নিজস্ব প্রতিবেদক
১১ জুন ২০২২, ০১:১৭ পিএম
রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী শতকরা ৯৮ শতাংশ নারী কমন ও উন্মুক্ত গোসলখানা ব্যবহার করেন। তাদের মধ্যে ৭২ শতাংশ নারী গোসলখানার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
শনিবার (১১ জুন) রাজধানীর পুরানা পল্টন পুষ্পাদাম রেস্টুরেন্টে ও কনভেনশন সেন্টারে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
আলোচকরা বলেন, ঢাকায় বর্তমানে ৫ হাজারেরও বেশি নিম্ন-আয়ের কলোনি রয়েছে। যেখানে প্রায় ৪ মিলিয়ন মানুষ বসবাস করেন। নিম্ন আয়ের এসব এলাকায় অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা এখনও অপ্রতুল। এসব অঞ্চলে মেয়েদের জন্য আলাদা কোনো গোসলের স্থান নেই। সেসব এলাকায় বসবাসরত কিশোরী ও যুব নারীদের জন্য এটি একটি কঠিন বাস্তবতা। মাসিকের সময় যা আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। পৃথক গোসলখানা না থাকায় উন্মুক্ত স্থানে গোসল করতে গিয়ে নানা রকম সহিংসতার, হয়রানির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
‘এই অবস্থায় প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং পপুলেশন সার্ভিসেস এন্ড ট্রেইনিং সেন্টার (পিএসটিসি) ৪টি এলাকায় তাদের ই-গ্লাস প্রকল্পের আওতায় কিশোরী ও নারীদের জন্য ১৫টি নিরাপদ গোসলখানা স্থাপন করেছে। নিরাপদ গোসলখানা নিশ্চিতে প্রচারণা চালিয়ে যাবার লক্ষ্যে যুব উন্নয়ন সংস্থা বিওয়াইএস এর সহায়তায় কমিউনিটি পর্যায়ে একটি জরিপ পরিচালিত হয়েছে। এর লক্ষ্য ছিলো, কমিউনিটিতে গোসলখানার বিদ্যমান অবস্থা ও তার প্রেক্ষিতে সহিংসতার বিষয়টি সম্পর্কে তথ্য তুলে আনা।’
সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ঢাকার ধলপুর, মালেক মেম্বার বস্তি, আইজি গেট বস্তি এবং ম্যাচ কলোনিতে ৪১৭ জন কিশোরী এবং যুব নারীদের (১৫-২৪ বছর বয়সী) উপর এই জরিপ পরিচালিত হয়। এই জরিপের মধ্য দিয়ে আমরা দেখতে চেয়েছি আমাদের শহরের নিম্ন আয়ের কলোনিগুলোতে কিশোরী ও যুব নারীদের জন্য নিরাপদ গোসলখানা রয়েছে কি না। এই প্রশ্নের উত্তরে ৯৮ শতাংশই বলছে, তারা কমন এবং উন্মুক্ত গোসলখানায় গোসলের মত নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ সারতে হয়। ৭২ শতাংশ জানান, তারা তাদের গোসলখানার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শঙ্কা হলো, গোসলের সময় গোপনে ছবি ধারণ, মৌখিক হয়রানি, পুরুষদের তাকিয়ে থাকা, অস্বস্তি বোধ করা ইত্যাদি। এছাড়া লম্বা লাইনে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা, মেনস্ট্রুয়েশনের সময় হাইজিন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে না পারা, বৃষ্টি ও বন্যায় পানি উঠে যাওয়ার মতো সমস্যা রয়েছে।
এ বিষয়ে পিএসটিসির প্রজেক্ট ম্যানেজার শিরোপা কুলসুম, বস্তি এলাকাগুলোর ৩০ থেকে ৪০টি পরিবারের জন্য একটিমাত্র গোসলখানা রয়েছে। ফলে তাদের সব সময়ই এসব স্থানে বস্তিবাসীর উপস্থিতি দেখা যায়। যখন যে সুযোগ পাচ্ছে তখন গোসল করছে। সকলের জন্যই এটি কষ্টদায়ক। তবে নারীদের জন্য তা অনেক বেশি ভয়াবহ। নারীর নিজের গোসল ছাড়াও পরিবারের কাজ করতে হয়। বিশেষত পিরিয়ডকালীন সময়ে নারীরা ভোগান্তির স্বীকার হন। তাদের অনেকেই প্যাডের পরিবর্তে কাপড় ব্যবহার করেন। তারা সঠিক সময়ে তাও পরিবর্তন করতে পারে না। কেননা সে যেই পরিবেশে থাকেন সেখানে সেই সুযোগ নেই। এছাড়াও তারা মৌখিকসহ নানা নিপীড়নের স্বীকার হন।
বিওয়াইএস প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম ফাইয়াজ বলেন, আমরা অনেকগুলো বিষয় নিয়ে কাজ করছি। এরমধ্যে লিঙ্গ সমতা একটি। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা নিরাপদ গোসলখানা নিয়ে কাজ করেছি। এতে আমরা দেখতে পেয়েছি বস্তি এলাকার নারীরা নানা ধরণে ভোগান্তির সম্মুখীন হয়ে থাকেন। যৌন নিপিড়ীন থেকে মৌখিক নিপীড়নের স্বীকার হচ্ছেন। আটজন সরাসরি জানিয়েছেন তারা ব্ল্যাক মেইলের স্বীকার হয়েছেন।
মাসিক চলাকালীন ভোগান্তির তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, মাসিক সময়ে তারা অধিক ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয়। কমন গোসলখানা ব্যবহার করায় তারা রাত্রিকালীন সময় ছাড়া প্যাড বা কাপড় পরিবর্তন করতে পারে না। রাতে ওই টয়লেট বা গোসলখানাগুলো নিরাপদ না, তাই সে একা একা সেখানেও যেতে পারে না। এতে নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের আশিক বিল্লাহ বলেন, ঢাকাতে আমরা ৩ হাজার ১৩৫টি স্পনসরশিপে কাজ করেছি। আমাদের সকল কাজ আমরা স্পন্সরশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে করে থাকি। ১৫টি গোসলখানাতেও আমরা স্পনসরশিপ পরিবারদের সংযুক্ত রেখে কাজ করেছি। আমরা চাই এ ধরনের প্রোগ্রামে অন্যান্য সংগঠনগুলো এগিয়ে আসুক।
এ সময় বস্তিবাসীদের নারীদের পক্ষে নিশাত বলেন, খোলা গোসলখানাগুলোতে আমরা অস্বস্তি অনুভব করতাম। নির্দিষ্ট সময়ে গোসল করা আমাদের জন্য সম্ভব হতো না। বিশেষ করে মাসিককালীন সময়ে নানা সমস্যায় পড়তে হতো। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১৫টি গোসলখানা হওয়ায় আমরা এখন অনেকটা নিরাপদ অনুভব করছি।
এমএইচ/এএস