নিজস্ব প্রতিবেদক
১৭ মার্চ ২০২৫, ০৪:৩৫ পিএম
সকাল ৮টা, মিরপুর ১২ স্টেশনের সব কিছু ফাঁকা, আনসার নেই, টিকিট বিক্রির কর্মীরা আছে কিন্তু তারা বিক্রি করছেন না। পুরো চিত্র দেখে তাড়াহুড়ো করে স্টেশন থেকে বের হয়ে আসলাম। এরপর বাসে করে সচিবালয়ে এসেছি- কথাগুলো বলছিলেন ফারুক হোসেন নামের এক সরকারি কর্মকর্তা। নিয়মিত মেট্রোরেলে চলাচল করা শুধু ফারুক নয়, এমন ভোগান্তি মাথায় নিয়ে সোমবার সকালে গন্তব্যে যেতে হয়েছে কয়েক হাজার যাত্রীর। অনেকে আবার অন্যদিনের মতো টিকিট কাটার দরকার নেই দেখে সরাসরি প্লাটফর্মে উঠে বিনা ভাড়ায় গন্তব্যে পৌঁছেছেন।
সোমবার (১৭ মার্চ) এমআরটি পুলিশ সদস্যদের মারধরের প্রতিবাদে সকাল ৭টা থেকে প্রায় সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মীরা। যে কারণে অফিসগামী বিপুল সংখ্যক যাত্রীকে এমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
রাজধানীতে চলাচলে স্বস্তি এনে দেওয়া বাহন মেট্রোরেলের যাত্রীরা এমন কর্মসূচির প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সবার আগে যাত্রীদের স্বার্থ দেখতে হবে। প্রয়োজনে নির্দেশনা দিয়ে মেট্রোরেলকে কর্মবিরতির বাইরে রাখার দাবিও তুলছেন যাত্রীরা।
ফারুক হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তেমন ব্যবহার করি না তাই হয়তো এ বিষয়ে জানতে পারিনি। তবে আমার মতো অনেকেই মেট্রোতে করে অফিসে যাতায়াত করেন। তারাও এই দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। একটা বৃহৎ পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এভাবে হুট করে সেবা থেকে সরে আসলে সবার সমস্যা। তাদের একটা বিষয়ে সমস্যা হয়েছে সেটা নিয়ে জরুরি আলাপ করে সমাধানের পথ বের করা উচিত। কিন্তু সেটা না করে সাধারণ মানুষদের ভোগান্তিতে ফেলা হয়েছে।
মেট্রোরেল কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল রোববার সোয়া ৫টার দিকে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের চারজন কর্মীকে মৌখিক ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এমআরটি পুলিশ সদস্যরা। এর জের ধরে কর্মবিরতির ডাক দেন তারা। পরে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে আড়াই ঘণ্টা পর সবাই নিজ নিজ দায়িত্বে ফেরেন।
বিনা টিকিটে কারওয়ান বাজারে আসা একজন যাত্রী লুৎফর রহমান। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, আজ সকাল সাড়ে ৮টায় উত্তরা উত্তর স্টেশনে এসে দেখি সব কিছু এলোমেলো। আনসার নেই। টিকিট কাউন্টারে ১ জন বসে আসছেন কিন্তু টিকিট বিক্রির কার্যক্রম চলছে না। এদিক ট্রেনে উঠতে না পারলে অফিসের দেরি হবে। স্বয়ংক্রিয় গেটে কেউ না থাকায় সেটি ক্রস করে প্ল্যাটফর্মে উঠে পড়ি। পরে ট্রেনে চড়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে চলে আসি। তবে আমার মতো টিকিট ছাড়া গন্তব্যে আসা যাত্রীর সংখ্যা খুবই কম। বেশির ভাগ মানুষ ফিরে গেছেন।
সচিবালয়ে আসার ভোগান্তিতে পড়া আফসানা বেগম নামের এক যাত্রী ঢাকা মেইলকে বলেন, এমনিতে বহুদিন হলো মেট্রোর কোনো দীর্ঘমেয়াদী পাস বা টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। তাই একক যাত্রার টিকিটই কর্মক্ষেত্র যাওয়ার সবচেয়ে ভালো ভরসা ছিল। কিন্তু আজ কাজীপাড়া স্টেশনে এসে দেখি চিত্র উল্টো। কোনো কিছুর ঠিক নেই। পরে বাধ্য হয়ে বাসে উঠে অফিসে এসেছি। এমন ভোগান্তি রোজার মধ্যে একদম কাম্য নয়।
তিনি আরও বলেন, মেট্রোরেল বন্ধ রেখে, টিকিট ছাড়া যাত্রী পরিবহনের সুযোগ দেওয়ার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ফের যাতে এসব কেউ করতে না পারে সেই নির্দেশনাও দিতে হবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের এমডিসহ পরিচালনা পরিষদের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের একাধিক বার কল করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এএসএল/এফএ