংকং, মিশর, ব্রুনাই, মৌরিশাস, ইরাক, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, গ্রিস, স্পেন, জার্মানি, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, তুরস্ক ও সাইপ্রাস। এসব দেশে এক কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ জন প্রবাসী রয়েছে। সবচেয়ে রয়েছে বেশি প্রবাসী রয়েছে সৌদি আরবে, ৪০ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮৮ জন। আর সবচেয়ে কম রয়েছে নিউজিল্যান্ডে দুই হাজার ৫শ জন।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত ও মালয়েশিয়া; এই সাতটি দেশে দূতাবাসের মাধ্যমে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে ইসি। এক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদন করে দূতাবাসে এসে ফটো তুলে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হচ্ছে। এছাড়া কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরে কার্যক্রমটি সম্প্রসারণের জন্য কার্যক্রম শুরু করেছে সংস্থাটি।

ইসির তৈরি সবশেষ প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সাতটি দেশ থেকে মোট আবেদন পড়েছে ৪৫ হাজার ১৮৪টি। যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েছে তিন হাজার ৫৬৩টি আবেদন। উপজেলা নির্বাচন অফিসে তদন্ত প্রক্রিয়াধীন আছে ২১ হাজার ৮৮৯টি আবেদন। তদন্ত শেষে আবেদন অনুমোদন হয়েছে ১৯ হাজার ২৮৬ জন প্রবাসীর। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে ৪৪৬টি আবেদন। আর সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আঙুলের ছাপ ও ছবি নেওয়া হয়েছে ২৮ হাজার ৯২৬ জন প্রবাসীর। সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১৯ হাজার ১৯৭টি। আর সবচেয়ে কম আবেদন পড়েছে মালয়েশিয়ায় ৯৪৮ জন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়ে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৯ সালে প্রবাসে এনআইডি সরবরাহের উদ্যোগ হাতে নেয়। এরপর ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনে ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করে ইসি। এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসীদের মাঝে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। তার আগে একই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার অংশ হিসেবে অনলাইনে আবেদন নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এরপর সৌদি আবর, সিঙ্গাপুর ও মালদ্বীপে থাকা বাংলাদেশিদের জন্যও এ সুযোগ চালু করা হয়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে থমকে যায় দূতাবাসের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা। পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই কার্যক্রমকে ফের উজ্জীবিত করেন। এক্ষেত্রে আগের আবেদনগুলো পাশ কাটিয়ে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেন তারা। সেই কার্যক্রমকেই এগিয়ে নিচ্ছে বর্তমান নাসির উদ্দিন কমিশন।

এমএইচএইচ/এএস