images

জাতীয়

কাফির বাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৪ এএম

আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর নুরুজ্জমান কাফির বাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত ৩টা ৫৫ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে এক স্ট্যাটাসে এ অভিযোগ করেন কাফি।

এ কনটেন্ট ক্রিয়েটর স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘মধ্যরাতে আমার বাড়ির ঘর, রান্না-ঘর সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দিয়েছে। কোন দেশের জন্য, কাদের জন্য কথা বলছিলাম? যুদ্ধ করেছিলাম এবং করছি। নিরাপত্তা পাইনি।’

এক পোস্টে কাফি আরও অভিযোগ করেন, দরজাগুলো বাহির থেকে লাগিয়ে দিয়েছিল যাতে কেউ বের হতে না পারে।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকাল পৌনে সাতটার দিকে আরেক স্টাটাসে সাংবাদিকদের আহ্বান করে লেখেন, ‘আজ সকাল ১১টায় আমার পোড়া বাড়িতে কলাপাড়া থানা, পটুয়াখালী জেলার সাংবাদিক ভাইদের থাকার আহ্বান করছি। আমি এই দায়িত্বহীন সরকারকে বিগ মেসেজ দেব। মেসেজ সম্পূর্ণভাবে মানবে নতুবা আমিই নিজেই বিকল্প হবো - আমিই বিপ্লবী সরকার হবো।’

এর আগে, ‘আমার বাড়ি- কিছুই আর রইলো না’ শিরোনামে একটা আগুনের ভিডিও শেয়ার করেন তার পেজে।

2

কাফির গ্রামের বাড়ি বরিশালের পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায়। ২০১৯ সাল থেকে ভিডিও কনটেন্ট তৈরি শুরু করেন তিনি। বরিশালের আঞ্চলিক ভাষাতেই ভিডিও তৈরি করেন। তার ভিডিওগুলোয় হাস্যরসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন সময়ের সংকটময় পরিস্থিতিসহ অসামঞ্জস্য, অসংগতি, দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রতিবাদ থাকে।

এর আগে বইও লিখেছেন তিনি। যা এবারের বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু মেলার শুরুর দিক থেকে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে জায়গা করে নেন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি এক ভিডিওতে এ নিয়ে দুঃখও প্রকাশ করেন তিনি।

কনটেন্ট ক্রিয়েটর কাফি বলেন, আমার সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে। যে যেখান থেকে যেভাবে পারছেন সমালোচনা করতেছেন। এই যে আলিঙ্গনের যে ছবিটা (অন্য একটা মোবাইল ফোনে একটি মেয়েকে আলিঙ্গনের ছবি দেখিয়ে) মানুষকে গিলাচ্ছেন। বলা হচ্ছে, জড়াজড়ি করছে কাফি। আরে ভাই, এটা ভ্যালেনটাইনস ডে উপলক্ষে একটি নাটকের ক্লিপ। সেখান থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে ভুল বুঝাচ্ছেন মানুষকে।

কাফি আরও বলেন, বইমেলায় এক বান্ধবীর হাত ধরেছি। সেটি নিয়ে এতদূর আসার কথা নয়। এরপরও আমি আমার জায়গা থেকে সরি বলেছি। আমি এখনো সরি বলছি। বইমেলার মতো এমন জায়গায় হাত ধরা ঠিক হয়নি।

এ নিয়ে বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক রিফাত রশীদ এক ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন- ‘কন্টেন্ট ক্রিয়েটর নুরুজ্জামান কাফির বাড়িতে মধ্যরাতে আগুন দেওয়া হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই কাফির কবিতার নিম্নমান এবং বইমেলার স্টলের কর্মকাণ্ড নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনার তোলপাড় ছিল। সেটার সূত্র ধরেই আগুন দেয়া হইসে বইলে ধারণা করি। আওয়ামী লীগ এই কাজ করে সমালোচনাকারীদের উপর দোষ চাপাইতে চাইবে। সেই প্রচেষ্টা ইতোমধ্যে শুরুও হয়েছে।

কাফির সাথে আমার পরিচয় বছরখানেকের হলেও আমাদের গোটা সার্কেলের সাথেই ও ২০১৮-১৯ এর দিক থেকেই কানেক্টেড। ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে ও আমাদের সমসাময়িক ছিলো।  ওর কবিতা, কন্টেন্ট নিয়ে আপনারা নানারকম প্রশ্ন করতেই পারেন। কোনো সমস্যা নাই। কাফি মেয়েদের সাথে কিভাবে মেলামেশা করবে, সেটাও ওর ব্যক্তিগত ব্যাপার। যতক্ষণ এটা অন্য কারো অধিকার ভায়োলেট না করে। কিন্তু, মানতে হবে কাফি গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধা। বরিশালে ও সামনের সারিতে আন্দোলন করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আগেও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ও ভোকাল ছিল, যখন বহু কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা আওয়ামী লীগের পা চেটেছে। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়েও ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিছিলে কাফির সাথে আমার দেখা হয়েছে।

1

যারা কাফির কবিতা এবং নারীকে ফুল প্রদানের সমালোচনা করেছিলেন, তারা কাফির ঘর-বাড়ি পোড়ানোর বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন কিনা? যদি না দাঁড়ান, তাহলে গণঅভ্যুত্থানকে বানচাল করার যে চক্রান্তে আমরা ঘোরপাক খাচ্ছি, আপনারা সেটারই অংশ হয়ে যাবেন। আপনারা সমালোচনা করেছেন, সেটাকে পুঁজি করে অন্যদের ফায়দা লুটতে দেবেন না, অনুগ্রহ করে। সমালোচনা করেও কাফির পাশে থাকতে হবে আমাদের। আঞ্চলিক আধিপত্যবাদ আমাদের উপর এখন নানা সুরতে সওয়ার হয়ে অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করে দিতে চাইবে।  কখনো বইমেলায় স্টল কাহিনি হিসেবে, কখনো কাফির ঘরবাড়ি পোড়ানো হিসেবে। তারা প্রমাণ করতে চায় - অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ ভালো নেই। লোকেরা অভ্যুত্থান করে ঠকেছে। কাফির ধারণা, এটা স্থানীয় আওয়ামী লীগ করেছে। যারাই এহেন কাজ করেছে, তাদের সবার বিচারের জন্য আমি লড়বো। আপনাদেরও লড়তে হবে।

একজন মানুষের কবিতা উচ্চমার্গীয় না হলে, তিনি পুরাপুরি দ্বীনদার মুসলিম না হলে তার ঘরবাড়ি পোড়ানো যাবে না, পোড়ানো যায় না। এই কথা স্পষ্টভাবে বলতে হবে, লিখতে হবে। না পারলে হিপোক্রেসি হবে। সকল রকম মানুষের সম্মিলনে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল। গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনদের পাশে থাকতে হবে। অভ্যুত্থানের প্রতি কেউ যাতে ফ্রাস্টেটেড না হয়ে পড়ে, সেটা রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

কাফি! আমরা তোমার পাশে আছি। তুমি শুধু লড়াই জারি রাখো। তোমার পুড়ে যাওয়া বাড়ির স্ফুলিঙ্গই গণঅভ্যুত্থানের আগুন হিসেবে আধিপত্যবাদের মুখে ছাই হবে৷ আমি তোমারে কথা দিচ্ছি, চান্দা তুলে আমরা তোমার বাড়ি বানায়ে দেব। শুধু লড়াই জারি রাখো, বন্ধু।’

/এএস