মাহাবুল ইসলাম
০৮ মে ২০২৫, ০৮:১৮ এএম
রাজধানী ঢাকা। গতি ও কোলাহলের শহর। প্রতিদিন লাখো মানুষ জীবিকার প্রয়োজনেই নেমে পড়েন রাস্তায়। বাস, ট্রেন, রিকশা, প্রাইভেট কার, উবার, মোটরবাইক- সবমিলিয়ে যানবাহনের এক বিশাল বহর। তবে এর মধ্যেই এক ভয়ানক চিত্র নগরবাসীর চোখে ধরা পড়ছে- ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের নিয়ন্ত্রণহীন গতি।’ যে গতির ভীতি পথচারীদেরও।
কিশোর বয়সের বহু চালক বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই রাস্তায় নেমে পড়ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে। যাদের গতি বেসামাল, আচরণ অপ্রত্যাশিত। আর দুর্ঘটনার ঝুঁকি সর্বক্ষণ মাথায় রেখেই পথ চলতে হচ্ছে পথচারী থেকে শুরু করে সব পরিবহন চালককেও।
ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায় হাজারও গাড়ির ফাঁকে যাত্রীদের আলোচনার প্রধান অনুসঙ্গ হয়ে উঠছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকের বেপরোয়া গতির অটোরিকশা। কারওয়ান বাজারে কথা হয় আমিনুল ইসলাম নামের চার্জার অটোরিকশা চালকের সঙ্গে। তার বয়স মাত্র ১৪ বছর। বয়সে এখনো কৈশোরে পা রেখেছে মাত্র। কিন্তু চালকের আসনে বসে তার ভঙ্গি, আত্মবিশ্বাস আর গতিবিধি দেখে বোঝার উপায় নেই সে একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সে চার্জার অটোরিকশা চালায়। যাত্রী তোলে, রাস্তার যানজট ঠেলে সময় মতো গন্তব্যেও পৌঁছে দেয়। রিকশা চালিয়েই সংসারের হাল ধরেছে সে।
তবে সংসারে হাল ধরা প্রশংসার বিষয় হলেও বড় ধরনের উদ্বেগেরও কারণ দুর্ঘটনার ঝুঁকি। আমিনুল ইসলামের মতো অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরদের রাস্তায় চালকের আসনে দেখা আইনত নিষিদ্ধ। ১৮ বছরের নিচে কোনো ব্যক্তি চালকের দায়িত্ব নিতে পারেন না—এমনটাই বলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন। তবু বাস্তবে এই নিয়ম মানা হচ্ছে না। আমিনুলের মতো অসংখ্য কিশোর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নামছে রাস্তায়, আয় রোজগারের তাগিদে।
আমিনুল জানায়, তার বাবা কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। মা গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন। সংসারের চাকা সচল রাখতে স্কুল ছেড়ে তাকে রিকশা চালাতে হচ্ছে।
আমিনুলের মতো শত শত কিশোর রাজধানীর অলিগলিতে, এমনকি ব্যস্ত প্রধান সড়কেও চলাচল করছে অবাধে। ন্যূনতম প্রশিক্ষণ না থাকা, ট্রাফিক নিয়ম না জানা এবং মানসিক পরিপক্বতা না থাকায় তারা প্রায়শই দুর্ঘটনার সৃষ্টি করছে।
ডিএমপি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ সারওয়ার ঢাকা মেইলকে বলেন, ঢাকা শহরে প্রায় ৮০ লাখ যানবাহন চলাচল করে। এরমধ্যে রয়েছে ব্যাচারিচালিত অটোরিকশাগুলোর দৌরাত্ম্য। আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছি দেখেই কিন্তু রাস্তা চলাচলের উপযোগী। এখন ১৮ বছরের নিচে যারা আছে তারা আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়েই অলি-গলিতে গড়ি নিয়ে চলাচল করে। আমরা এই বিষয়টি নিয়েও কাজ করছি।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজ্জামেল চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের দেশে শিশুশ্রম তো আছেই। উদ্বেগজনক হারে ঝঁকিপূর্ণ শ্রমেও শিশুরাযুক্ত আছে। এখানে সরকারকে শিশুশ্রম নিরোসনে প্রথম ভূমিকাটা রাখতে হবে। আর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে স্মার্ট পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
এমআই/জেবি