সাখাওয়াত হোসাইন
২৯ মার্চ ২০২৫, ১১:৩৪ এএম
পবিত্র ঈদ উল ফিতরকে কেন্দ্র করে গ্রামমুখী হচ্ছেন নগরবাসী। ফাঁকা হচ্ছে ঢাকা। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীর নিউমার্কেটসহ আশেপাশের দোকানগুলোতে। প্রতি বছরের মতো এ বছর ঈদ ঘনিয়ে আসায় রাজধানীর নিউমার্কেটে কমেছে কেনাকাটা, নেই ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। তবুও এখানকার ব্যবসায়ীরা আনন্দ প্রকাশ করেছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর রমজানের ঈদে কেনাকাটা ভালো হয়েছে। প্রথম থেকেই ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর বিক্রি হয়েছে দ্বিগুণ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিক্রি দাঁড়িয়েছে তিন-চারগুণে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শুক্রবার (২৮ মার্চ) সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দোকানগুলোতে ক্রেতা সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। বিকেল থেকে বাড়তে থাকে ক্রেতাদের উপস্থিতি, তবে এ সংখ্যা রমজানের অন্যান্য দিনের তুলনায় খুবই কম। রাতের শেষ অবধি এমন পরিস্থিতি ছিল মার্কেটের ভিতরের দোকান, বিপণিবিতান ও ফুটপাতগুলোতে। এখন কিছুটা কমেছে কেনাকাটা। আবার ফুটপাতের কোনো কোনো দোকান খোলা হয়নি এবং শুধু রমজান উপলক্ষে ফুটপাতে সাজ-পোশাকের যেসব দোকান বসানো হয়েছিল, সেগুলোও অনেকটা কমে গেছে। তবে মার্কেটের ভিতরে নারীদের প্রসাধনীর দোকানে ভিড় ছিল সকাল থেকে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৮ মার্চ সরকারি ছুটি শুরু হওয়ায় প্রভাব পড়েছে দোকানগুলোতে। ছুটি পেয়ে ২৭ তারিখেই বেশিরভাগ ছেড়েছেন রাজধানী। আবার কারও কারও পরিবারের সদস্যরা ঢাকা ছেড়েছেন ২৫ কিংবা ২৬ মার্চ।
পোশাকের দোকানে বিক্রি কম
ছেলে-মেয়ে উভয়ের পোশাকের ক্রেতাদের উপস্থিতি রমজানের অন্যান্য দিনের তুলনায় কম। সময় যত যাচ্ছে, ততই কমছে ক্রেতার সংখ্যা। আবার কোনো কোনো ব্যবসায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছেন গ্রামের বাড়ি ঈদ করতে যাওয়ার। আবার কেউ কেউ অলস সময় পার করছেন। তবে তাতেও খুশি রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, রমজানের শুরু থেকে ২৫ রমজান পর্যন্ত বিক্রি ছিল জমজমাট। ছুটি এবং লোকজন গ্রামের দিকে যাওয়ায় বিক্রি তেমন হচ্ছে না। তবে এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় কেনাকাটা ভালো হয়েছে। আর লাভও হবে বেশি।
নিউমার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, চন্দ্রিমা মার্কেট, নুরজাহান মার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট, গ্লোব মার্কেট, গাউসুল আযম মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি মার্কেটে ক্রেতা সংখ্যা রয়েছে হাতে গোনা। অন্য সময়ের চেয়ে ক্রেতার সংখ্যা কম।
জানতে চাইলে নুরজাহান মার্কেটের পোশাক ব্যবসায়ী তানভীর হাসান ঢাকা মেইলকে বলেন, ঈদ ঘনিয়ে আসায় মানুষ বাড়িতে যাচ্ছেন। কেনাকাটায় প্রভাব পড়েছে। আগের তুলনায় বিক্রি কম হচ্ছে। তবুও আমরা খুশি। কেননা, এ বছর রমজানে শুরু থেকে বিক্রি ভালো হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর লাভ বেশি হবে।
চন্দ্রিমা মার্কেটের ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার দোকানে ছেলে-মেয়ে উভয়ের পোশাক রয়েছে। ক্রেতারা দর-দাম করে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী কেনাকাটা করেছেন। এখন কেনাকাটা কম হচ্ছে। কেননা, প্রতি বছরই রমজানের ঈদের এক বা দুই দিন আগে কেনাকাটা কমে যায়। সবমিলিয়ে এ বছর বিগত কয়েক বছরের তুলনায় ব্যবসা ভালো হয়েছে।

ফুটপাতেও বিক্রির প্রভাব
