নিজস্ব প্রতিবেদক
২৯ মার্চ ২০২৫, ১২:১৮ পিএম
সন্ধ্যা হলে লাইট অফ, ওয়াশ রুম খুলে দেওয়া হয় না, পানিসহ কোনো প্রকার খাবার ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। আমরা মহিলারা যারা পেটের দায়ে এখানে বসেছি, তারা কি মানুষ না। এটা নাকি শ্রমিকদের জন্য ভবন। কিন্তু এখানে আমাদের মতো শ্রমিকদের কোনো সুযোগ-সুবিধা নাই। এটা শ্রমিকদের নির্যাতনের ভবন। আমরা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে এখানে বসে আছি, যেন দেখার কেউ নেই। আর্তনাদের সুরে এসব কথা বলছিলেন বিউটি বেগম নামের একজন গার্মেন্টস শ্রমিক।
শুধু তিনি একা নন, তার মতো কয়েকশ’ শ্রমিক বকেয়া বেতন ভাতার দাবিতে বিজয়নগরের শ্রম ভবনের সামনে রোজার মধ্যেও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
বিউটি বেগম বলেন, আমাদের টাকা-পয়সা নাই, শ্রমিক তাই দেখারও কেউ নাই। গত তিন মাস ধরে বেতন বন্ধ। টাকা না পেলে বাড়ি যামু কীভাবে, এখানেই ঈদ করুম।
তিনি আরও বলেন, আমরা কি ছিনতাইকারী যে আমাদের পুলিশ মারধর করবে। আমরা বেতন না পেয়ে গতকাল সচিবালয়ের দিকে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের মারধর করা হলো। এমনি টাকা নাই তার মধ্যে পুলিশ যেভাবে পিটিয়েছে কীভাবে এখন চিকিৎসা নেব? এখানে তিন দিন বসে থেকেও কেউ আমাদের কথা শুনছে না তাই বাধ্য হয়ে ওদিক গিয়েছিলাম। মার খেয়ে আবার এখানে বসলাম। আর কতবার দেশ স্বাধীন হলে আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার ও বেতন ঠিকমতো পাব।
টিএনজেড গার্মেন্ট শ্রমিক শাহীন আলম বলেন, ঈদের আগের শিফমেন্টের কাজ শেষ হয় গত ১৯ মার্চ। পরের দিন আমাদের বেতন দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু আমরা অফিসে গিয়ে কোনো বেতন পাইনি। তারপরও দু’দিন গার্মেন্টেসের অফিসে ঘুরেছি কিন্তু কেউ বেতনের খবর দেয় না। বাধ্য হয়ে আমরা শ্রম ভবনে আসছি। এখানে এসেও কেউ আমাদের কথা শুনছে না।
তিনি আরও বলেন, তিনদিন অবস্থান করার পর যখন সচিবালয়ের দিকে যেতে লাগলাম তখন আমাদের মারধর করা হলো। আসলে আমাদের অপরাধ কোথায়? বেতন না পেলে আমাদের সন্তানরা খাবে কি? তাদের নতুন জামাকাপড় দূরের কথা, সেমাই খাওয়ানোর টাকা এখন হাতে নাই।
এদিকে টিএনজেড গ্রুপের অ্যাপারেলস ইকো লিমিটেডের গাড়ি বিক্রি করে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে শ্রম উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন শ্রমিকরা।
গতকাল শুক্রবার শ্রম ভবনের সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীবৃন্দের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিকনেতারা এ মন্তব্য করেন। শ্রমিকেরা বলেন, উপদেষ্টার এই বক্তব্য মিথ্যা তথ্যে ভরপুর। সামান্য টাকা পরিশোধ করে শ্রমিকদের মধ্যে বিভেদ তৈরির চক্রান্ত করা হয়েছে।
আরেকজন আন্দোলন করা কর্মী মোসলেমা পারভিন। অভাবের দায়ে গত বছরের শুরুর দিকে ঢাকায় আসেন। স্বামী ও স্ত্রী দু’জনেই গার্মেন্টসের চাকরি শুরু করেন। তবে দু’জনের বেতন গত তিন মাস বন্ধ থাকায় ঈদে বাড়ি যাওয়া অনিশ্চিত বলে জানান মোসলেমা।
তিনি বলেন, বাড়িতে বাবা-মা আছে। তাদের জন্য অন্তত কিছু নিয়ে যেতে না পারলে ঈদ কীভাবে হয়। এখনও দু’জনের কেউ বেতন পাইনি। হাতে বাড়ি যাবার ভাড়াও নেই। তাই আন্দোলন করছি। যদি বকেয়া বেতন পাই তাহলে বাড়ি যাওয়া হবে। তাছাড়া ঈদ এখানেই করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ মার্চ থেকে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। গতকাল সচিবালয় অভিমুখে যেতে চাইলে পুলিশের মারধরে প্রায় ৫০ জন শ্রমিক আহত হয়। আন্দোলনে টিএনজেড অ্যাপারেলস, অ্যাপারেল প্লাস ইকো লিমিটেড, রোর ফ্যাশন, স্টাইল ক্রাফট গার্মেন্টস ও ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেডের শ্রমিক ও কর্মচারীরা আছেন।
এএসএল/এফএ