বোরহান উদ্দিন
১৩ জুন ২০২২, ০৮:৩২ পিএম
প্রতি বছরের মতো এবারও রাষ্ট্রীয় খরচে হজ পালনের সুযোগ পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ইমাম, মুয়াজ্জিন ও সাধারণ মানুষ। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, এবার ২৫৪ জন রাষ্ট্রীয় খরচে হজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। তালিকায় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও আছেন। তাদের হজ করানোর পেছনে সরকারের খরচ হবে প্রায় নয় কোটি টাকা।
সরকারি খরচে যাদের হজে নেওয়া হয় তাদের নিয়ে প্রায় প্রতি বছরই নানা ধরনের অভিযোগ ওঠে। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। এবার যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে সেটা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের নিজ জেলা জামালপুরেরই ৩৩ জন সেখানে জায়গা পেয়েছেন। এটা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
যদিও এটাতে দোষের কিছু দেখছে না মন্ত্রণালয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন ঢাকা মেইলকে জানান, দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন দফতর ও জনপ্রতিনিধিরা আগে নাম প্রস্তাব করেন। ধর্ম মন্ত্রণালয় পরে নাম চূড়ান্ত করা হয়।
এ বছর যারা রাষ্ট্রীয় খরচে হজ করবেন তাদের বিমান ভাড়া বাবদ এক লাখ ৪০ হাজার টাকা দিতে হবে। এর বাইরে বাকি খরচ বহন করবে সরকার। তারা সবাই সরকারি প্যাকেজের-২ এর আওতায় হজ করবেন বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
রোববার (১২ জুন) মন্ত্রণালয়ের আবুল কাশেম মোহাম্মদ শাহীন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এবার রাষ্ট্রীয় খরচে হজ করতে যাবেন ২৫৪ জন। রাষ্ট্রীয়ভাবে হজ পালনের জন্য নির্বাচিতদের এবার উড়োজাহাজ ভাড়া হিসেবে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা পে-অর্ডার করে জমা দিতে হবে। পে-অর্ডার জমা না দিলে তার ভিসা প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে।
হজে যাওয়ার জন্য নির্বাচিতদের সম্ভাব্য ফ্লাইট ৭ জুলাইয়ের পর থেকে পরিচালিত হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
এছাড়াও বলা হয়েছে, তালিকায় থাকা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা রয়েছেন, তারা সৌদি আরবে অবস্থানের সময়ে নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে বাংলাদেশের স্থানীয় মুদ্রায় যথারীতি বেতন ও ভাতা পাবেন।
অন্যদিকে হজে যাওয়ার সময় আশকোনার হজ ক্যাম্প থেকে সৌদিতে থাকার সময় খাবার খরচ বাবদ ৩২ হাজার টাকা করে প্রত্যেককে দেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
তথ্যমতে, সরকারিভাবে হজে যেতে এবার প্যাকেজ-১ এ ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ এবং প্যাকেজ-২ এ ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৫০ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে একটি প্যাকেজে খরচ ধরা হয়েছে চার লাখ ৫৬ হাজার ৬৩০ টাকা।
সে হিসেবে বিমান ভাড়ার টাকা হজ পালনকারী দিলেও প্রত্যেকের জন্য সরকারের খরচ হবে তিন লাখ ২২ হাজার ১৫০ টাকা। অন্যদিকে প্রত্যেককে খাবারের জন্য নগদ দেওয়া হবে ৩২ হাজার টাকা। প্রত্যেকের জন্য তিন লাখ ৫৪ হাজার ১৫০ টাকা খরচ হবে। আর ২৫৪ জনের জন্য সরকারের খরচ হবে আট কোটি ৯৯ লাখ ৫৪হাজার ১০০ টাকা।
এদিকে তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নির্বাচিতদের মধ্যে বঙ্গভবনের স্টাফ আছেন দশজন। গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আছেন ৩৩ জন। ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর জেলারও ৩৩ জন। গোপালগঞ্জের বিভিন্ন মাদরাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমামসহ ১০ জন। মুন্সীগঞ্জের পাঁচজন।
এছাড়াও সংসদ সচিবালয়, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা, কুমিল্লা, শরীয়তপুর, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, যশোরসহ আরও বেশ কয়েকটি জেলা থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন নির্বাচিত হয়েছেন।
সরকারি দলের বাইরে জাতীয় পার্টির লোকজনও এই তালিকায় আছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে তালিকার বিষয় নিয়ে মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন কথা বলতে রাজি হননি। সোমবার (১৩ জুন) সন্ধ্যায় ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে জনসংযোগ বিভাগে কথা বলুন। সেখান থেকে ভালো বলতে পারবে।’
জামালপুর জেলার এত মানুষ হজে যাওয়ার সুযোগ পাওয়ার বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী স্যার নিজে কারো নাম দেন না। তার এলাকার দলের লোকজন, আশপাশের আসনের সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে বেশি নাম এসেছে। এজন্যই তালিকায় বেশি নাম দেখা যাচ্ছে।’
বিইউ/জেবি