পোশাকের ক্রেতা কমে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে নিউমার্কেট ও আশেপাশের এলাকার ফুটপাতগুলোতে। কমে গেছে ফুটপাতের দোকান সংখ্যা। আবার ফুটপাতের কোনো কোনো দোকানি চিন্তা করছেন গ্রামে যাওয়ার। জানতে চাইলে নুর জাহান মার্কেটের ফুটপাতের দোকানি শহিদুল আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, বিক্রি কমে গেছে। ক্রেতারা অনেকে রাজধানী ছেড়েছেন। আমরাও গ্রামে গিয়ে ঈদ করবো। শেষ সময়ে বিক্রি কমে যাওয়ায় ফুটপাতের অনেক দোকানি বাড়িতে চলে গেছেন।
ভিন্ন চিত্র প্রসাধনীর দোকানে
নিউমার্কেটে নারীদের প্রসাধনী কেনাকাটার জন্য প্রসিদ্ধ মার্কেট ইস্টার্ন মল্লিকা। এই মার্কেটে দুপুর থেকে বাড়তে থাকে ক্রেতাদের উপস্থিতি। নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী মেহেদী, লিপিস্টিক, নেলপালিশসহ নানা ধরনের পণ্য ক্রয় করছেন নারীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ উপলক্ষে অনেক মানুষ রাজধানী ছাড়লেও এখনও লিপস্টিক, কাজল, ফাউন্ডেশন, আয়লাইনার, মাস্কারা, স্যাম্পু, বডি লোসন, ফেসওয়াস, কনটোর, আইস্যাডো, কনসিলার, ফেস পাউডার, টোনার ইত্যাদি প্রসাধনীর বিক্রি জমজমাট চলছে। অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজানের শেষের দিকে প্রসাধনী ভালো বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে প্রসাধনীর দোকানে পর্যাপ্ত ভিড় থাকবে বলে আশা ব্যবসায়ীদের।
ইস্টার্ন মল্লিকা মার্কেটের ব্যবসায়ী নাহিদুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ক্রেতাদের সাড়া ভালো পাওয়া যাচ্ছে। সামনের কয়েকদিনে আরও বিক্রি হবে। যতটুকু সম্ভব ক্রেতাদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে। আর সব পণ্যই ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। কোনো ক্রেতা যেন ঠকে না যান সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।
আরেক ব্যবসায়ী জসিম হাওলাদার বলেন, ক্রেতাদের ভালো প্রসাধনী দেওয়ার চেষ্টা করছি, যাতে টাকা দিয়ে কিনে পণ্য নষ্ট করতে না হয়। এখানে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ প্রসাধনী ক্রয় করতে আসেন। ঈদ ঘনিয়ে আসলে ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়ে। দোকানে প্রায় সব ধরনের প্রসাধনী রয়েছে। ক্রেতারা পছন্দ অনুযায়ী ক্রয় করতে পারবেন।
ধানমন্ডি থেকে ইষ্টার্ন মল্লিকায় প্রসাধনী কিনতে আসা ক্রেতা ফাহিমা রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, কয়েক বছর ধরে ঈদের প্রসাধনী এই মার্কেট থেকে ক্রয় করছি। দর-দাম করে কেনাকাটা করা যায়, ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে। দুই মেয়ে এবং নিজের জন্য প্রসাধনী ক্রয় করবো।
আজিমপুর থেকে আসা আরেক ক্রেতা সালমা আক্তার বলেন, অন্যান্য পোশাক রমজানের মাঝামাঝি সময়ে ক্রয় করেছি। প্রসাধনী সামগ্রী কেনা হয়নি। ইতোমধ্যে এখন কয়েকটি প্রসাধনী কিনেছি, সাধ্য অনুযায়ী বাকিগুলোও কিনে বাসায় যাব।

নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত পুলিশ
নিউমার্কেট এলাকায় নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সড়কে সক্রিয় রয়েছেন ট্রাফিক এবং পুলিশের অন্যান্য বিভাগ। জানতে চাইলে নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার তারেক লতিফ ঢাকা মেইলকে বলেন, নিউমার্কেট এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ। বর্তমানে নিউমার্কেটে পুলিশের আটটি ফুটপ্যাড টুল কাজ করছে। এছাড়া মোবাইল টিম এবং বিশেষ অভিযান টিম চলমান রয়েছে। প্রতি মুহূর্তে পুলিশ খোঁজ-খবর রাখছে। কেউ সহযোগিতা চাইলে আমরা তাকে সহযোগিতা করবো।
তিনি আরও বলেন, ঈদে নিউমার্কেট এলাকা নিরাপদ রাখতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। পুলিশ এবং মার্কেটের নিরাপত্তা কর্মীসহ অন্যান্যদের সমন্বয়ে আমরা কাজ করবো। কেউ কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করলে সাথে সাথে তাকে ধরার জন্য জোর চেষ্টা চালানো হবে।
এসএইচ/এফএ