মো. আব্দুস সবুর (লোটাস)
০১ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২২ পিএম
ঈদসহ যেকোনো উৎসব বা ছুটিতে পরিবার নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে পছন্দ করেন সবাই। সামর্থ্য ও পছন্দ অনুযায়ী কেউ সমুদ্রে, কেউ পাহাড়ে আর কেউ যান শহরের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। এক্ষেত্রে পরিবার ও বাচ্চাদের নিয়ে যারা পশু-পাখি দেখতে পছন্দ করেন তাদের গন্তব্য রাজধানীর জাতীয় চিড়িয়াখানা। এখানে একসঙ্গে ৩ হাজারের বেশি পশু-পাখি দেখার সুযোগ মেলে। তবে টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা হওয়ায় এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে অনেকে।
মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) সরেজমিনে মিরপুর চিড়িয়াখানা পরিদর্শনে দেখা যায়, পুরো চিরিয়াখানা জনসমুদ্র পরিণত হয়েছে। প্রতিটি খাঁচার বাইরে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে। শহরের যান্ত্রিকতা পাশে রেখে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতেই চিড়িয়াখানায় এসেছেন সবাই। চিড়িয়াখানার সামনে টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়েছে অসংখ্য মানুষ। এছাড়া প্রবেশ পথে গাড়ির যানজট তীব্র লক্ষ্য করা গেছে।
দর্শনার্থী ও অভিভাবকরা জানান, ঈদের ছুটিতে প্রতি বছর চিড়িয়াখানায় অসংখ্য লোকজন আসে কিন্তু সে অনুসারে ভালো ব্যবস্থাপনা রাখা হয় না। অনিয়ন্ত্রিত ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিংয়ের ফলে যানজট হচ্ছে। এছাড়া ভিতরে বসার পর্যাপ্ত কোনো ব্যবস্থা নেই। টিকিটের মূল্য আরেকটু কম হলে ভালো হয় বলেও জানান তারা।
চিড়িয়াখানায় এবারের প্রধান আকর্ষণ বাঘের নতুন দুটি শাবক, যাদের নাম ‘শাপলা’ ও ‘পদ্ম’। এছাড়া নতুন তিনটি জেব্রা শাবকও রয়েছে। নতুন বাঘ শাবক ও পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু প্রাণির শাবক দেখার সুযোগ পাবেন দর্শনার্থীরা।
দর্শনার্থীদের ভিড় বাঘ, সিংহ ও হরিণের খাঁচায়
চিড়িয়াখানায় প্রতিটি খাঁচার বাইরে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেলেও বাঘ, সিংহ ও হরিণের খাঁচায় সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে এবার দর্শনার্থীদের জন্য বাঘের নতুন দুটি শাবক খাঁচায় নেওয়া হয়েছে। মূলত তাদের দেখতে খাঁচার আশেপাশে ভিড় জমিয়েছে অসংখ্য মানুষ।
পরিবার নিয়ে এসেছেন তসলিম উদ্দিন। তিনি বলেন, আমার ছোট ছেলে তাসরিফ আহমেদকে বাঘ দেখানোর জন্য চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসছি। তবে খাঁচায় যে ভিড়, ছোট বাচ্চাকে দেখানোই কষ্টকর হয়ে গেছে। তাকে কাঁধে উঠিয়ে বাঘ দেখালাম। ভিড়ের মধ্যেও ছেলে বাঘ দেখে বেশ খুশি হয়েছে।
এদিকে, জীবনে প্রথম সরাসরি বাঘ দেখল ছোট্ট আয়ান। সেই অনুভূতি প্রকাশ করে সে বলে, টিভিতে বাঘ দেখার চেয়ে এখানে বেশি ভালো লাগছে। ভয়ও লাগছে, যদি খাঁচার বাইরে চলে আসে। তবে বাবা থাকায় আর ভয় পাচ্ছি না।
চিড়িয়াখানার সামনের সড়কে তীব্র যানজট
ঈদের ছুটিতে রাজধানীবাসীর বড় একটা অংশ ঘুরতে চিড়িয়াখানাকেই বেছে নিয়েছেন। ফলে চিড়িয়াখানার প্রবেশপথে সামনের সড়কে দীর্ঘ এক কিলোমিটারজুড়ে যানজট দেখা গেছে। এছাড়া চিড়িয়াখানার প্রবেশমুখে জনসমুদ্র দেখা যায়। দীর্ঘ যানজট ও টিকিট কাটার ভোগান্তিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
রাব্বী হোসেন নামের এক তরুণ বলেন, ঈদের সময় চিড়িয়াখানার রাস্তা ও প্রবেশপথে বিশেষ ব্যবস্থা থাকা উচিত। প্রতি বছর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কথা বললেও সেভাবে কিছু দেখা যায় না।
পরিবার নিয়ে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছেন মানিক মিয়া। তিনি বলেন, আমার পরিবারের ৪ জন নিয়ে চিড়িয়াখানায় আসছি। আমি এবং আমার স্ত্রী গার্মেন্টসে চাকরি করি। বর্তমান সময় অনুযায়ী টিকিটের মূল্য চড়া মনে হচ্ছে। দেশের মানুষের জন্য এসব জায়গায় প্রবেশ ফি আরও কমানে উচিত। কারণ, আমাদের মতো নিম্নবিত্তের জন্য এই মূল্য অনেক বেশি।
সার্বিক বিষয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ঈদের ছুটিতে প্রচুর জনসমাগম হয়। আমরা অল্প জনবল নিয়ে যতটা পারি দর্শনার্থীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতার চেষ্টা করছি। এছাড়া এ সময়ের জন্য টিকিট কাউন্টার বৃদ্ধি ও যানজট এড়াতে বেশ কিছু জনবল নিয়োগ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এএসএল/এমএইচটি