দেশে স্বামীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার ৭০ শতাংশ নারী

স্বামীর দ্বারা দেশের ৭০ শতাংশ নারী নির্যাতনের শিকার হন। এক্ষেত্রে নারী তাদের জীবদ্দশায় অন্তত একবার হলেও স্বামীর মাধ্যমে শারীরিক, যৌন, মানসিক এবং অর্থনৈতিক সহিংসতার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণেরও শিকার হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিবিএসের অডিটোরিয়ামে নারীদের ওপর সহিংসতা শীর্ষক জরিপ ২০২৪ এর প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। পরিসংখ্যানগুলি জাতিসংঘের মানসম্পন্ন পরিমাপের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

২০১১ এবং ২০১৫ সালের জরিপের পরে তৃতীয়বারের মতো ২০২৪ সালের নারীর প্রতি সহিংসতার এই জরিপটি বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার প্রকৃতি, মাত্রা এবং প্রভাব সম্পর্কে সবচেয়ে বিস্তৃত এবং সমসাময়িক প্রেক্ষাপটের প্রকৃত চিত্র উঠে এসেছে। জরিপের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সহিংসতার ঝুঁকির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য তারতম্য, যেমন- দুর্যোগপ্রবণ এলাকার নারীরা তাদের জীবদ্দশায় এবং বিগত ১২ মাসের মধ্যে, অ-দুর্যোগপ্রবণ এলাকার নারীদের তুলনায় জীবনসঙ্গী বা স্বামীর দ্বারা বেশি মাত্রায় সহিংসতার সম্মুখীন হন।

জীবনসঙ্গী বা স্বামী কর্তৃক সহিংসতার মাত্রা বেশি হলেও সহিংসতার শিকার নারীদের প্রায় ৬৪ শতাংশ তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সহিংসতার কথা কাউকে কখনো বলেননি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পরিবারের সুনাম রক্ষা করার আকাঙ্ক্ষা, সন্তানদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উদ্বেগ এবং এধরনের সহিংসতা স্বাভাবিক বলে মনে করার প্রবণতাসহ বিভিন্ন কারণ থেকে মূলত এই নীরবতা।

জরিপে উঠে এসেছে, যদিও জীবদ্দশায়  স্বামী বা জীবনসঙ্গী কর্তৃক সহিংসতার বিস্তৃতি এখনও ৭০ শতাংশে, অর্থাৎ উচ্চ মাত্রায় রয়েছে, বিগত ১২ মাসে এই হার ৪১ শাতাংশ। এই হার ২০১৫ সালে জীবদ্দশায় ছিল ৭৩ শতাংশ এবং ঐ সময় গত ১২ মাসে ছিল ৫৫ শতাংশ। এই  জরিপটি নন-পার্টনার সহিংসতার চেয়ে জীবনসঙ্গী বা স্বামী কর্তৃক সহিংসতা (আইপিভি) বিস্তারের মাত্রা অধিক হিসাবে উঠে এসেছে।

জরিপটিতে, 'জীবনসঙ্গী' বলতে বর্তমান বা প্রাক্তন স্বামী এবং 'নন-পার্টনার' বলতে বর্তমান বা প্রাক্তন স্বামী বোঝানো হয়েছে। উত্তরদাতা নারীদের অর্ধেকেরও বেশি (৫৪ শতাংশ) জীবদ্দশায় তাদের স্বামীর দ্বারা শারীরিক অথবা যৌন সহিংসতা বা উভয় সহিসতার সম্মুখীন হয়েছেন। ১৬ শতাংশ নারী গত ১২ মসে এই ধরনের সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছেন স্বামীর মাধ্যমে। এছাড়াও, নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ এবং মানসিক সহিংসতা সর্বাধিক সংঘটিত সহিংসতার ধরন হিসাবে পাওয়া গেছে, ফলে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয় বলে জরিপে বলা হয়েছে।

জরিপে দেখা যায় যে, নারীদের অন্য কারও তুলনায় তাদের স্বামীর কাছ থেকে শারীরিক সহিংসতার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা তিনগুণ বেশি এবং যৌন সহিংসতার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা ১৪ গুণ বেশি। বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, শারীরিক এবং যৌন সহিংসতার ঝুঁকি অত্যধিক বেশি। বলে জরিপে বলা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ, এনডিসি এবং পরিসংখ্যান ও তথ্যবিজ্ঞান বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার।

এছাড়াও সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) ভারপ্রাপ্ত প্রতিনিধি মাসাকি ওয়াতাবে এবং অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার ক্লিনটন পবকে।

অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। ২০২৪ সালের নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপের মূল ফলাফল উপস্থাপন করেন বিবিএস এর প্রকল্প পরিচালক  ইফতেখাইরুল করিম। দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে দেশের ২৭ হাজার ৪৭৬ জন নারীর সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে জরিপ তৈরি করতে। জরিপের সময়কাল ছিল ২১ দিন।

এমএইচ/ইএ