ঢাকা মেইল ডেস্ক
০৪ মার্চ ২০২৫, ০৭:০৫ পিএম
একটু আগেই আসরের নামাজ শেষ হয়েছে। আবার একক ভাবে ও ছোট ছোট দলে মসজিদ আসতে শুরু করেছে মুসল্লিরা। সময় যত বাড়ছে মানুষের আসার সংখ্যা তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই মধ্যে ছোট গড়িতে বড় বড় ঝাঁকায় করে ইফতার সামগ্রীও আসা শুরু হয়েছে। ইফতারের আধঘণ্টা আগেই মসজিদ অভ্যন্তরীণ প্রাঙ্গণ ভরে উঠেছে রোজাদারদের আগমনে। এ যেন এক মুসল্লিদের মিলন মেলা। বলছিলাম বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইফতারের আগ মুহূর্তের চিত্র।
মসজিদের গেট থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ প্রাঙ্গণ পর্যন্ত একে অপরকে এক সঙ্গে ইফতার করার আহ্বান করছে। অপরিচিত লোকের সঙ্গে কথা না বলার শহরে সবার সবার প্রতি আহ্বান যেন মধুর সুর।
সরেজমিনে দেখা যায়, মসজিদের ভিতরে একদিকে সারিবদ্ধ ভাবে লোকজন বসছে আবার আরেকদিকে চার ও ছয়জনের ছোট ছোট দল করে বসছে রোজাদাররা। আর মসজিদের দুই পাশে বড় বড় থালায় মুড়ি, পিয়াজু, জিলাপি, খেজুর, কলা, পেঁপে, চপ ইত্যাদি দিয়ে ইফতার সাজানো হচ্ছে। কেউ গিয়ে আয়োজকদের থেকে বড় থালা নিয়ে আসছে। আবার আয়োজকদের পক্ষ থেকেও রোজাদারদের কাছে ইফতারের সব কিছু দেওয়া হচ্ছে।
ইফতার অল্প সময় বাঁকি থাকতে মসজিদের মেইন গেট থেকে কিছু লোকজন ইফতারের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। আবার যারা একা মসজিদের অভ্যন্তরীণ প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েছেন তাদের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে ডাকা হচ্ছে। সব মিলিয়ে একটা উৎসবমুখর মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে মসজিদ প্রাঙ্গণ। এছাড়া অনেকে ছোট ছোট পলিব্যাগে তরমুজ, পেয়ারাসহ বিভিন্ন ফলমূল নিয়ে এসেছেন তারাও পাশের লোকজনের সঙ্গে শেয়ার করছেন। ঝঞ্জাটপূর্ণ শহরে রমজান মাসে ভ্রাতৃত্বের আবহে পরিণত হয়েছে।
ইফতারের একটু আগে তাড়াহুড়ো করে এসেছেন স্থানীয় পল্টন মোড়ের দোকানি সাহাবুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই মসজিদে ইফতার করার একটা তৃপ্তি আছে। একসঙ্গে অনেক মানুষ একই খাবার খাচ্ছে, দেখতেই ভালো লাগে। শহরের ধনী-গরিবের আর কোনো পার্থক্য এখানে থাকে না। সবাই সমানভাবে ইফতার করে। মসজিদ আসলে সবাইকে ভাইয়ের মতো মনে হয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তামিম হোসেন। তিন বন্ধু মিলে মূলত অভিজ্ঞতার জন্য মসজিদে ইফতার করতে আসছেন। তারা জানান, আসলে কোনো দিনই এত মানুষকে একসঙ্গে ইফতার করতে দেখা হয়নি। মানুষ বেশি হলেও সবার কাছে ঠিকমতো খাবার চলে আসছে। অনেক বেশি মানুষের মধ্যেও আন্তরিকতা থাকলে যে সুন্দর আয়োজন সম্ভব, সেটা এখানে না আসলে তার জানতে পারত না বলে উল্লেখ করেন।
বায়েজিদ আলী নামের এক দোকানের কর্মচারী নিয়মিত ইফতার করেন বায়তুল মোকাররমে। তিনি বলেন, রোজা থেকে দোকানের সব কাজ কতে একটু কষ্ট হয়। কিন্তু সামনে ঈদ। পরিবারের কথা চিন্তা করেই প্রতিদিন পরিশ্রম করি। দোকানেও নিয়মিত ইফতার করানো হয়। কিন্তু এখানের ইফতারে একটা ভিন্ন রকমের আনন্দ আছে, সেটা অন্য কোথাও করলে পাওয়া যায় না।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির সভাপতি আবদুল গাফফার বলেন, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিদিন দুই হাজার মানুষের ইফতার করার ব্যবস্থা করা হয়।
মসজিদের মুয়াজ্জিন কারি মো. হাবিবুর রহমান জানান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আয়োজনে দৈনিক দুই হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন করা হয়। এছাড়া আরও একটি সংগঠন থেকে এক হাজার মানুষের ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ৫ হাজারের অধিক মানুষ এক সঙ্গে এই মসজিদ প্রাঙ্গণে ইফতার করেন।
এসএল/এমএইচটি