images

জাতীয়

শ্রমিকদের মিছিল-সমাবেশে মুখর প্রেসক্লাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

০১ মে ২০২৫, ০৩:৪৪ পিএম

‘শ্রমিক স্বার্থবিরোধী কালো আইন বাতিল কর’ এই প্ল্যাকার্ড হাতে দাড়িয়ে আছেন একজন গার্মেন্টস শ্রমিক। পাশে আরেকজন গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবির ব্যাপারে বক্তব্য রাখছেন। এছাড়া সবার হাতে বিভিন্ন দাবির প্ল্যাকার্ড। তারা সবাই গ্রীন বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন সংগঠনের নেতাকর্মী। 

বৃহস্পতিবার (১ মে) সকাল থেকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উদযাপনে শ্রমিকদের মিছিল ও সমাবেশ মুখর হয়ে উঠেছে প্রেসক্লাব এলাকা। একের পর এক খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নিজ নিজ সংগঠনের ব্যানারে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক। এসময় শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে নানা রকম স্লোগান দেন তারা। নিজেদের অধিকার আদায়ের প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তার পাশে ছোট ছোট সমাবেশ করছেন তারা। প্রেসক্লাব এলাকা যেন হয়ে উঠেছে দাবি জানানোর একমাত্র প্ল্যাটফর্ম।

শ্রমিকদের মিছিল ও সমাবেশে রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া এই অঞ্চলের বিভিন্ন রাস্তায় যান চলাচল সীমিত করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা মোকাবেলায় পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরব রয়েছে বলেও জানা যায়। 

may2

শ্রমিক সংগঠনের নেতারা জানান, শোষণ-নির্যাতন রুখে দিয়ে স্থায়ী মজুরি কমিশন গঠন করতে হবে। সেই সঙ্গে জাতীয় নিম্নতম মজুরি ৩০ হাজার টাকা করতে হবে। অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন, সামাজিক সুরক্ষা শ্রম, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নসহ সমতা- মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন সুবিধা, অর্জিত ছুটি কিংবা নৈর্ব্যক্তিক ছুটির বিষয়সহ শ্রম আইনের বিদ্যমান সকল বৈষম্য দূর করতে হবে।

শ্রমিক নেতারা বলেন, গার্মেন্টস সেক্টরের শ্রমিকদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। যাদের রক্ত আর ঘামের ওপর দাঁড়িয়ে আছে দেশ, তাদেরকেই মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। শ্রমিকদেরকে মূল্যায়ন করতে হবে এবং যথাযথ মর্যাদা দিতে হবে। আমরা রানাপ্লাজার ঘটনা দেখেছি, কোনো বিচার হয়নি। তাই প্রতিটি শ্রমিকের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, ভাসানী জনশক্তি শ্রমিক পার্টি, নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চা, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ), জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন, হোটেল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন, ঢাকা মহানগর সিএনজি-অটোরিকশা ইউনিয়ন, শ্রমিক গণমঞ্চ, ঢাকা পোশাক প্রস্তুতকারী শ্রমিক সংঘ, বাংলাদেশের সোশ্যালিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে।

may1

প্ল্যাকার্ডে যেসব দাবি দেখা যায়

শ্রমিকদের মিছিলে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। প্রতিটি প্ল্যাকার্ডে বিভিন্ন দাবি লিখে নিয়ে এসেছেন তারা। দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো—

'Ensure day care centre in all factories', 'মাতৃত্বকালীন ছয় মাস ছুটির আইন কর', 'Ensure risk free workplace for pregnant women', 'গৃহশ্রমিকদের শ্রম আইনে স্বীকৃতি দিতে হবে', 'Stop harassing workers', 'শ্রমিক ছাটাই বন্ধ কর', 'Ratify ILO Convention', 'পার্লার শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন নিশ্চিত কর' 'হয় কাজ নয় বেকার ভাতা চালু কর', 'পাটকল, চিনি কলসহ সব বন্ধ কল চালু কর', 'সবার জন্য এক ধারা শিক্ষা চালু কর', 'মার্কিন ভারতসহ বিদেশি হস্তক্ষেপ বন্ধ কর'।

দাবি আদায়ের দিন হয়ে উঠেছে উৎসবমুখর

পহেলা মে শ্রমিকদের দাবি আদায়ের দিন। তবে এবার এই দিবসে প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ যোগ দিতে অনেকে ব্যান্ড পার্টিসহ এসেছেন। এছাড়া চলছে জাগরণী গান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রমিক নেতা ইসাহক আলী বলেন, আজকে আমাদের মুক্তির দিবস। আগের সেই শ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের দুর্দিন এই দিনেই ভাঙ্গা হয়েছি। তাই আমরা দিনটিকে আনন্দময় করে তুলতে আজকের আয়োজন। আমরা চাই ৮ ঘণ্টা শ্রম, ৮ ঘণ্টা ঘুম এবং ৮ ঘণ্টা বিনোদন। এভাবেই আমরা জীবন কাটাতে চাই।

বাংলাদেশে এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। মহান মে দিবসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে আজ জাতীয় ছুটির দিন। আরও অনেক দেশে এটি বেসরকারিভাবে পালিত হয়।

এএসএল/এমএইচটি