images

জাতীয়

ফুটপাত ব্যবসায়ী কামালের আজব ইঁদুরপ্রেম!

মাহাবুল ইসলাম

২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ পিএম

ক্ষেতের ইঁদুর নিধন করতে গিয়ে দেশের প্রান্তিক কৃষকদের নাজেহাল অবস্থা। শুধু কৃষক নয়, কৃষি বিভাগও ইঁদুর মারতে 'কামান চাওয়া'র অবস্থা। ২০২০-২০২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে দুই কোটি ৯৯ লাখ ৩৫ হাজার ৪৪৭ টি ইঁদুর হত্যা করে দুই লাখ ২৪ হাজার ৪৪২ মেট্রিক টন ফসল রক্ষাও করেছে দফতরটি। এই যখন ইঁদুরের প্রতি কৃষি বিভাগের তৎপরতা, তখন ঠিক উল্টো উদাহরণ সৃষ্টি করছেন রাজধানী ঢাকার ফুটপাত ব্যবসায়ী কামাল হোসেন।

কামাল হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা সংলগ্ন ফুটপাতে মালা-চুরি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এক যুগের অধিক সময় ধরে তিনি চারুকলায় মালা-চুরি বিক্রি করে আসছেন। পথের ধারে দোকানদারির অবসরে ইঁদুর ছানার ক্ষুধার হাহাকার তার হৃদয়ে আঁচ কেটে যায়।

কামাল হোসেন বলেন, ইঁদুর তো আমার কোনো ক্ষতি করেনি। তাহলে তাকে মারব কেন? তাদেরও তো জীবন আছে? আমার ছোট্ট একটি উদ্যোগে তারা যদি ভালো থাকে তাহলে ক্ষতি কী? ও বেঁচে গেল, আমিও বেঁচে গেলাম।

আরও পড়ুন

থানার জব্দ করা গাঁজা খাচ্ছে ‘মাদকাসক্ত’ ইঁদুর!

তিনি আরও বলেন, আমি বছরখানেক আগে আমার দোকানের সামনে ইঁদুরের ক্ষুধার যন্ত্রণা দেখতে পাই। ইঁদুরগুলো ক্ষুধার চোটে পাগলের মতো ছোটাছুটি করছিল। এটা দেখে আমি আর ঠিক থাকতে পারিনি। এরপর থেকেই ইঁদুরের প্রতি আমার বন্ধুত্ব তৈরি হয়। প্রতিদিনই নিজে যা খাই, তা ওদেরও খাওয়াই।

কামাল হোসেন আরও বলেন, আমার উপার্জন খুব বেশি না। বেশি হলে শহরের পশু-পাখি ও ইঁদুরের জন্য হয়ত কিছু করতাম। তবে সামর্থ্য যতটুকু আছে, তা দিয়েই চেষ্টা করি। পশু-পাখিসহ ইঁদুরের সঙ্গেও আমার সখ্য গড়ে উঠেছে।

Kamal2

কামাল হোসেনকে তার দোকানের সামনেই ড্রেনের স্লিপারের ফাঁক দিয়ে ইঁদুরকে খাবার দিতে দেখা যায়। 'আঁয় আঁয়' করে ডাকে ঠিকই গর্ত থেকে সাড়া দিচ্ছে ইঁদুর। খাবার খেয়ে আবারও চলে যাচ্ছে।

কামাল বলেন, এখানে ৫-৭ টা ইঁদুর আছে। প্রতিদিনই তাদের খাবার দিই। সকালে পরোটা দিই। এরপর চাল দিই। এ খাবার তাদের চাহিদার তুলনায় খুবই কম। ভবিষ্যতে উপার্জন বাড়লে তাদের জন্য আরও বেশি খাবার সরবরাহের পরিকল্পনার কথা জানান এই ইঁদুরপ্রেমী।

আরও পড়ুন

শরীয়তপুরে লাবনীর বিদেশি ইঁদুরের খামার, হতে চান সফল উদ্যোক্তা

তার ইঁদুরপ্রীতি দেখে মাঝেমধ্যেই অবাক হন পথচারীরা। ইমতিয়াজ হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ড্রেনের ইঁদুরগুলো আমাদের জন্য ক্ষতিকর না। বরং উপকারী। এরা এখানকার রিসাইকেলিং প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে কামাল চাচা যে কাজ করছেন, এটা আশ্চর্যজনকই।

রিকশাচালক সাবের আলী বলেন, এই কঠিন শহরে, মানুষ হয়ে মানুষের উপকার করতে চাই না। সেখানে ইঁদুরের পেটের ক্ষুধা মেটাতে খাবার। এটা তো অবাক করার মতোই।

এমআই/জেবি